ইংরেজি মডেল মাদ্রাসার কনট্রাকচ্যুয়াল শিক্ষক শিক্ষাকর্মীদের সাম্মানিক মিটিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি বেতনও বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
— পি বি সালিম, সচিব, পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু বিষয়ক ও মাদ্রাসা শিক্ষা দফতর
সেখ কুতুবউদ্দিন: রাজ্যের মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে আধুনিক ও সময়োপযোগী করে তুলতে ইংরেজি মাধ্যম মাদ্রাসা গড়ে তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানেন, ইদানীংকালে ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছেলেমেয়েদের পড়ানোর দিকে ঝোঁক বাড়ছে অভিভাবকদের। কিন্তু বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে লেখাপড়ার খরচ অনেক বেশি। সেই দিক ভেবে গ্রামবাংলার গরিব পরিবারের ছেলেমেয়েদের ইংরেজি মাধ্যমে পঠন-পাঠনের সুবিধা করে দিতেই মডেল ইংরেজি মাধ্যম মাoাসা করার উদ্যোগ ছিল মুখ্য মন্ত্রীর। এখন দেখা যাচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্য সরকারের আন্তরিকতা ও সদিচ্ছা সত্ত্বেও ইংরেজি মডেল মাoাসাগুলিতে পর্যাপ্ত শিক্ষকের অভাব ছিল। রাজ্যের সংখ্যালঘু দফতর শিক্ষক নিয়োগে উদ্যোগী হলেও তা নানা কারণে থমকে রয়েছে।
ইংরেজি মাধ্যম মাদ্রাসাগুলিতে স্থায়ী শিক্ষকের অভাবে এনজিও ও এজেন্সি দ্বারা শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছিল। রাজ্যের ইংরেজি মাধ্যম মাদ্রাসাগুলিতে ৮৪ জন টিচিং স্টাফ এবং ৩৪ জন নন টিচিং স্টাফ রয়েছে। এই সমস্ত শিক্ষকরা ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে মাদ্রাসায় কর্মরত রয়েছেন। ওই শিক্ষকদের আগে সাম্মানিক দেওয়া হত অ্যাসিসট্যান্ট মাস্টারদের জন্য ৭ হাজার, ক্লার্কদের ৫ হাজার ৫০০, গ্রুপ-ডি- ৫ হাজার এবং সুইপারদের জন্য ৩ হাজার টাকা।
এ’ন এনজিও এবং সংস্থা নিযুক্ত অ্যাসিসট্যান্ট মাস্টার (অনার্স/পিজি)-এর সাম্মানিক বা ভাতা বেড়ে হচ্ছে ১৫ হাজার টাকা। অ্যাসিসট্যান্ট মাস্টার (ইউজি)-এর সাম্মানিক বেড়ে হল ১২ হাজার টাকা। ক্লার্করা সাম্মানিক পাবেন ১০ হাজার, মেট্রন ৮ হাজার এবং গ্রুপ-ডি কর্মীরা সাম্মানিক পাবেন ৮ হাজার টাকা।
এই উদ্যোগ প্রসঙ্গে মঙ্গলবার ‘পুবের কলম’কে সংখ্যালঘু দফতরের সচিব আইএএস পি বি সালিম বলেন, বহু দিন ধরে ইংরেজি মাধ্যম মাদ্রাসায় কনট্রাকচুয়্যাল শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের বেতন আটকে ছিল। তাঁদের বকেয়া মিটিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি তাঁদের বেতনও বাড়ানো হয়েছে।
এই বিষয়ে বর্ধমান মডেল মাদ্রাসার (ইংরেজি মাধ্যম) প্রধানশিক্ষক মুহাম্মদ নাসিরউদ্দিন বলেন, ইংরেজি মাদ্রাসাগুলিতে ৯০ শতাংশ শিক্ষক এনজিও এবং এজেন্সি নিযুক্ত। রাজ্যের মডেল মাদ্রাসাগুলি ভালো চলছে। এই শিক্ষকদের বেতন ১৫ মাস ধরে আটকে রয়েছে। সরকার বেতন দেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে, এতে আমরা খুশি। কারণ এই শিক্ষকরা মাদ্রাসার জন্য বহু পরিশ্রম করছেন। মুখ্যমন্ত্রী-সহ দফতরের আধিকারিকদের ধন্যবাদ জানাই।
প্রথম থেকেই এই মাদ্রাসাগুলিতে ছাত্রভর্তিতে ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে অভিভাবকদের। রাজ্যের সরকারি এবং সরকার অনুমোদিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের রমরমাও বেড়েছে। রাজ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর মাদ্রাসাগুলিতে এনজিও মাধ্যমে ১০ থেকে ১২ জন করে শিক্ষক দিয়েছে।
মালদা, মুর্শিদাবাদ, উত্তর ২৪ পরগনা, বর্ধমান প্রভৃতি জেলার মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এই মাদ্রাসাগুলিতে অন্য বছরের মতো এবারও যথেষ্ট সংখ্যক ছাত্রভর্তি হয়েছে। বহু অভিভাবক এসে মাদ্রাসার পরিকাঠামো ও নিযুক্ত শিক্ষক সম্পর্কে জানতে চাইছেন।
প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পঠন-পাঠন শুরু হয় এই সব মাদ্রাসায়। কোনও কোনও মাদ্রাসায় দুটি করে সেকশন রয়েছে। ধাপে ধাপে মাদ্রাসাগুলিকে উন্নীত করছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।
রাজ্য সরকার ২০১৪ সালে ইংরেজি মাধ্যম মাদ্রাসা তৈরির কাজ শুরু করে। ২০১৮ সাল পর্যন্ত রাজ্যের ১৪টি মাদ্রাসার মধ্যে ১২টিতে পঠন-পাঠন শুরু হয়ে যায়। বর্তমানে প্রতিটি মাদ্রাসায় গড়ে ৮০০ জনের বেশি ছাত্রছাত্রী রয়েছে।
ইংরেজি মাধ্যম মাদ্রাসাগুলি পুরোপুরি সরকারি। রাজ্যের সরকারি স্কুলে শিক্ষক নিয়োগের মতো ইংরেজি মাধ্যম মাদ্রাসার শিক্ষক নিয়োগের দায়িত্বও পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)-কে দেওয়া হয়। ইংরেজি মাধ্যম মাদ্রাসাগুলিও যেহেতু সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠান, তাই এসসি-এসটি ওবিসি সংরক্ষণ নেই। সাধারণ নিয়মেই প্রথমে নিয়োগ শুরু করা হয় বলে জানিয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষা দফতর। ইংরেজি মাধ্যম মাদ্রাসায় স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ হলে এই সব মাদ্রাসার প্রতি আকর্ষণ আরও বাড়বে অভিভাবকদের।