লখনউ, ৫ ডিসেম্বর: মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিল উত্তরপ্রদেশের যোগী সরকার। সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়ে তাদের সেই ষড়যন্ত্র ভেস্তে গিয়েছে। আর এবার যোগী সরকার রাজ্যের মাদ্রাসা মাদ্রাসা আইনকে সংশোধন করতে চলেছে।
রাজ্য সরকার সূত্রে খবর, এই সংশোধিত রাজ্য মাoাসা আইনে মাoাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে শুধুমাত্র দ্বাদশ শ্রেণির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হবে। উচ্চতর শিক্ষার ক্ষেত্রকে এই আইনের বাইরে রাখা হবে। অর্থাৎ, কামিল ও ফাজিল ডিগ্রির স্বীকৃতি বাতিল করা হচ্ছে।
সে ক্ষেত্রে বলা যায়—কামিল ও ফাজিল ডিগ্রির আর কোনও গুরুত্বই থাকছে না। ইতিমধ্যেই ইউপি মাদ্রাসা মাদ্রাসা আইনের এই সংশোধনের খসড়া প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই তা অনুমোদনের জন্য পেশ করা হবে। আর এই নয়া মাদ্রাসা আইনের আওতায় স্বীকৃতি দেওয়া হবে না কামিল, ফাজিল ডিগ্রিকে।
উল্লেখ্য, যোগী সরকার আগেই জানিয়েছিল, কামিল ও ফাজিল ডিগ্রি ইউজিসি (বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন) আইনের সঙ্গে সাংঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তাই এই দুই ডিগ্রি অবৈধ। আর এবার মাদ্রাসা আইন-২০০৪ সংশোধন করে এই দুই ডিগ্রির স্বীকৃতি কেড়ে নিতে চাইছে তারা।
মাদ্রাসা শিক্ষাকে সম্পূর্ণ তুলে দিতে মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে ছিল উত্তরপ্রদেশের যোগী সরকার। সমস্ত মাদ্রাসা বন্ধ করে দিতে চেয়েছিল। ৭০০ বছরের ঐতিহ্যকে খতম করে দিতে চেয়েছিল। মাদ্রাসার পড়ুয়াদের সরকারি স্কুলে ভর্তির নিদান দেওয়া হয়েছিল। যোগী সরকারের সেই পদক্ষেপকে এক বাক্যে বৈধতা দিয়েছিল ইলাহাবাদ হাইকোর্টও। কিন্তু, যোগী সরকারের সেই চক্রান্তকে ব্যর্থ করে দিয়েছিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত। হাইকোর্টের বক্তব্য ছিল, মাদ্রাসা শিক্ষা আইন ধর্মনিরপেক্ষতার মূল নীতিকে লঙ্ঘন করেছে। সেই রায় খারিজ করে দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট তার রায়ে সাফ জানিয়ে দেয়, মাদ্রাসা শিক্ষা সম্পূর্ণভাবে বৈধ এবং সাংবিধানিক।
মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার কোমর ভেঙে দিতে চেয়েছিল এনসিপিসিআর-ও। সরকারি মাদ্রাসাগুলিকে আর্থিক সাহায্য সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়ার সুপারিশ করেছিল জাতীয় শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশন’ (এনসিপিসিআর)। পাশাপাশি, মুসলিম শিশুদেরও মাদ্রাসায় ভর্তি না করিয়ে সরকারি স্কুলে ভর্তি করানো উচিত বলে সুপারিশ করেছিল তারা। তাদের সেই সুপারিশের পরই বিজেপিশাসিত দুই রাজ্য উত্তরপ্রদেশ ও ত্রিপুরা তড়িঘড়ি অনুমোদনহীন এবং সরকার অনুমোদিত মাদ্রাসাগুলি থেকে পড়ুয়াদের সরকারি স্কুলে ভর্তি করার নির্দেশ দিয়েছিল। সেই মামলাতেও ঐতিহাসিক রায় দিয়েছিল শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্ট সাফ জানিয়ে দেয়, এনসিপিসিআরের সুপারিশের ভিত্তিতে ভিত্তিতে কেন্দ্র বা রাজ্য কোনও সরকারই মাদ্রাসার বিরুদ্ধে কোনও ধরনের পদক্ষেপ করতে পারবে না।.
প্রসঙ্গত, এপিজে আবদুল কালাম, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, মুন্সি প্রেমচাঁদের মতো গুণিরা মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেই উঠে এসেছিলেন। ভারতের সংবিধান সংখ্যালঘুদের নিজস্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালানোর অধিকার দিয়েছে। সংবিধানের ৩০ নম্বর ধারায় স্পষ্ট বলা রয়েছে, সংখ্যালঘুদের তাদের পছন্দের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে। আর রাষ্ট্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সাহায্য প্রদানের ক্ষেত্রে কোনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতি বৈষম্য করবে না, এমনকী তা কোনও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ব্যবস্থাপনার অধীনে থাকলেও নয়।