আবদুল ওদুদ: পুজোর ঘন্টা বেজে গেছে। আর কয়েকদিন পরেই বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপুজো। ইতিমধ্যেই পুরোদমে তার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। দুর্গাপুজোকে স্বীকৃতি দিয়ে ইউনেস্কো। অবশ্যই রাজ্যের পক্ষে এটি একটি বাড়তি পাওয়া। পুজো মানেই মনে হয় কোথাও দুদিনের জন্য বেরিয়ে আসি।
করোনা আবহ কাটিয়ে পরিস্থিতি এখন অনেকটাই স্থিতিশীল। তাই ঘরে থাকতে আর কার ভালো লাগবে। গুটি গুটি পায়ে বেরিয়ে যাওয়া অপেক্ষা। তবে পুজো মানেই কেনাকাটা, আত্মীয় পরিজন নিয়ে বাজেটে ঘাটতি পড়তে পারে। তাই কম খরচে আপনিও দুদিনের জন্য ঘুরে আসুন মুর্শিদাবাদের খান্দুয়া থেকে। যার সৌন্দর্য্য এক কথায় অসাধারণ।
মুর্শিদাবাদ জেলায় পর্যটন শিল্পে ক্রমশ জায়গা করে নিচ্ছে খান্দুয়ার পদ্মা নদীর তীর। লালগোলা স্টেশন থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই খান্দুয়া। একটা সময় চাষযোগ্য জমি এবং গ্রাম, স্কুল সবকিছুই পদ্মা নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছে। মূল যে জায়গায় বিএসএফের ক্যাম্প ছিল সেটিও আজ সরে এসেছে। যদিও বর্তমানে বিএসএফ ক্যাম্পটি পদ্মা নদীর তীরবর্তী এলাকায় রয়েছে। নদী ভাঙনে সমস্ত শেষ হয়ে গেলেও খান্দুয়ার পরিবেশ অনেকটাই আকৃষ্ট করছে জেলার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষদের।
পুজো, ঈদ, ১৫ আগস্ট কিংবা ২৬ জানুয়ারি এই সমস্ত দিনগুলিতে ব্যাপক ভিড় জমাচ্ছেন জেলার মানুষরা। এমনকী দেখা যাচ্ছে বহরমপুর, লালবাগ, জিয়াগঞ্জ, জঙ্গীপুর থেকেও বহু মানুষ আসছেন এই খান্দুয়ার পদ্মারতীরে। খান্দুয়ায় তেমন কিছু না থাকলেও স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতি এবং গ্রামপঞ্চায়েতের উদ্যোগে গড়ে উঠেছে একটি সুন্দর পার্ক। যেখানে বাচ্চারা খেলাধুলো করতে পারে। পদ্মা নদীর বিশাল চওড়া হওয়ায় সেখান থেকে সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য সাধারণ মানুষ উপভোগ করতে পারে। নিরিবিলি এবং সবুজে ঘেরা পরিবেষ হওয়ায় সাধারণ মানুষের আকর্ষণ এই খান্দুয়া।
স্থানীয়দের দাবি প্রশাসন যদি আরেকটু নজর দেয় তাহলে অবসর সময় কাটানোর এক সুন্দর পর্যটন কেন্দ্র হতে পারে এই খান্দুয়া এলাকা।
লালগোলা-জঙ্গিপুর রাজ্য সড়কে নাটাতলা এবং পন্ডিতপুর মোড় থেকে টোটো কিংবা বাইকে সরাসরি যাওয়া যায় এই খান্দুয়া। যদিও রাস্তাটি বিএসএফের অধীনে তবে সমস্যা কিছু নেই সকলের অবাধ বিচরণ এই এলাকায়। পদ্মার উপারে রয়েছে বিরাট চর, তার পরই একদম কাঁটা তারের বেড়া। পাশেই বাংলাদেশ। নদীর পাড়েই রয়েছে সারি সারি নৌকা। ইচ্ছে করলে ভাড়া নিয়ে পদ্মা পার হয়ে চর থেকেও ঘুরে আসতে পারেন। তবে বিএসএফের অনুমতি নিতে হয়। যেহেতু সেখান থেকে বাংলাদেশের দূরত্ব বেশ কিছুটা দূরে। তাই নৌকাতে ঘোরার অনুমতি ইচ্ছা করলে মেলে বিএসএফ-এর কাছ থেকে।
নাটাতলা মোড় থেকে খান্দুয়া যাওয়ার রাস্তাটির মান খারাপ। স্থানীয় দাবি করছেন, রাস্তাটি সংস্কার করলে আরও মানুষের সমাগম হবে। খান্দুয়ার মনোরম পরিবেশের জন্য প্রতিদিনই বিকেলে ভিড় জমায় প্রচুর মানুষ। লালগোলা বাজার থেকে শুরু করে জঙ্গিপুর-সাইদাপুর, কাঁটাখালি, পন্ডিতপুর প্রচুর মানুষ ভীড় করছেন খান্দুয়ার পদ্মার পারে। তবে খান্দুয়াতে এখনও এখনও থাকার জায়গা গড়ে ওঠেনি। তাই আপনি অনায়াসেই লালগোলাতে আপনার মনের মতো থাকার হোটেল পেয়ে যাবেন।
খান্দুয়ার এই পর্যটন সম্ভবনা প্রবল এলাকা প্রসঙ্গে বিশিষ্ট সমাজসেবী সাইফুদ্দিন বিশ্বাস বলেন, খুব ভালো পরিবেশ। তবে সমস্যা একটাই পদ্মার পাড় যদি ফের ভাঙতে শুরু করে তাহলে তলিয়ে যাবে পুর এলাকা। প্রশাসনের উচিত এই এলাকাটিতে আরও ভালো করে বাঁধানো। এলাকায় কর্মসংস্থানের লক্ষে যদি পর্যটকদের জন্য আরও আকর্ষনীয় করা হয় তাহলে এলাকার বেশ উন্নয়ন হবে। বিশিষ্ট চিকিৎসক আনারুল হক বলেন, আমাদের উচিত এই এলাকাটিকে আরও দর্শনীয় করা। মুর্শিদাবাদের বহু ঐতিহাসিক স্থান রয়েছে তার সঙ্গে নতুনভাবে যুক্ত হবে এই খান্দুয়া পর্যটন এলাকায়।
শিক্ষক আবদুল ময়ীদ বলেন, বিলবোরাকোপড়া গ্রামপঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতির যৌথ উদ্যোগে খান্দুয়ার ওই এলাকাকে পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। জেলা প্রশাসন যদি আরও উদ্যোগী হয় তাহলে এক সুন্দর পরিবেশ গড়ে উঠবে। যাঁরা মুর্শিদাবাদ ভ্রমণে আসবেন কিছুক্ষণের জন্য খান্দুয়ার এই পদ্মারপাড়ের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন।