পুবের কলম প্রতিবেদকঃ বৃহস্পতিবার বিকালে গোলপার্কে অবস্থিত রামকৃষ্ণ মিশন ইন্সটিটিউট অফ কালচারের সভাঘরে মানবিক মূল্যবোধ চর্চার গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা হয়। এই আলোচনাসভার আয়োজন করেছিল স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘ওয়েস্টার ইন্ডিয়া’ ও ‘ভ্যালু টুডে’ নামের একটি ম্যাগাজিন। সেই অনুষ্ঠানে অতিথি ও বক্তা হিসাবে উপস্থিত ছিলেন রামকৃষ্ণ মিশনের সম্পাদক স্বামী সুপর্ণানন্দজী মহারাজ, পুবের কলম-এর সম্পাদক ও রাজ্যসভার সাবেক সাংসদ আহমদ হাসান ইমরান, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধক ড. সৈয়দ নুরুস সালাম, চিকিৎসক বিজয় জেকভ, সাংবাদিক ঋত্বিক মুখোপাধ্যায়, সমাজকর্মী বনানী মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। এ দিন বিশিষ্ট অতিথিদের সংবর্ধিতও করা হয়। একইসঙ্গে বেশ কয়েকটি এনজিও’কে সম্মাননা প্রদান করা হয়।
এ দিনের অনুষ্ঠানে আহমদ হাসান ইমরান বলেন, আজকে মানবিক মূল্যবোধের সংকট দেখা দিয়েছে, তাই মানবিক মূল্যবোধ চর্চার গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনার প্রয়োজন হয়েছে। আগে ছোটবেলায় আমরা বৃদ্ধাশ্রম কথাটি শুনিনি। কিন্তু আমাদের সমাজে আজ অনেক বৃদ্ধাশ্রম তৈরি হয়েছে। ছেলেমেয়েরা বাইরে চাকরি করছে, বাবা-মাকে দেখার সময় পাচ্ছে না। তাই তারা পিতা-মাতাকে বৃদ্ধাশ্রমে রাখছেন। বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা সেখানে একা একা থাকেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলার কেউ নেই। তাঁদের জন্য টাকা পয়সা সবই দিচ্ছে সন্তানরা, কিন্তু সময় দিতে পারছে না। এমনই একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কেরলে অনেক আগে থেকেই বহু বৃদ্ধাশ্রম কালচার দেখা দিয়েছিল, বর্তমানে কলকাতাতেও তা শুরু হয়েছে। আজকাল বাবা ও মা দিবস পালন করতে হচ্ছে। আমি এর বিপক্ষে নই, তবে পিতা-মাতাকে দেখভাল করা তো সন্তানেরই দায়িত্ব। তিনি উল্লেখ করেন, মায়ের পায়ের তলে জান্নাত। মায়ের সেবা করার মাধ্যমেই সন্তানরা স্বর্গে যাবেন।
আহমদ হাসান ইমরান আরও বলেন, সমাজ ও সংসারে মুল্যবোধ পরিবর্তিত হচ্ছে। আগে শাশুড়ি-বউমার মধ্যে ভালো সম্পর্ক থাকত, বর্তমানে তা হারিয়ে যাচ্ছে। আমরা পশ্চিমা সংস্কৃতির দিকে ঝুঁকছি। তিনি উল্লেখ করেন, পশ্চিমা দেশগুলিতে ফের মূল্যবোধ ফিরে আসছে। মূল্যবোধ না থাকার ফলে সমাজে খুন, ধর্ষণ ও রাহাজানির মতো ঘটনা ঘটছে। মূল্যবোধ চর্চার মধ্য দিয়েই সমাজে শান্তি-সম্প্রীতি বজায় থাকবে, তাই মুল্যবোধের চর্চা জরুরি বলেও উল্লেখ করেন আহমদ হাসান ইমরান।
ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে মানবিক মূল্যবোধ চর্চার গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করেন স্বামী সুপর্ণানন্দজী মহারাজ। তিনি বেশ কয়েকটি ঘটনা উপস্থিত শ্রোতা-দর্শকদের সামনে উল্লেখ করেন। মানবিক মূল্যবোধ ছাড়া জীবনের কোনও সার্থকতা নেই, তাই মুল্যবোধ চর্চার প্রয়োজন আছে বলে উল্লেখ করেন স্বামী সুপর্ণানন্দজী মহারাজ। নুরুস সালাস সমাজের সব স্তরের মানুষকে গুরুত্ব প্রদান ও স্বীকৃতির কথা উল্লেখ করেন। আয়োজক সংস্থার পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন ডা. জাকির হোসেন লস্কর। তিনি বলেন, সব ধর্মেই উচ্চারিত হয়েছেন মানুষের কথা ও মানবসেবার কথা। দেশ-কাল ও সীমানার ভেদ ছাড়াই অন্যদের পাশে দাঁড়াতে হবে।