প্রয়াগরাজ, ২ ফেব্রুয়ারিঃ কথায় বলে, ‘মরেও শান্তি নেই’। মহাকুম্ভ মেলায় পদপিষ্ট হয়ে মৃতদের অবস্থা যেন তেমনইি মৃতদের পরিজনদের দুঃসহ অভিজ্ঞতা চোখের পাতা ভিজিয়ে দেওয়ার মতোই বেদনাদায়ক। ইতিমধ্যে মহাকুম্ভে পদপিষ্ট হয়ে ৩০জনের মৃত্যু সংবাদ সরকারিভাবে জানা গিয়েছে। ভিনরাজ্য থেকে মহাকুম্ভে এসে পদপিষ্ট হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন উমেশ সারাথে নামে এক তরুণ।
মৃতের দাদা অনিল সারাথের অভিযোগ, ‘ভাইয়ের মৃতদেহ হাতে পেতে উত্তরপ্রদেশ এবং মধ্যপ্রদেশ সরকার কোনও সহযোগিতা করেনি। যদিও সব ধরনের সহযোগিতা করার সরকারি প্রতিশ্রুতি ছিল। তা বাস্তবায়িত না হওয়ায় ৪০ হাজার টাকা গাঁটের কড়ি খসিয়ে ভাইয়ের মৃতদেহ বাড়িতে ফেরাই’। প্রসঙ্গত, ১৪৪ বছর পরে আয়োজিত ২০২৫ সালের মহাকুম্ভে পদপিষ্ট হয়ে ঠিক কতজনের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, এনিয়েও চলেছে বিতর্ক।
একই অভিজ্ঞতা মহাকুম্ভে এসে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় প্রিয়জন হারানো অন্যান্যদেরও। বিহার থেকে মহাকুম্ভে এসে পদপিষ্ট হয়ে স্বামীর মৃত্যুর পাশাপাশি সঙ্গে থাকা সর্বস্ব হারিয়েছেন গায়ত্রীদেবী। এরপর তাঁকে অসম সংগ্রাম চালাতে হয়েছে সরকারি কোনও সহায়তা না মেলায়।
গায়ত্রীদেবীর শোচনীয় অবস্থার কথা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিয়োতে ভাইরাল হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, অসহায় গায়ত্রীদেবী একটানা কাঁদছেন আর বলছেন, ‘আমার স্বামী পদপিষ্ট হয়ে মারা গেলেও মেলা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনও সহযোগিতা মেলেনি। উল্টে সব হারানোর পরও সহায়তাবাবদ আমার কাছ থেকে মোটা টাকা দাবি করা হয়েছে। স্বামীর মৃতদেহ বাড়িতে ফেরানোর অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থাও নিজেদের করতে হয়েছে’।
মহাকুম্ভে দুঃসহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে উত্তরপ্রদেশের আজমগড়ের বাসিন্দা মহেন্দ্র মিশ্র বলেছেন, পদপিষ্ট হয়ে আমার স্ত্রী রবিকলার মৃত্যুর পরও সরকার কিংবা মেলা কর্তৃপক্ষ কোনও দায় নেয়নি। শুধুমাত্র রবিকলার মৃত্যু সংবাদ একটা কাগজে হাতে লিখে দিয়ে মৃতদেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। একইরকম করুণ অভিজ্ঞতা পদপিষ্ট হয়ে মৃত কলকাতার বাসিন্দা বাসন্তী পোদ্দার এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের বাসিন্দা উর্মিলাফ পরিবারেব সদস্যদের।
এদিকে পদপিষ্ট হওয়ার মর্মান্তিক ঘটনার পর কয়েকদিন পেরিয়েও সূত্রের খবর, এখনও অনেকেই নিখোঁজ। পরিবারের অসহায় সদস্যরা ওঁদের হদিশ পেতে উদভ্রান্তের মতো এখানে-ওখানে ঘুরছেন। ওঁরা জানিয়েছেন, স্থানীয় থানার সঙ্গে যোগাযোগ করলে পুলিশকর্মীরা বলছেন, হাসপাতালে গিয়ে খোঁজ নিতে। হাসপাতালে যাওয়ার রাস্তায় অটো, বাইক কিছুই চলছে না। ফলে প্রিয়জনের সন্ধান পেতে অন্তত ১০ কিলোমিটার হাঁটতে হচ্ছে। পদপিষ্ট হওয়ার মর্মান্তিক ঘটনার পরে অনেকে এখনও সহায়সম্বলহীন বলে জানা গিয়েছে।