আহমদ হাসান ইমরান : শুক্রবার জুম্মার নামায আদায় করতে গিয়েছিলাম পার্ক সার্কাসের একটি বড় মসজিদে। অন্তত ৩ হাজার মুসল্লি এখানে জুম্মার নামায আদায় করেন। আমার ডান পায়ের হাঁটুতে চোট লাগায় কিছুদিন আমাকে চেয়ারে বসেই নামায আদায় করতে হবে। তাই একটু আগেই মসজিদে উপস্থিত হয়েছিলাম। সেজন্য সম্মানীয় ইমাম সাহেব প্রথমে উর্দুতে যে খুতবা দিলেন– তার পুরোটাই মিম্বরের সামনে বসে শুনতে পেলাম। ইমাম সাহেব দেখলাম ইসলাম এবং বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে ভালো রকম জ্ঞান রাখেন। ইল্ম-এর সঙ্গে তাঁর রয়েছে সমাজ সচেতনতা।
ইমাম সাহেব উর্দুতে বললেন– কলকাতায় পুরনির্বাচন হচ্ছে। আমাদের নওজওয়ানরা এতে উৎসাহভরে অংশ নিচ্ছেন। নাগরিক হিসেবে এটা তাদের কর্তব্য। কিন্তু আমি বলব– তাঁরা রাজনীতি করতে গিয়ে যেন এমন কিছু না করেন– যাতে আল্লাহ্ নজরে এবং মানুষের চোখে তাঁরা ছোট হয়ে যান। গণতন্ত্র হিংসার কথা বলে না। যেকোনও দলকে ইচ্ছা সমর্থন করুন। কিন্তু চেষ্টা করবেন যথাসম্ভব ন্যায় ও সত্যেকে সমর্থন করতে।
এরপর খুতবার মধ্যেই তিনি হাত তুলে দোয়া করলেন– হে আল্লাহ্ আমাদের মক্কা মুয়াজ্জমা ও নবীর শহর মদীনার তুমি হেফাজত কর।
ইসলাম-বিরোধী জালিম শক্তির হাত থেকে রক্ষা করো। ইমাম সাহেব আরও বললেন– যে রাষ্ট্রে আমাদের দুই পবিত্র স্থান রয়েছে– সেখান থেকে খুব খারাপ খবর আসছে। বাদশাহ-শাহজাদা এককথায় পুণ্যভূমির ‘শাসকরা’ ইসলাম-বিরোধী ও গুনাহ’র কাজে ব্যাপকভাবে লিপ্ত হচ্ছে। আর জনগণকেও সেইপথে চলার জন্য অনুপ্রাণিত করছে। তারা সউদি আরবে হলিউডের অনুকরণে অর্ধনগ্ন বেহায়া নাচ– কফি হাউসের নামে নাইট ক্লাব– তরুণ-তরুণীর একসঙ্গে ডান্স– সিনেমা দেখা– মাহরম-গায়ের মাহরম না মানা এগুলি চালু করেছে। মক্কা শরীফের প্রবেশদ্বার জেদ্দা শহরেও এগুলি চালু করা হয়েছে। রিয়াদ বা অন্য শহরে যা হচ্ছে– তা বর্ণনা না করাই ভাল। ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল– আন্তর্জাতিক মিউজিক কনসার্ট– পপ মিউজিক এগুলিকে অবাধ করা হয়েছে এবং হচ্ছে। রেড-সি এলাকায় গড়ে তোলা হচ্ছে আন্তর্জাতিক বেশকিছু পর্যটন ও বিনোদন শহর। সেখানে হলিউডের জীবনধারাকে ছাড়িয়েও এক সময়ের সাইগন বা ব্যাঙ্ককের মতো ‘পাপনগরী’ গড়ে তোলা হচ্ছে।
এ নিয়ে অনেকে আপশোস করছেন– শিকায়েত করছেন। কিন্তু শুধু নিন্দা করে কী হবে! এখানকার নওজওয়ানদের উচিত– অশ্লীলতা ও অশালীনতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। আমাদেরও উচিত যতটা পারি গণতান্ত্রিকভাবে এইসব পশ্চিমাবোধসম্পন্ন পরিবর্তনের বিরোধিতা করা। আল্লাহ্ নবীর একটি হাদীস রয়েছে– ‘যদি কোনও অন্যায় হতে দেখ– তবে হাত দিয়ে তা রুখে দাও। যদি তা না পার– তবে মুখের কথা দিয়ে তার প্রতিবাদ কর। আর যদি তাও করার হিম্মত তোমার না থাকে– সেক্ষেত্রে এই অন্যায়কে হৃদয়-মন দিয়ে ঘৃণা করো।’
ইসলামি মূল্যবোধ হল কল্যাণের মূল্যবোধ। তা আপনাকে শান্তি ও সৎ সমাজের দিকে নিয়ে যায়। আপনার মনে খোদা-ভীরুতার সৃষ্টি করে। তাই শয়তানি চক্র এগুলিকে টার্গেট করেছে। জায়নবাদীরা এখন আরব বিশ্বে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। আমাদের এগুলি বুঝতে হবে। তাই আমাদের হিন্দু-মুসলিম সকলের কাছে প্রকৃত ইসলামকে তুলে ধরতে হবে।
খুতবা শেষ করে দীর্ঘদেহী ইমাম সাহেব জুম্মার নামায শুরু করলেন। গুরুগম্ভীর সুললিত স্বরে সূরা ফাতিহার তিলাওয়াত সারা মসজিদে প্রতিধ্বনিত হতে থাকল।