বিশেষ প্রতিবেদক: ইদানিং দেখা যাচ্ছে, সরকারি ঘোষণা ও আইন সত্বেও বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় এমন কী পাবলিক সার্ভিস কমিশনও (পিএসসি) ওবিসি ‘এ’ এবং ওবিসি ‘বি’দের প্রাপ্য সংরক্ষণ দিচ্ছে না। ফলে ওবিসি ‘এ’ যাদের মধ্যে সিংহভাগই হচ্ছে মুসলিম তারা ওবিসি হলেও ওবিসিদের প্রাপ্য সংরক্ষণ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
ইতিমধ্যে পুবের কলমে প্রকাশিত একটি খবরে দেখা যাচ্ছে পিএসসি’র ডব্লিউবিসিএস এক্সিকিউটিভ প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ওবিসি ‘এ’ এবং ওবিসি ‘বি’-এর জন্য কোনও সংরক্ষণ না দিয়েই তাদের কাট অফ মার্কস জেনারেল ক্যাটাগরির সমান করে দেওয়া হয়েছে। ফলে ওবিসি ‘এ’ এবং ওবিসি ‘বি’ দেরকে কোনও সংরক্ষণ ছাড়াই পিএসসির পরীক্ষায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয়েছে জেনারেল ক্যাটাগরির ছাত্রছাত্রীর সঙ্গে। এ ক্ষেত্রে পিএসসি বা পাবলিক সার্ভিস কমিশন কিন্তু সরকার ও আইন কর্তৃক বরাদ্দ কোনও সংরক্ষণ নীতি মানেনি। দেখা যাচ্ছে, ওবিসি ‘এ’ ওবিসি ‘বি’ দের প্রদত্ত সংরক্ষণ বিবেচনা করতেও রাজি নয় পাবলিক সার্ভিস কমিশন। তাই তারা ওবিসিদের জন্য পিএসসি পরিচালিত চাকরি পরীক্ষায় জেনারেল ক্যাটাগরিদের সঙ্গে ‘কাট অফ মার্কস’ (১২১.৬৭) সমান রেখেছে। শুধুমাত্র এসসি এসটি ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের কাট অফ মার্কসের ক্ষেত্রে বড় ধরণের ছাড় দেওয়া হয়েছে। যেমন এসসিদের কাট অফ মার্কস হচ্ছে ১১৪, এসটিদের কাট অফ মার্কস হচ্ছে ৯৪.৩৩ আর বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য ১০১. ৬৭।
তাহলে বিষয়টি এই দাঁড়াচ্ছে, ওবিসি ‘এ’ ওবিসি ‘বি’ দের শুধুমাত্র মুখে সংরক্ষণ ও বিশেষ সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হলেও কার্যক্ষেত্রে বৃদ্ধাঙ্গলি দেখানো হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ পাবলিক সার্ভিস কমিশন বা পিএসসি-ও এই কাজটিই নিখুঁতভাবে করেছে।
আগে পিএসসি’র পরীক্ষায় কিন্তু জেনারেলদের থেকে কাট অফ মার্কস এসসি এসটিদের সংরক্ষণ নীতি অনুযায়ী বেশ কম ছিল।
প্রাক্তন পিএসসি’র চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত আইএএস নুরুল হক এদিন বলেন, পিএসসির নিয়মে আছে এসসি এসটি ওবিসি প্রার্থীরাও জেনারেল ক্যাটাগরিতে যেতে পারে। ওবিসি-‘এ’ অথবা ‘বি’ এর প্রার্থীরা যদি ভালো নম্বর পান তাহলে তাঁরা জেনারেল ক্যাটাগরিতে চলে যাবেন। মোট শূণ্য পদের ১০ শতাংশ ওবিসি ‘এ’ হবে। ৭ শতাংশ ওবিসি ‘বি’, এসসি ২২ শতাংশ এবং এসটি ৬ শতাংশ। বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের জন্য কিছু সংরক্ষণ থাকে।
এই শতাংশ অনুসারে পোস্টগুলি আলাদা ভাবে রা’তে হবে। নিয়মানুসারে উচ্চ নম্বর পাওয়া প্রার্থীদের সাধারণ আসনে আন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বাকী আসনগুলি সংরক্ষণ নিয়মানুসারে তালিকায় প্রকাশ করতে হবে। এখন দেখা যাচ্ছে জেনারেল ক্যাটাগরিতে ওবিসি ‘এ’ ওবিসি ‘বি’ ঢুকে গিয়েছে। তাদেরকে ওবিসি সংরক্ষণের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। চূড়ান্ত প্যানেলেও সংরক্ষণের কোনও নাম গন্ধ নেই। আগের তালিকাগুলিতে এসসি
এসটি প্রার্থীদের সঙ্গে ওবিসিদেরও কাট অফ মার্কস কম রাখা হয়েছে। প্রাক্তন পিএসসির চেয়ারম্যান আরও বলেন, কিন্তু এ বছর নিয়ম মানা হচ্ছে না। কেন নিয়ম মানা হচ্ছে না, আরটিআইয়ের মাধ্যমে সেই তথ্য জানতে হবে। এর জন্য প্রতিবাদও করতে হবে। প্রয়োজনে আদালতের দ্বারস্থ হওয়া প্রয়োজন। এই ফল প্রকাশে আইন মানা হয়নি বলে অভিযোগ তোলেন তিনি।
শুক্রবার পিএসসি’র প্রাক্তন আধিকারিক এস পি মিশ্র বলেন, ওবিসি’র কাট অফ মার্কস জেনারেলের থেকে কম হবে। নিয়মানুসারে এই কাট অফ মার্কস জেনারেলের থেকে ৫ থেকে ৬ নম্বর কম করা যেতে পারে।
কিন্তু পিএসসি বলছে ওবিসি ‘এ’ -এর প্রার্থীরা ভালো পারফরমেন্স করছে। যত কোটা তাতে ওবিসি ‘এ’ ক্যাটাগরির প্রার্থীরা ভালো ফল করছে বলে তাদের জন্য কাট অফ মার্কস কমানো হয়নি।
পিএসসি’র বক্তব্য, ওবিসি ‘এ’ এবং ‘বি’ ক্যাটাগরির ছেলেমেয়েরা উচ্চ মার্কস পেয়েছে। জেনারেল ক্যাটাগরির মতোই তাদের পারফরমেন্স ভালো হয়েছে। তাই সাধারণ কাট অফ মার্কস-এর ভিত্তিতেই তাদের নির্ধারিত কোটা পূর্ণ হয়েছে। সেই কারণে ওবিসি-এ ক্ষেত্রে কাট অফ মার্কস কমানোর আমরা কোনও প্রয়োজন বোধ করিনি।
উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের ডব্লিউবিসিএস (এক্সিকিউটিভ) প্রিলিমিনারি ২০২১ সালের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয় ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২। পরীক্ষার্থীদের শুধু রোল নম্বর প্রকাশ করা হয়েছে। নাম দেওয়া হয়নি। ৩ হাজার ৮৩৩ জনের ক্রমিক নম্বর প্রকাশ করেছে পিএসসি। পরীক্ষা হয়েছিল গত বছরের ২২ আগস্ট। মোট পরীক্ষার্থী ছিল প্রায় ২ লক্ষ।
নাম ব্যতিত শুধু নম্বর প্রকাশ করায় চিহ্নিত করা যাচ্ছে না এই তালিকার মধ্যে কত জন ওবিসি ‘এ’ বা ওবিসি ‘বি’ সুযোগ পেয়েছেন।
ওয়াকিফহাল মহলের মতে পিএসসি এক্ষেত্রে ওবিসি ‘এ’ এবং ওবিসি ‘বি’ পরীক্ষার্থীদের তাদের সাফল্যের পরিসংখ্যান সম্পর্কে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখেছে তারা সংরক্ষণ থেকে বেশি কিংবা সংরক্ষণের কোটা অনুযায়ী উত্তীর্ণ হয়েছে কী না, তা বোঝার সুযোগ পিএসসি’র কর্মকর্তারা রাখেননি।