নয়াদিল্লি: সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে বিনা নোটিশে বুলডোজার চালানো যাবে না। বুলডোজার চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া অফিসারদের ব্যক্তিগত ভাবে দায়ী হতে হবে। কিন্তু মহারাষ্ট্রের নভি মুম্বইয়ে ঐতিহাসিক ফুলশাহ বাবার দরগাহ রাতারাতি ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হল। এমনকি বিধ্বস্ত হওয়া ইট, পাথরের টুকরো সমতে সব কিছু রাতারাতি গায়েব করে দেওয়া হল। এই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ট্রাস্টিরা এবং স্থানীয় মানুষদের আটকে রেখে দিল বিশাল পুলিশবাহিনী। তাদের চোখের সামনে দিয়েই বুলডোজার চলল নয়না ভিরাম ছোট পাহাড়ের উপর অবস্থিত ঐতিহাসিক এই দরগাহটিতে। ওয়াকফ ট্রাইবুনাল, ওয়াকফ বোর্ড কাউকেই কিছুই জানানো হল না কেন ভেঙে দেওয়া হল দরগাহ কাজী পরিবারের পক্ষ থেকে ১৮৮৫ সালে দান করা জমির উপর তৈরি হয় এই প্রসিদ্ধ ধর্মীয় স্থানটি।
এই দরগাহ পরিচালনা হচ্ছিল একটি ট্রাস্টের অধীনে। ট্রাস্টের চেয়ারম্যান কাজী পরিবারের সদস্য আবদুল গফুর কাজী জানালেন, এই ঘটনা শুধু কোর্টের আদেশ লঙ্ঘন নয় বরং ট্রাস্টের অধিকার, মুসলিমদের ইবাদাতের অধিকার, ধর্ম পালনের অধিকার এবং দেশের গণতন্ত্র ও সংবিধানের উপর বড় আঘাত। আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনও সুযোগ দেওয়া হল না। বলা হয়েছে কোর্টের রায়ে বুলডোজার চলছে। এই সম্পত্তিটি ওয়াকফ বোর্ডের অধীনে রেজিস্টার্ড রয়েছে। আইন অনুযায়ী ওয়াকফ সম্পত্তি দখল নিতে হলে বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা জরুরি। ওয়াকফ ট্রাইবুনালের অনুমতি জরুরি। কিন্তু এখানে সেসব কিছু গ্রাহ্য করা হল না। একজন সুফি সাধক ও ধর্মীয় ব্যক্তিও আলেমের প্রতিও চরম অসম্মান জানানো হল। ফুলশাহ বাবার অগণিত শিষ্য ও ভক্তদের ধর্মীয় অনুভূতিতে বড় ধরনের আঘাত দেওয়া হল। ১৯ শতাধীতে কাজী পরিবার এই জমি দান করেছে। তার সমস্ত সরকারি রেকর্ড এবং ট্রাস্টের দলীল সব কিছুই রয়েছে। সেসব খোঁজ নিয়ে দেখা হল না। ধর্মীয় সম্পত্তি হিসেবে সুরক্ষিত এই দরগাহর উপর বুলডোজার চালিয়ে দেওয়া হল।
কাজী আবদুল গফুরের চাঞ্চল্যকর বিবৃতি শোরগোল ফেলেছে মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে। তিনি জানিয়েছেন, বেশ কিছুকাল আগে এই স্থানে আদানিদের রিসর্ট তৈরি হবে বলে তাদের কাছে জমি চাওয়া হয়। দরগাহর অধীনে ৪ একর জমি রয়েছে। সেই জমির উপর নজর পড়েছে তাদের। কিন্তু ওয়াকফ সম্পত্তি এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি হস্তান্তর যোগ্য নয় বলে জানিয়ে দেওয়া হয়ে ছিল আদানিদের এজেন্টকে। তারাই জমির দখল নেওয়ার জন্য প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে এই দরগাহ ভাঙার পরিকল্পনা করেছে। বিশাল পুলিশ বাহিনী নামিয়ে তাদের এবং অগণিত শিষ্যদের মুখ খুলে প্রতিবাদ করার সুযোগ দেওয়া হয়নি। যুদ্ধক্ষেত্র বানিয়ে দেওয়া হয়েছিল সেদিন রাতে।
স্থানীয় প্রশাসন শুধু জানিয়েছে কোর্টের নির্দেশেই এই অভিযান। কাছে বিমান ব¨রের সুরক্ষার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই নির্মাণ বেআইনি। আইন মেনেই উচ্ছেদ করা হয়েছে। কাজী সাহেব জানান, স্থানীয় প্রশাসন সিডকো-তাদের কাছে আদানিদের রিসর্ট বানাতে জমি চেয়েছিল। আমি সেই আর্জি খারিজ করে দিয়েছিলাম। সম্ভবতn সেই আক্রোশেই দরগাহ ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হল বিমান ব¨রের নিরাপত্তার অজুহাতে।