পুবের কলম ওয়েবডেস্কঃ উত্তরপ্রদেশ– মহারাষ্ট্র– কর্ণাটক– বিহার– অন্ধপ্রদেশ ও তেলঙ্গানার সারিতে কি নাম লেখাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গও? দীর্ঘ ৫২ বছর বাদে ফের পুনরুজ্জীবন ঘটছে বিধান পরিষদের? বিধানসভা সূত্রে খবর– আসন্ন অধিবেশনেই দলের নির্বাচনী ইস্তেহারে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে বিধান পরিষদ গঠন সংক্রান্ত বিল পেশ করা হতে পারে। সোমবারই বিধানসভার আসন্ন অধিবেশনে কীকী বিল আনা হবে– তা নিয়ে বিজনেস অ্যাডভাইজরি (বিএ) কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা। ওই বৈঠকেই সরকার পক্ষের তরফে বিধান পরিষদ সংক্রান্ত বিল পেশ করার প্রস্তাব রাখা হতরে পারে। যদিও পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বিজনেস অ্যাডভাইজরি কমিটির বৈঠকের আগে এ বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি।
সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা ভোটের প্রার্থী তালিকা প্রকাশের সময়েই দলের বেশ কয়েকজন প্রবীণ বিধায়ক ও মন্ত্রীকে বাদ দেওয়ার সময়েই তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন– ‘বাদ যাওয়া নেতামন্ত্রীদের সম্মান দিয়েই বিধান পরিষদের সদস্য হিসেবে ফিরিয়ে আনা হবে।’ তৃণমূলের ইস্তাহারেও বিধান পরিষদ গঠনের প্রতিশ্রুতি রাখা হয়েছিল। রাজ্যে নয়া সরকার গঠনের পরে গত ১৭ মে মন্ত্রিসভার দ্বিতীয় বৈঠকে বিধান পরিষদ গঠনের সিদ্ধান্তে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। তাই এ বিষয়ে দেরী না করে বিধানসভার প্রথম অধিবশেনেই বিধান পরিষদ সংক্রান্ত বিল আনার বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছে শাসক দল।
ভারতীয় সংবিধানের ১৭১ নম্বর ধারা অনুযায়ী– পশ্চিমবঙ্গে নতুন করে বিধান পরিষদ গঠন হলে তার সর্বোচ্চ সদস্য সংখ্যা হবে ৯৮। আর সর্বনিম্ন সদস্য সংখ্যা হবে ৪০। রাজ্যসভার মতোই বিধান পরিষদেরও কার্যকাল ৬ বছর এবং প্রতি ২ বছর অন্তর এক তৃতীয়াংশ সদস্যের অবসর নেওয়া বাধ্যতামূলক। সংসদের উচ্চকক্ষের মতোই অর্থ বিল ছাড়া যে কোনো বিল বিধান পরিষদে আনা যায়। বিধান পরিষদে নির্বাচিত হয়েও রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য হওয়া যায়। প্রতি ৬ বছর অন্তর বিধান পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আর প্রতি ২ বছর অন্তর বিধান পরিষদের এক তৃতীয়াংশ সদস্য অবসর নেবেন। এই নির্বাচন হবে কয়েকটি ভাগে। এক তৃতীয়াংশ সদস্য নির্বাচিত করবেন রাজ্যের বিধায়করা। এক তৃতীয়াংশ সদস্য নির্বাচন করবেন পঞ্চায়েত– পুরসভা– পুরনিগমের সদস্যরা। এক ষষ্ঠাংশ সদস্য নির্বাচিত হন রাজ্যের স্নাতকদের েভাটের মাধ্যমে। তবে স্নাতকভোটারদের অবশ্যই ৩ বছরের বেশি রাজ্যে বসবাস করতে হবে। বাকি এক ষষ্ঠাংশ নির্বাচিত হন শিক্ষকদের েভাটে। এই ভাোটার শিক্ষকদেরও সংশ্লিষ্ট রাজ্যে ৩ বছরের বেশি বসবাস করতে হয়।
স্বাধীনতার পরেও অবশ্য রাজ্যে বিধান পরিষদ সক্রিয় ছিল। কিন্তু হাতি েপাষার অজুহাত দিয়ে ১৯৬৯ সালের ২১ মার্চ যুক্তফ্রন্ট সরকার রাজ্যে বিধান পরিষদ বিলুপ্ত করার প্রস্তাব পেশ করে বিধানসভায়। সেই প্রস্তাব পাশ হয়। ১৯৬৯ সালের ১ অগস্ট পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা থেকে বিলুপ্ত হয় বিধান পরিষদ। ফের রাজ্যে ২০১১ সালে ক্ষমতার পালাবদলের পরে বিধান পরিষদ ফেরানো নিয়ে চর্চা শুরু হয়। কিন্তু নানা কারণে তা হয়ে ওঠেনি।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন– রাজ্য সরকার চাইলেও রাজ্যে রাতারাতি বিধান পরিষদ গঠন সম্ভব নয়। প্রথমত বিধানসভায় এ সংক্রান্ত বিল পাস হওয়ার পরে তা েলাকসভা ও রাজ্যসভায় পেশ করা হবে। সংসদের দুই কক্ষেই বিলটিকে অনুমোদন পেতে হবে। তার পর রাষ্টÉপতি স্বাক্ষর করলে– তবেই তা রাজ্যে কার্যকর হবে। তাই এই প্রক্রিয়া কিছুটা হলেও সময়সাপেক্ষ। বর্তমানে যেহেতু সংসদের দুই কক্ষেই তৃণমূলের প্রবল শত্র& বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ’র নিরঙকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে– ফলে রাজ্য বিধানসভায় বিধান পরিষদ সংক্রান্ত বিল পাস হলেও তা আইনে কার্যকর হওয়া খুব একটা সহজসাধ্য হবে না।