সুবিদ আবদুল্লাহ্ : বইপ্রেমী খোদাবক্সের নাম শোনা নেই। বই-পাগল আরজ আলি মাতুব্বরের নামও অজানা। অথচ তাঁদেরই ভাবধারায় কোটি টাকার পাঠাগার তৈরি করছেন মুহাম্মদ আবদুল সাদিক সরকার। যা ব্যবহার করবেন জনসাধারণ। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বাংলাদেশ সীমান্তের হিলি চেকপোস্টের অদূরে ত্রিমোহিনীতে গড়ে উঠছে এই পাঠাগার। সাদিক সাহেবের আপন খেয়ালে গড়ে ওঠা আম-আদমির পাঠাগারটি দেড় হাজার বর্গফুটের। সাদিক সাহেব জানাচ্ছেন, শুধু ফার্নিচারে খরচ হচ্ছে ২৫ লক্ষ টাকা। যেখানে কোটি টাকা মূল্যের গ্রন্থ সংরক্ষিত থাকতে পারে। বইপ্রেমী সাদেক সরকার জানাচ্ছেন, সংগ্রহ চলছে প্রাচীন থেকে বর্তমান সময়ের সবরকম ভাষার গ্রন্থ।
পাঠাগারে সংগৃহীত বই কুঠুরিতে চোখ রেখে তিনি জানান, তাঁর সংগ্রহশালায় এমন কিছু গ্রন্থ থাকবে যার টানে পাঠক এখানে আসবেই।
কথা বলতে বলতে আলমারির প্রাচীন সংগ্রহের বক্স খুলে তিনি তুলে আনলেন ‘ওয়ান্ডারফুল ইন্ডিয়া’ গ্রন্থের বাংলা সংস্করণ। যেটির প্রকাশকাল ১৯০৬ সাল। এটি তিনি সংগ্রহ করেছেন কুড়ি হাজার টাকায়। এ ছাড়াও এমন কিছু মূল্যবান গ্রন্থ সংগ্রহ রয়েছে এই পাঠাগারে, যার জন্য তিনি বিপুল অর্থ ব্যয় করেছেন। দেখা গেল, একেকটি খোপে একেক রকম সংগ্রহ। কোনওটিতে ইতিহাস, কোনওটিতে সমাজবিজ্ঞান, আবার কোনওটিতে রয়েছে সব ধর্ম সম্প্রদায়ের ধর্মগ্রন্থ।
পাঠাগারটি প্রথম তলায়। নীচের তলায় থাকছে দূরের পাঠকদের আবাস। পাঠক যতদিন থাকবেন, ততদিন তাঁর থাকা-খাওয়া ফ্রি। রাঁধুনি, গ্রন্থাগারিক ও চতুর্থশ্রেণির কর্মীর বেতন দেবেন তিনিই। তাতে প্রতি মাসে ব্যয় করবেন লক্ষাধিক টাকা। কেন তাঁর এই নেশা? সাদিক সরকার জানান, বাবা ছিলেন বই ব্যবসায়ী। ব্যবসা সূত্রে কলকাতায় হরফ প্রকাশনীর সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে ওঠে। আলাপ ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে প্রাবন্ধিক ও সাহিত্যিক আবদুল আজিজ আল আমানের সঙ্গে। বাবার সঙ্গে কলকাতায় আসতেন সাদেক সাহেব। গুণী মানুষদের সান্নিধ্যে বইপ্রেম গড়ে ওঠে তাঁর। ইচ্ছে ছিল এমন একটি পাঠাগার তৈরি করবেন, যেখানে জ্ঞানান্বেষী মানুষ এসে খুশি হবেন। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে সেই স্বপ্ন বাস্তব করে তুলছেন। যা বিহারের খোদাবক্স লাইব্রেরি ও বাংলাদেশের আরজ আলি মাতুব্বর লাইব্রেরির সমতুল্য হবে।