বিপাশা চক্রবর্তী, কলকাতাঃ কলকাতার সঙ্গে ঘুড়ির যোগ নিবিড়। শহরের আকাশে ব্যাপক হারে ঘুড়ি ওড়ানোর চল শুরু হয় নবাব ওয়াজেদ আলির হাত ধরেই। নবাবী আমলে বিভিন্ন রকমের ঘুড়ি দেখা গেছে। ওয়াজেদ আলি শাহের আমল ছিল পেশাদার ঘুড়ি উড়িয়েদের সুবর্ণ যুগ। তবে বর্তমানে ঘুড়ি ওড়ানো অনেকটাই বিনোদনের সঙ্গে পরিচিত। কলকাতার আকাশ জুড়ে এখন ঘুড়ির মেলা দেখা যায় স্বাধীনতা দিবস ও বিশ্বকর্মা পুজোয়। সেই সময় আকাশে রং-বেরংয়ের ঘুড়ি ওড়ে। তবে কলকাতায় এই প্রথম রাতের আকাশে উড়ল এলইডি লাগানো, আলোকিত ঘুড়ি। যা দেখে তাজ্জব বনে গেছে মানুষ।
আর এই ভিন্নধর্মী আইডিয়ার নেপথ্যে রয়েছেন কালীঘাটের বাসিন্দা সৌমিক সরকার। সৌমিকবাবু জানান, ঘুড়ি ওড়ানোটা প্রথমত আমাদের পারিবারিক নেশা। এটা প্রায় বংশ পরম্পরা ধরে চলে আসছে। আমরা প্রধানত সকালের আকাশেই ঘুড়ি উড়তেই দেখেছি। তবে রাতের আকাশেও যে ঘুড়ি ওড়ানো যায়, সেটা আমরাও জানতাম না। গত কয়েক বছর আগে ইউ টিউবে সিঙ্গাপুর, চিন, জাপানের বিভিন্ন কাইট ফেস্টিভ্যালের ভিডিও দেখি হয়। সেখানেই এই আলোকিত ঘুড়ির সম্পর্কে প্রথম জানি। এরপর এলইডি লাইট লাগানো ঘুড়ি তৈরির চিন্তা ভাবনা মাথায় আসে।
সৌমিকবাবু আরও জানান, ভারতের মধ্যে একমাত্র আহমেদাবাদ ও দিল্লিতে রাতের আকাশে ঘুড়ি ওড়ানো হয়। আহমেদাবাদে মকর সংক্রান্তিতে ঘুড়ি ওড়ানোর রীতির প্রচলন আছে। গত কয়েক বছর ধরে এই এলইডি লাগানো ঘুড়ি তৈরির চেষ্টা জারি ছিল। ছোট-বড় মাপের বিভিন্ন সাইজের ঘুড়িতে এলইডি লাইট লাগিয়ে আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে গেছি।
চলছে প্রস্তুতি…।
সোমবার, ১৬ আগস্ট আমাদের সেই প্রচেষ্টা সফল হয়েছে। রাতের আকাশে আমরা ওড়াতে পেরেছি এলইডি লাইট লাগানো আলোকিত ঘুড়ি। ঘুড়িটির মাপ ছিল আড়াইফুট বাই তিনফুট। কলকাতায় চট করে এত বড় সাইজের ঘুড়ি কেউ ওড়ায় না। আমরা স্পেশাল অর্ডার দিয়ে ‘সঞ্জু কাইটস’ থেকে এই ঘুড়িটি তৈরি করি। তারপর তাতে এলইডি স্ট্রিপ লাগিয়ে কলকাতার রাতের আকাশে প্রায় ১০ থেকে ১৫ মিনিট উড়িয়েছি। তবে আকাশে ওড়ার পর চারদিকে বেশ শোরগোল শুরু হয়। রাতের আকাশে কী উড়ছে মানুষ প্রথমে বুঝতে পারে না।
আমি কাইটস অ্যাসোসিয়েশন-গ্রুপের সদস্য। এই গ্রুপে এই এলইডি লাইট লাগানো ঘুড়ি সম্পর্কে পোস্ট করি। তার পর মূলত সেখান থেকে ও গুগল-এ সার্চ করে জানতে পারি, এই আলোকিত ঘুড়ি কলকাতার আকাশে আমরাই প্রথম ওড়ালাম।
আমাদের চেষ্টা সফল হওয়ার কারণে স্বভাবতই আমরা খুব খুশি। প্রচুর মানুষের কাছ থেকে শুভেচ্ছাবার্তা পেয়েছি। ভালো লাগছে।
সৌমিকবাবু জানান, তবে এই কাজে পরিবারের অন্যতম দুই খুদে সদস্য আমার সঙ্গে হাতে হাত লাগিয়ে কাজ করেছে। এর মধ্যে একজন সোহন সরকার আর অপর জন শৌর্য সরকার। দুজনের উৎসাহই ছিল সবচেয়ে বেশি।