রুবাইয়া জুঁই– শিলিগুড়ি
উত্তরবঙ্গের কথা এলে অনেক কিছুর সঙ্গে উঠে আসে উত্তরের পর্যটনশিল্পের প্রসঙ্গ। উত্তরবঙ্গে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও একটা বড় ভূমিকা আছে পর্যটন শিল্পের। তবে এই করোনা মহামারীর দৌরত্ম্যে ভাটা পড়েছিল পর্যটনে। আর সেই ক্ষতি ঠিক কতদিনে সামলে ওঠা যাবে– তা নিয়ে সন্দিহান ছিল সকলেই। অবশ্য পর্যটন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষজনের কাছে এই মহামারির চূড়ান্ত সময়গুলোতে ভাইরাসের চেয়ে বেশি আতঙ্ক ছিল অর্থাভাব নিয়ে। এখন অবশ্য অনেক পর্যটকই আসছেন উত্তরের মোহময়ী প্রকৃতির রুপ-রস-গন্ধ উপলব্ধি করতে।
করোনার প্রথম ঢেউয়ের পর আবার দ্বিতীয় ঢেউ। একটু মাথা তুলে দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই আবারও মুখ থুবড়ে পড়েছিল উত্তরবঙ্গের অর্থনীতির অন্যতম মানদণ্ড এই পর্যটন শিল্প। তবে ধীরে ধীরে অতিমারীর আতঙ্ক কাটিয়ে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে ডুয়ার্স সহ গোটা উত্তরবঙ্গের পর্যটন শিল্প। কয়েক মাসের একঘেয়েমি কাটিয়ে আবার পর্যটকরা পাড়ি দিচ্ছেন ডুয়ার্সের মনোরোম পাহাড়– নদী ও জঙ্গলে। গরুমারা অভয়ারণ্যে এদিন দেখা যায় পর্যটকদের ভিড়। লাটাগুড়ির রিসোর্টগুলোতেও আসতে শুরু করেছে পর্যটকদের দল।
তিস্তা থেকে শুরু করে সংকোশ পর্যন্ত ডুয়ার্স এলাকায় ২০০ টিরও বেশি ছোটবড় রিসর্ট রয়েছে। এছাড়াও আছে ১০০ -র বেশি হোম স্টে। প্রচুর মানুষ শীতের প্রাক্কালেই ডুয়ার্সমুখী হন প্রকৃতির নৈস্বর্গিক শোভা উপভোগ করতে। আর শুধু ডুয়ার্স নয় দার্জিলিং– কালিম্পং– লাভা– মাদারিহাট– ভূটান গেটে শীতের পরিযায়ী পাখিদের মতো পর্যটকের আনাগোনা শুরু হয়েছে। এখানকার আকাশ বাতাস ফের ভরে উঠছে তাদের কোলাহলে।
গত বছরও আচমকাই মহামারীর কারণে অধিকাংশ বুকিং বাতিল হয়। আবার করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসার সঙ্গে সঙ্গে বাতিল হয়ে যায় প্রায় ৯০ শতাংশ বুকিং। সেই ধাক্কা কাটিয়ে পর্যটনশিল্পের সঙ্গে জড়িত মানুষজন খানিকটা স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার চেষ্টা করছেন। এখনও অবস্থা পুরোপুরি স্বাভাবিক নয়। তবে পর্যটকদের আনাগোনা শুরু হওয়াতে কিছুটা আশার আলো দেখছেন পর্যটন ব্যবসার সাথে জড়িত উত্তরের প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ।
উত্তরবঙ্গে প্রায় ১২ হাজার হোম স্টে রয়েছে। এই হোমস্টের মালিকদের মধ্যে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশই বিভিন্ন ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে তাদের হোমস্টে গুলিকে মেরামত করে একটু ভালো করার চেষ্টা করেছিলেন। মাঝের দুবছর কীভাবে তারা ব্যাংকের লোন পরিশোধ করবেন তা নিয়ে যথেষ্ট চিন্তায় ছিলেন। এইরকমই এক হোম স্টের মালিক রাজেশ বর্মনের কথায়– আমাদের এমন একটা অবস্থার মধ্যে দিয়ে এই দেড়-দু’বছর কাটাতে হয়েছে– তা কাউকে বলে বোঝানোর মতো নয়। বউ-বাচ্চা নিয়ে কীভাবে যে বেঁচে আছি সে শুধু আমিই জানি। তবে এখন কিছু পর্যটক আসছেন। দেখা যাক কবে অবস্থা পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়!