মিরাট, ২২ ডিসেম্বরঃ উত্তরপ্রদেশের হাশিমপুরা গণহত্যা মামলায় দোষী সাব্যস্ত আরও দু’জনকে শুক্রবার জামিন দিল সুপ্রিম কোর্ট। চলতি মাসের ৬ তারিখে এই মামলায় ১০ জন আসামিকে ইতিমধ্যেই জামিন দেয় শীর্ষ আদালত। বিচারপতি অভয় এস ওকা এবং অগাস্টিন জর্জ মাসিহের বেঞ্চ এই জামিন মঞ্জুর করেন। ১৯৮৭ সালে উত্তরপ্রদেশের হাশিমপুরায় ৩৮ জন মুসলিমকে হত্যা করা হয়েছিল।
জামিনের আবেদন শোনার সময় দুই বিচারপতির বেঞ্চ বলে, উভয় দোষী এখনও পর্যন্ত ৬ বছরেরও বেশি সাজা ভোগ করেছে, তাই এরা জামিন পাওয়ার অধিকারী। ওদের জেলে আটকে রাখার কোনও মানে হয় না।
এই মাসের শুরুতে সুপ্রিম কোর্ট হাশিমপুরা গণহত্যা মামলায় ইতিমধ্যে ১০ দোষী সাব্যস্ত আসামিকে জামিন দিয়েছে। দিল্লি হাইকোর্ট তাদের জামিন বাতিল করে তাদের দোষী সাব্যস্ত করার পর থেকেই অর্থাৎ ২০১৮ সাল থেকে হাজতে কাটাচ্ছে তারা। এ দিন যে দু’জনকে জামিন দেওয়া হয় তাদের মধ্যে এক আসামির বয়স এখন ৮২ বছর। ২০১৮ সালে দিল্লি হাইকোর্ট প্রায় ৩৮ জন মুসলিমকে হত্যার দায়ে তাকে এবং অন্য ১৫ জনকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল।
হাশিমপুরা গণহত্যার তদন্ত বার বার বাধা পেয়েছে। উত্তরপ্রদেশ পুলিশের তাবড় পুলিশ অফিসার ও প্রশাসনিক কর্তারা আদালতে তথ্য-প্রমাণ জমা দিতে অস্বীকার করেছে। গণহত্যায় ব্যবহৃত ট্রাকটিকে চিহ্নিত ও আটক করতে দেওয়া হয়নি। তদন্তকারীদের হাতে বা আদালতে তুলে দেওয়া হয়নি। ট্রাকটি ধুয়ে মুছে এমন নৈপুণ্যের সঙ্গে মেরামত করা হয়েছিল যাতে রক্ত, গুলির দাগ কোনও কিছুই যেন ফরেনসিক পরীক্ষায় ধরা না পড়ে, বলে অভিযোগ করেছিলেন নিহতদের তরফের আইনজীবী।
প্রসঙ্গত, ১৯৮৭ সালের ২২ মে হাশিমপুরা গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল। সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা থাকায় উত্তরপ্রদেশের মিরাট জেলার হাশিমপুরা এলাকা থেকে টেরিটোরিয়াল আর্মড কনস্ট্যাবুলারি (পিএসি) কর্মীরা প্রায় ৫০ জন মুসলিম পুরুষকে ট্রাকে তুলে নিয়ে যায়। এলাকার মানুষরা ভেবেছিলেন তাদের বোধহয় থানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু রাত নামার পর দিল্লি-গাজিয়াবাদ সীমান্তের মুরাদনগরের কাছে একটি খালের সামনে ট্রাক থামায় পিএসি বাহিনী।
এরপর ট্রাক থেকে এক এক করে নামিয়ে গুলি চালাতে শুরু করে পিএসি জওয়ানরা। নৃশংস এই ঘটনা দেখে ট্রাকে থাকা অন্যরা ‘বাঁচাও, বাঁচাও’ বলে চিৎকার করতে থাকে। তাতেও থামেনি পিএসি জওয়ানদের নৃশংসতা। তারা ট্রাকের ভিতরে এলোপাথাড়ি গুলি চালায়। লাশগুলো সেখানেই ফেলে বাকিদের নিয়ে আরও একটু এগিয়ে মকানপুরে হি¨ননালার কাছে গাড়ি থামিয়ে বাকি ১৫-১৬ জনকে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়। পরে ৩৮ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছল।
তাকে একটি ট্রাকে করে একটি খালের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কারণে হতাহতদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়ার অজুহাতে শহরের উপকণ্ঠে নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানে তাদের গুলি করে লাশ একটি খালে ফেলে দেওয়া হয়। এই ঘটনায় ৩৮ জন মারা গিয়েছিল এবং এই ভয়ঙ্কর ঘটনাটি বর্ণনা করতে মাত্র পাঁচজন বেঁচেছিলেন। এই মর্মন্তুদ হত্যাকাণ্ডে ৫ জন প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন।