কলকাতায় ট্রাম রক্ষায় বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়ার নির্দেশ হাইকোর্টের

- আপডেট : ২২ জুন ২০২৩, বৃহস্পতিবার
- / 11
পারিজাত মোল্লা: মহানগর কলকাতার চিরন্তন ঐতিহ্যশালী পরিকাঠামোর গুলির মধ্যে অন্যতম ট্রাম।বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ কলকাতার ট্রাম বাঁচাতে মামলাকারীর পক্ষেই নির্দেশ দিল । প্রথমত, ট্রামকে কীভাবে পুনরুজ্জীবিত করা যায়? তার জন্য কমিটি গঠন করতে হবে রাজ্য সরকারকে। দ্বিতীয়, আদালতের অনুমতি ছাড়া আপাতত ট্রামের কোনও সম্পত্তি বিক্রি করা যাবে না বলে আদেশনামায় উল্লেখ করা হয়েছে ।
এদিন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম নির্দেশ দেন, কলকাতার ঐতিহ্য ট্রাম বাঁচাতে একটি বিশেষ কমিটি তৈরি হবে । তাতে রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্য, হেরিটেজ সংরক্ষণ কমিটির সদস্যরাও থাকবেন’ ।
প্রসঙ্গত, কলকাতার ট্রাম সংরক্ষণের দাবিতে এক আইনজীবী কলকাতা হাইোকর্টে মামলা করেছেন । সেই মামলার শুনানিতে এদিন এই নির্দেশ দেয় প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ ।
বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জানান – “রাজ্য সরকারের হেরিটেজ সংরক্ষণ করা উচিত ।” প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশে জানায়, -‘ আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে রাজ্যকে কমিটি গঠন করে সদস্যদের নাম আদালতকে জানাতে হবে । শুধু তাই নয়, পরবর্তী নির্দেশ না-দেওয়া পর্যন্ত ট্রামের কোনও সম্পত্তি বিক্রি করা যাবে না ‘। প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম এদিনকার শুনানি পর্বে জানান “দুর্গাপুজোকে যে ভাবে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরে সম্মান লাভ করছে রাজ্য, ট্রাম বাঁচাতেও সরকারের একইভাবে এগিয়ে আসা উচিত ।”মামলাকারী জানিয়ে , -‘ গত ১৮৭৩ সালে প্রথম ট্রাম চালু হয় কলকাতায় । ক্যালকাটা ট্রামওয়েজ কলকাতার একটা অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ছিল । ট্রাম দূষণমুক্ত পরিবেশবান্ধব যান । বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ পরিবহণ নিগম ট্রাম না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে’ । তাই ট্রামকে হেরিটেজ হিসাবে সংরক্ষণ করা উচিত বলে দাবি জানান মামলাকারী ।রাজ্য সরকারের পক্ষে অ্যাডভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রনাথ নাথ মুখোপাধ্যায় এজলাসে বলেন , -‘ রাজ্য ট্রাম সংরক্ষণ করতে চায় ।
কীভাবে তা করা যায়, সেটা খতিয়ে দেখা দরকার’ । তিনি ব্যক্তিগতমত হিসেবে এজলাসে জানান, -‘ট্রামগুলি আয়রন ও স্টিল দিয়ে তৈরি করা গেলে ভালো হয়’ ।এদিন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, -‘ কলকাতার বাসিন্দাদের ট্রাম নিয়ে উত্সাহ আছে । তবে ট্রাম বাঁচাতে নতুন প্রযুক্তি আনা দরকার । ট্রাম পরিবহণ ব্যবস্থা নষ্ট করে ফেলাটা কাজের কথা নয় । ট্রাম সংরক্ষণ ও তাকে নতুন করে ব্যবহারের বিষয়ে ভাবা উচিত’ । মামলাকারী আরটিআই করলে রাজ্য একটি রিপোর্ট দিয়েছে । তাতে জানানো হয়েছে, কলকাতায় ১১৬ কিলোমিটারের বেশি ট্রাম লাইন রয়েছে । এর মধ্যে ৩৩ কিলোমিটার লাইনে ট্রাম চলে । এখন মাত্র তিনটি রুটে ট্রাম চলাচল করছে । ৬টি ট্রাম ডিপো আছে । সবগুলি শহরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ।এই ট্রামডিপোগুলির মধ্যে এখন মাত্র দু’টি ডিপো কার্যকর রয়েছে ।
বেলগাছিয়া আর টালিগঞ্জ ডিপোর জায়গা বেসরকারি সংস্থাকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে । সেই জায়গাগুলিতে এখন প্রোমোটিং হচ্ছে । আর এই বিক্রির কারণ হিসাবে দেখানো হয়েছে, ভিআরএস নেওয়া কর্মচারীদের বকেয়া মেটানোর টাকা জোগাড়, ঋণের টাকা শোধ করা, ইলেকট্রিক বাস কেনা । মামলাকারী হাইকোর্টে দাবি করে জানিয়েছেন , -‘ ট্রামের জায়গাগুলি নিয়ে গুরুত্ব দিয়ে ভাবা উচিত । সরকারি জায়গা সরকারি কোনও অফিসেরই কাজে লাগানো উচিত’।