০১ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
কষ্ট বুঝি, আমার বাড়িতে দু’জন সন্ত্রাসীহামলায় নিহত হয়েছেন

পহেলগাঁও কাণ্ডে নিহত শুভমের বাড়িতে রাহুল

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ৩০ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার
  • / 45

লখনউ, ৩০ এপ্রিল: কেটে গেছে ৯ দিন। এখনও অধরা পহেলগাঁও কাণ্ডের মূল হোতা। উপত্যকা জুড়ে সন্ত্রাসীদের খোঁজে চলছে চিরুনি তল্লাশি। এই আবহে পহেলগাঁও সন্ত্রাসী হামলায় নিহত শুভম দ্বিবেদীর বাড়িতে যান কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি। কথা বলেন নিহতের স্ত্রী ও বাবার সঙ্গে। রাহুলকে আসতে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন নিহত শুভম ত্রিবেদীর স্ত্রী ঐশ্বন্যা। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে আলিঙ্গন করেন রাহুল গান্ধি। জানান, তোমার ক্ষতি অপূরণীয়। ভাষায় ব্যক্ত করতে পারব না সেটা। তারপর রাহুলকে পুরো ঘটনার বিবরণ দেন ঐশ্বন্যা। বলেন, দীর্ঘ ৪৫ মিনিট যাবত সন্ত্রাসীরা তাদের কার্যকলাপ চালিয়েছে। অথচ একটা সেনাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। এতক্ষণ যাবত ঘটনাগুলো ঘটল অথচ কেউ কিছু করতে পারল না। গোটা কাশ্মীরে কিছু ছেড়ে ছেড়ে সেনা রয়েছে অথচ পহেলগাঁওয়ে কোনও নিরাপত্তা ছিল না। স্থানীয়রা তাঁদের জীবন বাজি রেখে অনেককেই সুরক্ষিত স্থানে নিয়ে গেছেন।

শুভমের কথা বলতে গিয়ে ঐশ্বন্যা জানান, ২২ এপ্রিল দুপুর আড়াইটা নাগাদ আমরা সকলেই লাঞ্চ করছিলাম। তারপর সাধারণ পোশাকে একজন এসে আমাদের ধর্ম জিজ্ঞাসা করে। হিন্দু বলতেই শুট করে দেয়। কয়েক সেকেন্ডের জন্য আমি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। আমার বোনও আমাদের সঙ্গে ছিল। পরে সন্ত্রাসী হামলার বিষয়টি ঠাহর করতে পেরে আমার বোন আমাকে টেনে হিঁচড়ে ঘটনাস্থল থেকে নিয়ে যায়। দীর্ঘ ৪৫ মিনিট যাবত এই ঘটনা ঘটছিল। সন্ত্রাসীরা এক এক করে সবার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করছিল , তারপর গুলি চালাচ্ছিল। আর বেছে বেছে পুরুষদেরই খুন করছিল। হয়তো ওনাদের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে টার্গেট দেওয়া হয়েছিল। তাই স্ত্রী’দের সামনে স্বামীদের জিজ্ঞাসা করে করে খুন করছিল। খুন করার সময় তারা বলছিল, তোমাদের সরকারকে বল। তোমাদের স্বামী কে মারছি তবে তোমাদের মারব না। আমরা ১৫-২০ ঘটনাস্থলে ছিলাম। আমাদের ছুঁয়ে পর্যন্ত দেখেনি।

এদিন শুভমের বাবার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে রাহুল গান্ধিও আবেগতাড়িত হয়ে যান। বলেন, আপনার কষ্ট আমি উপলব্ধি করতে পারছি। আমার বাবা, ও ঠাকুমা দু’জনই সন্ত্রাসীদের হাতে শহিদ হয়েছেন। এই কষ্ট আমিও বুঝি। তবে শুভম যেন শহিদের মর্যাদা পায় এই নিয়ে আমি প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখব। আর পহেলগাঁও কাণ্ডে নিহতদের সম্মানিত করার জন্য আমি সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার আহ্বান জানিয়েছি। আমি চেষ্টা করব সন্ত্রাসীরা যেন কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তি পায় সেদিকে নজর রাখার। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কথা বলব। অন্যদিকে শুভমের বাবা রাহুলের উদ্দেশ্যে বলেন,তুমি দেশের অনেক বড় নেতা। তুমি সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে কিছু বল। কিছু একটা কর। এইভাবে আর কতদিন।

প্রসঙ্গত, মাত্র মাস দু’য়েক আগেই বিয়ে হয়েছিল শুভম-ঐশ্বন্যার। মধুচন্দ্রিমা যাপন করতে কাশ্মীরে গিয়েছিলেন । কিন্তু কাশ্মীর যাত্রাই সব শেষ করে দিল। পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসীহামলায় মৃত্যু হল কানপুরের ব্যবসায়ী শুভম দ্বিবেদীর। তাঁর মাথায় গুলি করে সন্ত্রাসীরা। ঘটনাস্থলেই নিহত হন তিনি।

Tag :

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

কষ্ট বুঝি, আমার বাড়িতে দু’জন সন্ত্রাসীহামলায় নিহত হয়েছেন

পহেলগাঁও কাণ্ডে নিহত শুভমের বাড়িতে রাহুল

আপডেট : ৩০ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার

লখনউ, ৩০ এপ্রিল: কেটে গেছে ৯ দিন। এখনও অধরা পহেলগাঁও কাণ্ডের মূল হোতা। উপত্যকা জুড়ে সন্ত্রাসীদের খোঁজে চলছে চিরুনি তল্লাশি। এই আবহে পহেলগাঁও সন্ত্রাসী হামলায় নিহত শুভম দ্বিবেদীর বাড়িতে যান কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি। কথা বলেন নিহতের স্ত্রী ও বাবার সঙ্গে। রাহুলকে আসতে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন নিহত শুভম ত্রিবেদীর স্ত্রী ঐশ্বন্যা। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে আলিঙ্গন করেন রাহুল গান্ধি। জানান, তোমার ক্ষতি অপূরণীয়। ভাষায় ব্যক্ত করতে পারব না সেটা। তারপর রাহুলকে পুরো ঘটনার বিবরণ দেন ঐশ্বন্যা। বলেন, দীর্ঘ ৪৫ মিনিট যাবত সন্ত্রাসীরা তাদের কার্যকলাপ চালিয়েছে। অথচ একটা সেনাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। এতক্ষণ যাবত ঘটনাগুলো ঘটল অথচ কেউ কিছু করতে পারল না। গোটা কাশ্মীরে কিছু ছেড়ে ছেড়ে সেনা রয়েছে অথচ পহেলগাঁওয়ে কোনও নিরাপত্তা ছিল না। স্থানীয়রা তাঁদের জীবন বাজি রেখে অনেককেই সুরক্ষিত স্থানে নিয়ে গেছেন।

শুভমের কথা বলতে গিয়ে ঐশ্বন্যা জানান, ২২ এপ্রিল দুপুর আড়াইটা নাগাদ আমরা সকলেই লাঞ্চ করছিলাম। তারপর সাধারণ পোশাকে একজন এসে আমাদের ধর্ম জিজ্ঞাসা করে। হিন্দু বলতেই শুট করে দেয়। কয়েক সেকেন্ডের জন্য আমি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। আমার বোনও আমাদের সঙ্গে ছিল। পরে সন্ত্রাসী হামলার বিষয়টি ঠাহর করতে পেরে আমার বোন আমাকে টেনে হিঁচড়ে ঘটনাস্থল থেকে নিয়ে যায়। দীর্ঘ ৪৫ মিনিট যাবত এই ঘটনা ঘটছিল। সন্ত্রাসীরা এক এক করে সবার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করছিল , তারপর গুলি চালাচ্ছিল। আর বেছে বেছে পুরুষদেরই খুন করছিল। হয়তো ওনাদের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে টার্গেট দেওয়া হয়েছিল। তাই স্ত্রী’দের সামনে স্বামীদের জিজ্ঞাসা করে করে খুন করছিল। খুন করার সময় তারা বলছিল, তোমাদের সরকারকে বল। তোমাদের স্বামী কে মারছি তবে তোমাদের মারব না। আমরা ১৫-২০ ঘটনাস্থলে ছিলাম। আমাদের ছুঁয়ে পর্যন্ত দেখেনি।

এদিন শুভমের বাবার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে রাহুল গান্ধিও আবেগতাড়িত হয়ে যান। বলেন, আপনার কষ্ট আমি উপলব্ধি করতে পারছি। আমার বাবা, ও ঠাকুমা দু’জনই সন্ত্রাসীদের হাতে শহিদ হয়েছেন। এই কষ্ট আমিও বুঝি। তবে শুভম যেন শহিদের মর্যাদা পায় এই নিয়ে আমি প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখব। আর পহেলগাঁও কাণ্ডে নিহতদের সম্মানিত করার জন্য আমি সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার আহ্বান জানিয়েছি। আমি চেষ্টা করব সন্ত্রাসীরা যেন কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তি পায় সেদিকে নজর রাখার। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কথা বলব। অন্যদিকে শুভমের বাবা রাহুলের উদ্দেশ্যে বলেন,তুমি দেশের অনেক বড় নেতা। তুমি সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে কিছু বল। কিছু একটা কর। এইভাবে আর কতদিন।

প্রসঙ্গত, মাত্র মাস দু’য়েক আগেই বিয়ে হয়েছিল শুভম-ঐশ্বন্যার। মধুচন্দ্রিমা যাপন করতে কাশ্মীরে গিয়েছিলেন । কিন্তু কাশ্মীর যাত্রাই সব শেষ করে দিল। পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসীহামলায় মৃত্যু হল কানপুরের ব্যবসায়ী শুভম দ্বিবেদীর। তাঁর মাথায় গুলি করে সন্ত্রাসীরা। ঘটনাস্থলেই নিহত হন তিনি।