১২ জুলাই ২০২৫, শনিবার, ২৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শান্তির খোঁজে অস্থির ফিলিস্তিন

কিবরিয়া আনসারি
  • আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, সোমবার
  • / 61

দেখতে দেখতে আরও একটা বছর শেষ। আসছে ২০২৫। গোটা বিশ্বে যুদ্ধের করাল ছায়া। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে কবে ফিরবে শান্তি! তা আজানা। তবে এক বছরে এত নেতা হারায়নি হামাস। যা এই বিদায়ী বছরে হারিয়েছে। সেটা নিয়েই আজকের প্রতিবেদন।

পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস। দেশটির পশ্চিম তীর ও গাজায় ইসরাইলি দখলদারির অবসানের দাবিতে ‘ইন্তিফাদা’ বা ফিলিস্তিনি গণজাগরণ শুরুর পর ১৯৮৭ সালে আধ্যাত্মিক নেতা শেখ আহমাদ ইয়াসিন আর আবদেল আজিজ আল-রান্তিসির হাত ধরে হামাসের যাত্রা শুরু হয়। যুগের পর যুগ হামাসের শীর্ষনেতা থেকে শুরু করে সাধারণ যোদ্ধা সবাই হানাদার ইসরাইলের বিরুদ্ধে তীব্র লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের আঘাতও এসেছে অসংখ্যবার। তবে থেমে থাকেনি। তারপরেও আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে হামাস। তবে ২০২৪ সালের মত বড় আঘাতের মুখোমুখি হয়তো এর আগে হামাসের শীর্ষ নেতৃত্ব আর কখনোই হয়নি। বিদায়ী বছরে (২০২৪ সাল) একের পর এক নেতা হারিয়েছে হামাস। ইহুদিদের বিরুদ্ধে গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ করে চলেছে। চলমান যুদ্ধে হামাসের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতা নিহত হয়েছেন। ইহুদি বাহিনী হত্যা করেছে তাঁদের।

মুহাম্মদ দেইফ: হামাসের সামরিক শাখা ইজ্জেদিন আল-কাশেম ব্রিগেডের প্রধান ছিলেন মুহাম্মদ দেইফ। গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরাইলি ভূখণ্ডে চালানো হামলার অন্যতম ‘মাস্টারমাইন্ড’ বা পরিকল্পনাকারী ধরা হয় তাঁকে। ১৯৬৫ সালে খান ইউনিস শরণার্থী শিবিরে মুহাম্মদ দেইফের জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮৭ সালে প্রথম ইন্তিফাদা শুরু হওয়ার পর তিনি হামাসে যোগ দেন। ১৯৮৯ সালে ইহুদি বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন তিনি। তখন টানা ১৬ মাস কারাগারে ছিলেন। ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব গাজা থেকে বিজ্ঞান বিষয়ে ডিগ্রি নিয়েছেন দেইফ। পদার্থ, রসায়ন ও জীববিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংßৃñতিক কমিটির প্রধান ছিলেন। মঞ্চে অভিনয় করেছেন। গাজায় হামাসের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় অসংখ্য টানেল বা সুড়ঙ্গ রয়েছে। এই নেটওয়ার্ক উন্নয়নে কাজ করেছেন দেইফ। এর আগে ইহুদি বাহিনীর হত্যাচেষ্টায় দেইফ একটি চোখ হারান। পায়েও গুরুতর আঘাত পান । ২০১৪ সালে ইহুদি বিমান হামলায় দেইফের স্ত্রী, সাত মাসের পুত্র সন্তান এবং তিন বছর বয়সি মেয়ের মৃত্যু হয়। ফিলিস্তিনিদের কাছে একজন মুক্তির নায়ক ছিলেন মুহাম্মদ দেইফ। বার বার আঘাত, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা, গোপন জীবন, পরিবারের সদস্যদের হত্যা; কিছুই তাঁকে দমাতে পারেনি। ফিনিক্স পাখির মতো বার বার ঘুরে দাঁড়িয়েছেন তিনি। ১৩ জুলাই গাজার খান ইউনিসে ইসরাইলি বিমান হামলায় শাহাদাত বরণ করেন।

ইসমাইল হানিয়া: গত ৩১ জুলাই আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে হঠাৎ করে খবর আসে, হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়া তেহরানে শাহাদত বরণ করেছেন। নড়েচড়ে বসে বিশ্ব। দেশটি জানায়, তেহরানের একটি অতিথিশালায় ‘সন্ত্রাসী হামলায়’ শহিদ হয়েছেন হানিয়া। পরে হামাসও এই তথ্য নিশ্চিত করে। ইরান ও হামাস দাবি করে, ইসরাইল হানিয়াকে খুন করা হয়েছে। নিহত হওয়ার একদিন আগে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন হানিয়া। অর্থাৎ তিনি রাষ্ট্রীয় অতিথি হয়ে তেহরানে গিয়েছিলেন। সেখানে পেজেশকিয়ান ও ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি। একজন রাষ্ট্রীয় অতিথিকে কীভাবে হত্যা করা সম্ভব হল, তা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে তেহরান। ওই সময় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, তেহরানে হানিয়া যেই কক্ষে ছিলেন, সেখানে কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই বোমা স্থাপন করে রেখেছিল ইসরাইল। সেই বোমা বিস্ফোরণে হানিয়ার মৃত্যু হয়েছে। আবার কেউ দাবি করে, ইসরাইলি ক্ষেপণাস্ত্র হানিয়ার প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। যদিও সম্প্রতি এই হত্যার দায় স্বীকার করেছে ইহুদি সেনাবাহিনী। ইসমাইল হানিয়া ১৯৬৩ সালে গাজার আল-শাতি শরণার্থীশিবিরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তরুণ বয়সে গাজা ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ে মুসলিম ব্রাদারহুডের ছাত্র শাখার সদস্য ছিলেন। ১৯৮৭ সালে হামাসের প্রতিষ্ঠালগ্নে সংগঠনটিতে যোগ দেন তিনি।

ইয়াহিয়া সিনওয়ার: তেহরানে ইসমাইল হানিয়া নিহত হওয়ার পর হামাসের রাজনৈতিক শাখার নতুন প্রধান হিসেবে নিয়োগ পান ইয়াহিয়া সিনওয়ার। এর আগে গাজায় সংগঠনটির সামরিক শাখার প্রধান ছিলেন তিনি। ১৯৬২ সালে গাজার খান ইউনিসে জন্ম নেন ইয়াহিয়া সিনওয়ার। ত¥াকে হামাসের সবচেয়ে ‘অনমনীয়’ শীর্ষস্থানীয় এক নেতা হিসেবে বিবেচনা করা হত। যায়নবাদী দখলদারির বিরুদ্ধে গাজার ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে সোচ্চার ভূমিকা রাখায় আশির দশকের শুরুর দিকে ইহুদি কর্তৃপক্ষের হাতে বার বার গ্রেফতার হয়েছিলেন সিনওয়ার। ইসরাইলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলতে যোদ্ধাদের একটি নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠায় সিনওয়ার সহায়তা করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে এই নেটওয়ার্ক হামাসের সশস্ত্র শাখা ইজ্জেদিন আল-কাসেম ব্রিগেড হিসেবে গড়ে ওঠে। হামাস প্রতিষ্ঠার পরপরই এর নেতৃত্বের কাতারে আসেন ইয়াহিয়া সিনওয়ার। বছর খানেকের মধ্যে ইহুদি বাহিনী তাঁকে গ্রেফতার করে ও চার দফা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে। যার অর্থ, ৪২৬ বছরের সম পরিমাণ কারাদণ্ড দেওয়া হয় তাঁকে।

ইয়াহিয়া সিনওয়ার দীর্ঘ ২৩ বছর ইসরাইলের কারাগারে কাটিয়েছেন। পরে এক বন্দিবিনিময় চুক্তির আওতায় ২০১১ সালে মুক্তি পান। এর পর দ্রুতই সিনওয়ার হামাসের শীর্ষ পদে ফেরত আসেন। ২০১২ সালে সংগঠনটির রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। দায়িত্ব পান সামরিক শাখা কাসেম ব্রিগেডের সঙ্গে রাজনৈতিক শাখার কার্যক্রম সমন্বয়ের। গত ১৬ অক্টোবর দক্ষিণ গাজায় এক অভিযান চালিয়ে ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে হত্যার কথা জানায় ইহুদি বাহিনী। ইসরাইলের চোখে তিনি ছিলেন ‘এক নম্বর’ শত্রু।

নিহতের তালিকায় আরও রয়েছেন হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা সালেহ আল-আরৌরি। গত ২ জানুয়ারি নিহত হন। সালেহ সংগঠনের সামরিক শাখার একজন প্রতিষ্ঠাতা কমান্ডার ছিলেন। হামাস আর হিজবুল্লাহর মধ্যে প্রধান যোগাযোগকারীও ছিলেন তিনি। লেবাননের বৈরুতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত হন সালেহ। এছাড়া গত ১০ মার্চ গাজার নুসেইরাত শরণার্থীশিবিরের নিচে একটি সুড়ঙ্গে বোমা হামলায় নিহত হন হামাসের ডেপুটি কমান্ডার মারওয়ান ইসা। তাঁকে ইসরাইলি ৭ অক্টোবর হামলার অন্যতম ‘মাস্টারমাইন্ড’ বিবেচনা করা হয়। এর আগে ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর গাজার উত্তরাঞ্চলে এক অভিযানে হামাসের কেন্দ্রীয় জাবালিয়া ব্যাটালিয়নের কমান্ডার ইব্রাহিম বিয়ারিকে খুন করে ইহুদি সামরিক বাহিনী।

Tag :

প্রতিবেদক

কিবরিয়া আনসারি

Kibria obtained a master's degree in journalism from Aliah University. He has been in journalism since 2018, gaining work experience in multiple organizations. Focused and sincere about his work, Kibria is currently employed at the desk of Purber Kalom.

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

শান্তির খোঁজে অস্থির ফিলিস্তিন

আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, সোমবার

দেখতে দেখতে আরও একটা বছর শেষ। আসছে ২০২৫। গোটা বিশ্বে যুদ্ধের করাল ছায়া। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে কবে ফিরবে শান্তি! তা আজানা। তবে এক বছরে এত নেতা হারায়নি হামাস। যা এই বিদায়ী বছরে হারিয়েছে। সেটা নিয়েই আজকের প্রতিবেদন।

পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস। দেশটির পশ্চিম তীর ও গাজায় ইসরাইলি দখলদারির অবসানের দাবিতে ‘ইন্তিফাদা’ বা ফিলিস্তিনি গণজাগরণ শুরুর পর ১৯৮৭ সালে আধ্যাত্মিক নেতা শেখ আহমাদ ইয়াসিন আর আবদেল আজিজ আল-রান্তিসির হাত ধরে হামাসের যাত্রা শুরু হয়। যুগের পর যুগ হামাসের শীর্ষনেতা থেকে শুরু করে সাধারণ যোদ্ধা সবাই হানাদার ইসরাইলের বিরুদ্ধে তীব্র লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের আঘাতও এসেছে অসংখ্যবার। তবে থেমে থাকেনি। তারপরেও আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে হামাস। তবে ২০২৪ সালের মত বড় আঘাতের মুখোমুখি হয়তো এর আগে হামাসের শীর্ষ নেতৃত্ব আর কখনোই হয়নি। বিদায়ী বছরে (২০২৪ সাল) একের পর এক নেতা হারিয়েছে হামাস। ইহুদিদের বিরুদ্ধে গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ করে চলেছে। চলমান যুদ্ধে হামাসের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতা নিহত হয়েছেন। ইহুদি বাহিনী হত্যা করেছে তাঁদের।

মুহাম্মদ দেইফ: হামাসের সামরিক শাখা ইজ্জেদিন আল-কাশেম ব্রিগেডের প্রধান ছিলেন মুহাম্মদ দেইফ। গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরাইলি ভূখণ্ডে চালানো হামলার অন্যতম ‘মাস্টারমাইন্ড’ বা পরিকল্পনাকারী ধরা হয় তাঁকে। ১৯৬৫ সালে খান ইউনিস শরণার্থী শিবিরে মুহাম্মদ দেইফের জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮৭ সালে প্রথম ইন্তিফাদা শুরু হওয়ার পর তিনি হামাসে যোগ দেন। ১৯৮৯ সালে ইহুদি বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন তিনি। তখন টানা ১৬ মাস কারাগারে ছিলেন। ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব গাজা থেকে বিজ্ঞান বিষয়ে ডিগ্রি নিয়েছেন দেইফ। পদার্থ, রসায়ন ও জীববিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংßৃñতিক কমিটির প্রধান ছিলেন। মঞ্চে অভিনয় করেছেন। গাজায় হামাসের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় অসংখ্য টানেল বা সুড়ঙ্গ রয়েছে। এই নেটওয়ার্ক উন্নয়নে কাজ করেছেন দেইফ। এর আগে ইহুদি বাহিনীর হত্যাচেষ্টায় দেইফ একটি চোখ হারান। পায়েও গুরুতর আঘাত পান । ২০১৪ সালে ইহুদি বিমান হামলায় দেইফের স্ত্রী, সাত মাসের পুত্র সন্তান এবং তিন বছর বয়সি মেয়ের মৃত্যু হয়। ফিলিস্তিনিদের কাছে একজন মুক্তির নায়ক ছিলেন মুহাম্মদ দেইফ। বার বার আঘাত, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা, গোপন জীবন, পরিবারের সদস্যদের হত্যা; কিছুই তাঁকে দমাতে পারেনি। ফিনিক্স পাখির মতো বার বার ঘুরে দাঁড়িয়েছেন তিনি। ১৩ জুলাই গাজার খান ইউনিসে ইসরাইলি বিমান হামলায় শাহাদাত বরণ করেন।

ইসমাইল হানিয়া: গত ৩১ জুলাই আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে হঠাৎ করে খবর আসে, হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়া তেহরানে শাহাদত বরণ করেছেন। নড়েচড়ে বসে বিশ্ব। দেশটি জানায়, তেহরানের একটি অতিথিশালায় ‘সন্ত্রাসী হামলায়’ শহিদ হয়েছেন হানিয়া। পরে হামাসও এই তথ্য নিশ্চিত করে। ইরান ও হামাস দাবি করে, ইসরাইল হানিয়াকে খুন করা হয়েছে। নিহত হওয়ার একদিন আগে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন হানিয়া। অর্থাৎ তিনি রাষ্ট্রীয় অতিথি হয়ে তেহরানে গিয়েছিলেন। সেখানে পেজেশকিয়ান ও ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি। একজন রাষ্ট্রীয় অতিথিকে কীভাবে হত্যা করা সম্ভব হল, তা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে তেহরান। ওই সময় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, তেহরানে হানিয়া যেই কক্ষে ছিলেন, সেখানে কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই বোমা স্থাপন করে রেখেছিল ইসরাইল। সেই বোমা বিস্ফোরণে হানিয়ার মৃত্যু হয়েছে। আবার কেউ দাবি করে, ইসরাইলি ক্ষেপণাস্ত্র হানিয়ার প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। যদিও সম্প্রতি এই হত্যার দায় স্বীকার করেছে ইহুদি সেনাবাহিনী। ইসমাইল হানিয়া ১৯৬৩ সালে গাজার আল-শাতি শরণার্থীশিবিরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তরুণ বয়সে গাজা ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ে মুসলিম ব্রাদারহুডের ছাত্র শাখার সদস্য ছিলেন। ১৯৮৭ সালে হামাসের প্রতিষ্ঠালগ্নে সংগঠনটিতে যোগ দেন তিনি।

ইয়াহিয়া সিনওয়ার: তেহরানে ইসমাইল হানিয়া নিহত হওয়ার পর হামাসের রাজনৈতিক শাখার নতুন প্রধান হিসেবে নিয়োগ পান ইয়াহিয়া সিনওয়ার। এর আগে গাজায় সংগঠনটির সামরিক শাখার প্রধান ছিলেন তিনি। ১৯৬২ সালে গাজার খান ইউনিসে জন্ম নেন ইয়াহিয়া সিনওয়ার। ত¥াকে হামাসের সবচেয়ে ‘অনমনীয়’ শীর্ষস্থানীয় এক নেতা হিসেবে বিবেচনা করা হত। যায়নবাদী দখলদারির বিরুদ্ধে গাজার ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে সোচ্চার ভূমিকা রাখায় আশির দশকের শুরুর দিকে ইহুদি কর্তৃপক্ষের হাতে বার বার গ্রেফতার হয়েছিলেন সিনওয়ার। ইসরাইলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলতে যোদ্ধাদের একটি নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠায় সিনওয়ার সহায়তা করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে এই নেটওয়ার্ক হামাসের সশস্ত্র শাখা ইজ্জেদিন আল-কাসেম ব্রিগেড হিসেবে গড়ে ওঠে। হামাস প্রতিষ্ঠার পরপরই এর নেতৃত্বের কাতারে আসেন ইয়াহিয়া সিনওয়ার। বছর খানেকের মধ্যে ইহুদি বাহিনী তাঁকে গ্রেফতার করে ও চার দফা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে। যার অর্থ, ৪২৬ বছরের সম পরিমাণ কারাদণ্ড দেওয়া হয় তাঁকে।

ইয়াহিয়া সিনওয়ার দীর্ঘ ২৩ বছর ইসরাইলের কারাগারে কাটিয়েছেন। পরে এক বন্দিবিনিময় চুক্তির আওতায় ২০১১ সালে মুক্তি পান। এর পর দ্রুতই সিনওয়ার হামাসের শীর্ষ পদে ফেরত আসেন। ২০১২ সালে সংগঠনটির রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। দায়িত্ব পান সামরিক শাখা কাসেম ব্রিগেডের সঙ্গে রাজনৈতিক শাখার কার্যক্রম সমন্বয়ের। গত ১৬ অক্টোবর দক্ষিণ গাজায় এক অভিযান চালিয়ে ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে হত্যার কথা জানায় ইহুদি বাহিনী। ইসরাইলের চোখে তিনি ছিলেন ‘এক নম্বর’ শত্রু।

নিহতের তালিকায় আরও রয়েছেন হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা সালেহ আল-আরৌরি। গত ২ জানুয়ারি নিহত হন। সালেহ সংগঠনের সামরিক শাখার একজন প্রতিষ্ঠাতা কমান্ডার ছিলেন। হামাস আর হিজবুল্লাহর মধ্যে প্রধান যোগাযোগকারীও ছিলেন তিনি। লেবাননের বৈরুতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত হন সালেহ। এছাড়া গত ১০ মার্চ গাজার নুসেইরাত শরণার্থীশিবিরের নিচে একটি সুড়ঙ্গে বোমা হামলায় নিহত হন হামাসের ডেপুটি কমান্ডার মারওয়ান ইসা। তাঁকে ইসরাইলি ৭ অক্টোবর হামলার অন্যতম ‘মাস্টারমাইন্ড’ বিবেচনা করা হয়। এর আগে ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর গাজার উত্তরাঞ্চলে এক অভিযানে হামাসের কেন্দ্রীয় জাবালিয়া ব্যাটালিয়নের কমান্ডার ইব্রাহিম বিয়ারিকে খুন করে ইহুদি সামরিক বাহিনী।