কলকাতাSaturday, 4 September 2021
  1. আজকের শিরোনাম
  2. ইতিহাস-ঐতিহ্য
  3. ক্রাইম
  4. খেলা
  5. জেলা
  6. দেশ
  7. ধর্ম ও দর্শন
  8. পর্যটন
  9. ফোটো গ্যালারি
  10. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  11. বিজ্ঞান-প্রযুক্তি
  12. বিনোদন
  13. বিশ্ব-জাহান
  14. ব্লগ
  15. ভ্রমণ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

‘জালিয়ান ওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড শতবর্ষ’-কে শ্রদ্ধা জানিয়ে তথ্যচিত্র তৈরি করলেন বিশিষ্ট পরিচালক মুজিবর রহমান

asim kumar
September 4, 2021 6:10 pm
Link Copied!

             পুবের কলম প্রতিবেদক

জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে অন্যতম কুখ্যাত গণহত্যা। ১৯১৯ সালের ১৩ এপ্রিল অবিভক্ত ভারতের পঞ্জাব প্রদেশের অমৃতসর শহরে ইংরেজ সেনানায়ক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডায়ারের নির্দেশে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের বর্বরোচিত ঘটনাগুলির মধ্যে ‘জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড’ ইতিহাসের একটি কালো অধ্যায়। ১৬৫০ রাউণ্ড গুলি নিরস্ত্র মানুষের ওপর চালিয়ে ব্রিটিশ সরকার তার নৃশংসতা, ভয়কে মানুষের মধ্যে কায়েম রাখতে চেয়েছিল। জালিয়ান ওয়ালাবাগের ঘৃণ্য ও বর্বরোচিত হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রিটিশ সরকারের দেওয়া “নাইট” উপাধি ত্যাগ করেন। দিল্লির হাকিম আজমল খান তাঁর ‘মসিহ-উল-মূলক’ উপাধি এবং প্রথম শ্রেণীর ‘কাইসার-ই-হিন্দ’ স্বর্ণ মেডেল ব্রিটিশ সরকারকে ফেরত দেন।

সম্প্রতি সেই ‘জালিয়ান ওয়ালাবাগ’ হত্যাকাণ্ড নিয়ে এক তথ্যচিত্র তৈরি করলেন বিশিষ্ট চিত্র পরিচালক মুজিবর রহমান। একঘন্টার এই তথ্যচিত্রে উঠে এসেছে সেই দিনের ঘটনা সম্বলিত বহু তথ্য। ‘জালিয়ান ওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড শতবর্ষ’-কে শ্রদ্ধা জানিয়ে এই তথ্যচিত্র তৈরি হয়। ইউটিউব চ্যানেলে দেখানো হয় গত ১৪ আগস্ট, স্বাধীনতা দিবসের একদিন আগে। এই তথ্যচিত্র প্রোডিউস করেছে ভারত সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রকের, ভারত ইস্টার্ন জোনাল কালচারাল সেন্টার।

ফোনালাপে পুবের কলমের প্রতিনিধি’র সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত তথ্য জানালেন তথ্যচিত্রের পরিচালক মুজিবর রহমান।

মুজিবর সাহেব জানান, একঘন্টার তথ্যচিত্রের মাধ্যমে ‘জালিয়ান ওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড শতবর্ষ’-কে শ্রদ্ধা জানিয়ে এই ডকুমেন্টারি নির্মিত হয়েছে। এতে অংশ নিয়েছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি সুরঞ্জন দাস, প্রফেসর আমনদীপ বল, রাজশেখর বসু, সুস্নাত দাস প্রমুখ। তথ্যচিত্রে জালিয়ান ওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে থাকা, বিভিন্ন প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করেছেন তাঁরা। ছিলেন সুকুমার মুখার্জী। যিনি অমৃতসরের প্রবাসী বাঙালি। যাঁর দাদু একজন চিকিৎসক ছিলেন। জালিয়ান ওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের দিন সেই ঘটনাস্থলে ছিলেন তিনি। আরেকজন আছেন পাঞ্জাবি শারয়ান সিং। এছাড়াও আমরা আর্কাইভ থেকে বহু তথ্য, সেই সময়কার নিউজ রিল ব্যবহার করেছি। ২০২০ সাল থেকে কাজ শুরু হয়ে ২০২১’র ফেব্রুয়ারি তথ্যচিত্রের কাজ শেষ হয়। ১৪ আগস্ট সংস্কৃতি মন্ত্রকের ইউটিউব চ্যানেলে দেখানো হয়।

মুজিবর সাহেব জানান, জালিয়ান ওয়ালাবাগ নিয়ে তথ্যচিত্র তৈরির পিছনে আমরা চেষ্টা করেছি এই ঘটনার অন্তর্নির্হিত কারণ তুলে ধরতে। জালিয়ান ওয়ালাবাগ মানে প্রথম যে নামটি আমাদের মনে আসে সেটি হল জেনারেল ডায়ারের নাম। কিন্তু এই ঘটনা কি ছিল তাঁর মস্তিষ্ক প্রস্রুত! জেনারেল ডায়ার ৯০ জন সৈন্যকে গুলি চালনার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু জেনারেল ডায়ারকেও নির্দেশ দিয়েছিলেন কারা? সেই বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়েছে এই তথ্যচিত্রে। জেলারেল ডায়ারের মাথার ওপরে ছিলেন প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। যাঁদের অঙ্গুলিহেলনে এই কাজ ঘটেছিল।

ছিলেন মাইকেল ও’ ডায়ার। পঞ্জাব প্রদেশের লেফট্যানন্ট গভর্ণর ছিলেন। অফিস ছিল লাহোরে। কেন ইতিহাসে এই বর্বোরচিত ঘটনা ঘটিয়েছিলেন তারা? তাহলে বলতে হয়, তারা লক্ষ্য করেছিলেন সরকার ইন্ডিয়া সিকিউরিটি অ্যাক্ট-এর মাধ্যমে যে দমন-পীড়ন নীতি চালু করেছিল প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের পর, তাতে মানুষের মধ্যে ক্রমশই বিদ্রোহের আগুন জমতে শুরু করে। এর ফলসরূপ সেই সময় হিন্দু শিখ সম্প্রদায়ের মানুষ ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে একতা তৈরি হয়। এই দুটি সম্প্রদায়ের মধ্যের একতাকে ভয় পেতে শুরু করে ব্রিটিশ সরকার। তারা ঠিক করে নেয় যে করেই হোক এই একতা ভাঙতে হবে। সেই সময় এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ড. সৈফুদ্দিন কিচলু, ও ড. সত্য পাল। এই দুজনের নেতৃত্ব ব্রিটিশকে আরও ভয় পাইয়ে দেয়।

আরও একটি ঘটনা সামনে আসে। ৯ এপ্রিল রামনবমী বিরাটভাবে পালিত হয় অমৃতসরে। সেখানে হিন্দুদের সঙ্গে মুসলিমরাও অংশগ্রহণ করে। এই দুটি সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি ব্রিটিশ সরকারকে আরও চিন্তায় ফেলে দেয়। এর পরেই জমায়েত নিষিদ্ধ করে ইংরজরা। ১৩ এপ্রিল মিটিং ডাকে কংগ্রেস। আর সেখানেই সংঘটিত হয় জালিয়ান ওয়ালাবাগের নৃশংস হত্যাকাণ্ড। প্রায় হাজারের ওপর মানুষে মৃত্যু। নিজেদের সভ্য বলে তুলে ধরা ইংরেজদের এই বর্বরোচিত নৃশংস পদক্ষেপ নিতে হাত কাঁপেনি। আমাদের দেশের নিরস্ত্র মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

তার আগে ১৮৫৭ সালে মহাবিদ্রোহ। সেখানে হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে একতা সামনে আসে। সমস্ত কিছু ব্রিটিশ সরকারের মনে ভয় বাড়াতে থাকে। কাজেই নতুন করে হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে একতা তৈরি হোক, ব্রিটিশ সরকার সেটা চায়নি।

মুজিবর সাহেব জানান, এই তথ্যচিত্র ইতিমধ্যেই মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। দিল্লির একটি কলেজে এই তথ্যচিত্র দেখানো হয়েছে। এছাড়া ইংল্যান্ডের বিভিন্ন সংস্থা দেখেছে।

মুজিবর রহমান জানান, তাঁর কুড়ি বছরে জার্নিতে ইতিমধ্যেই ৫০ টা ডকুমেন্টারি তৈরি করেছেন তিনি। সাহিত্য, বায়োগ্রাফি, ইতিহাস-এর ওপর নির্ভর করেই তথ্যচিত্রগুলি নির্মাণ করে থাকেন তিনি।

এর পরেও তাঁর আরও একটি তথ্যচিত্রের কাজ শেষের পথে। ‘ভারত সরকারের স্বাধীনতার ৭৫ বছরের পূর্তি প্রকল্প।’ ‘স্বাধীনতা সম্পর্কযুক্ত ঘটনা’ সেই প্রকল্পে কাজ করছেন তিনি। ‘আজাদি অমৃতমহোৎসব’ প্রকল্পে ‘পলাশীর ষড়যন্ত্র’ নামে একটি তথ্যচিত্র নিয়ে কাজ চলছে। যা প্রায় সম্পূর্ণ হয়ে গেছে। পরিস্থিতি ঠিক থাকলে ইউটিউব চ্যানেল ছাড়া অফ লাইনে হয়তো দেখা যাবে এই তথ্যচিত্র। 

মুজিবর সাহেবের কথায়, তথ্যচিত্র ছাড়াও তিনি শর্ট ফিল্ম বানিয়ে থাকেন। এই শর্ট ফিল্ম-এর মাধ্যমে সমাজে সচেতনতার বার্তা দেওয়াই তাঁর মূল লক্ষ্য।