পুবের কলম প্রতিবেদক বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী– বহু বিরল পুস্তকের প্রকাশক– বিশ্বকোষ পত্রিকার সম্পাদক ও সংখ্যালঘু দরদি পার্থ সেনগুপ্ত গত ১০ জুন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর মৃত্যুতে বিভিন্ন মহলে শোকের ছায়া নেমে আসে।
বুধবার তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যান রাজ্যসভার সাবেক সাংসদ ও দৈনিক পুবের কলম-এর সম্পাদক আহমদ হাসান ইমরান– বঙ্গীয় সংখ্যালঘু বুদ্ধিজীবী মঞ্চের সভাপতি ওয়ায়েজুল হক– সারা বাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশন-এর সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান প্রমুখ।
এদিন– আহমদ হাসান ইমরান প্রয়াত পার্থ সেনগুপ্তর স্ত্রী শিবানী সেনগুপ্ত ও পুত্র নীলাদ্রি সেনগুপ্তর সঙ্গে কথা বলে শোকজ্ঞাপন করেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে পার্থ সেনগুপ্তর জীবন ও কর্মের নানান দিক উঠে আসে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সঙ্গে পার্থবাবুর সম্পৃক্ততার কথা বারবার বলেন তাঁর ছেলে ও স্ত্রী। কলম-এর সম্পাদকের সঙ্গে তাঁর সখ্যতা ও কামরুজ্জামান– সৈয়দ সাহাবুদ্দিন– ড. আমজাদ হোসেন-এর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল সেকথাও বলেন নীলাদ্রি সেনগুপ্ত। তিনি কথা প্রসঙ্গে বলেন– বাবা আমাদের তেমন কিছুই দিয়ে যাননি– তবে সাম্প্রদায়িকতামুক্ত হতে শিখিয়েছেন। তিনি বলেন– বাবা বেগম রোকেয়ার উপর অনেক কাজ করেছেন– তাঁর রচনাবলী প্রকাশ করেছেন। স্নেহভরে নিজের নাতনি অর্থাৎ আমার মেয়ের নাম রেখেছেন ‘রোকেয়া’।
এদিন আহমদ হাসান ইমরান বলেন– ‘পার্থদার সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয়েছিল নিরক্ষরতা দূরীকরণ সমিতির কার্যালয়ে। তখন আমি ছাত্র। তিনি মুর্শিদাবাদ চরিত প্রকাশিত হবে বলে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন। তার গ্রাহক হতে গিয়ে তাঁকে প্রথম দেখি। এর বেশ কিছু বছর পর সামাজিক ও সাংস্টৃñতিক অনুষ্ঠানে তাঁর সঙ্গে আমার ধীরে ধীরে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আমরা একসঙ্গে বহু অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছি। পার্থদার সঙ্গে আমার পারিবারিক সম্পর্কও গড়ে উঠেছিল।’ কলম পত্রিকার সম্পাদক ইমরান আরও বলেন– ‘পার্থদা যেসব কাজ করছিলেন আমরা সম্মিলিতভাবে তা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করব।’ তাঁর পুত্র নীলাদ্রি সেনগুপ্ত বলেন– ‘বাবা বিশ্বকোষ পরিষদের মাধ্যমে যেসব কাজ করতেন আমরা তা যতটা পারি অক্ষুন্ন রাখার চেষ্টা করব।’
প্রসঙ্গত– পার্থ সেনগুপ্ত বিশ্বকোষ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক– রাজ্যস্তরের সদ্ভাবনা মঞ্চের সভাপতি– ‘বাংলা বাঁচাও সংবিধান বাঁচাও’ মঞ্চের যুগ্ম আহ্বায়ক-সহ নানান সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আন্তর্জাতিক সম্মেলনেও অংশগ্রহণ করেন। বেগম রোকেয়া-সহ বহু মুসলিম মনীষীর জীবন-চর্চা– ইতিহাস সংরক্ষণ ও মানুষের অধিকারের জন্য আমৃতু্য ময়দানে থেকেছেন তিনি। ইমরান বলেন– স্বাধীনতার পর মসজিদ– মাজার দখলমুক্ত করার কাজেও তাঁর অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
ওয়ায়েজুল হক বলেন– মানুষ হিসেবে পার্থদা ছিলেন খুবই মহৎ– বড়মাপের মানুষ। তাঁর মৃতু্যকে আমরা নিজেদের ব্যক্তিগত ক্ষতি বলে মনে করছি। মুহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন– আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ফ্রন্টপেজও তিনি এসে ছাত্র-শিক্ষক ও অন্য বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছিলেন। আমরা তাঁকে ফ্রন্টপেজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সম্বর্ধনা এবং লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট পুরস্কার প্রদান করেছি। তাঁর প্রয়াণে আমরা বাংলার এক বিশিষ্ট ব্যক্তিকে হারালাম।