তিরুঅনন্তপুরম, ৩১ ডিসেম্বরঃ ‘মিনি পাকিস্তান’ হয়ে উঠেছে কেরল। আর সেই ‘সন্ত্রাসী’দের ভোটে জিতেই সাংসদ হয়েছেন রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধি। সম্প্রতি এমন মন্তব্য করে জাতীয় রাজনীতিতে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিলেন মহারাষ্ট্রের মন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা নীতেশ রানে। আর এই নিয়েই এবার নীতেশ রানাকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করলেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনরাই বিজয়ন।
বিজেপির মন্ত্রীর এই মন্তব্য সংঘের মানসিকতার প্রতিফলন বলে কটাক্ষ করেছেন বিজয়ন। বিজয়ন বলেছেন, ধর্মনিরপেক্ষ ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির রাজ্য কেরলের বিরুদ্ধে সংঘের ঘৃণ্য মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ এটি। এরপরই বিজেপি ও আরএসএসের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে রাজ্যের প্রতি সঙ্ঘ পরিবারের দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। যেখানে বিজেপি সমর্থন পায়নি, সেই জায়গাগুলিকে তারা বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এ জন্য তারা ঘৃণা ও বিভাজনমূলক প্রচার চালাতেও পিছপা হচ্ছে না।
এটাই তাদের কৌশল। এই ধরনের মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ সাংবিধানিক মূল্যবোধের পরিপন্থী। কেরলের মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘মহারাষ্ট্রের মৎস্যপালন ও বন্দরমন্ত্রী নীতেশ রানে কেরলকে মিনি পাকিস্তান বলে মন্তব্য করেছেন। তাঁর এই মন্তব্য অত্যন্ত অপমানজন, নিন্দনীয় ও দুর্ভাগ্যজনক।
এমন মন্তব্য ধর্মনিরপেক্ষ ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির গড় হিসেবের পরিচিত কেরলের বিরুদ্ধে সংঘের ঘৃণ্য মানসিকতাকে তুলে ধরে। শুধু তাই নয়, যেখানে বিজেপি সমর্থন পায়নি, সেই জায়গাগুলিকে তারা বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এ জন্য তারা ঘৃণা ও বিভাজনমূলক প্রচার চালাতেও পিছপা হচ্ছে না। এটাই তাদের কৌশল। কেরলের বিরুদ্ধে এই ঘৃণ্য মন্তব্যের কড়া ভাষায় নিন্দা জানাই।
এবং গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিগুলিকে সংঘের বিরুদ্ধে একজোট হওয়ার আবেদন জানাচ্ছি।’ মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, ‘যে মন্ত্রী এই ধরনের মন্তব্য করেন, তিনি কি আদৌ মন্ত্রী পদে থাকার যোগ্য?’ এর আগে মহারাষ্ট্রের সপা নেতা আবু আজমি তীব্র সমালোচনা করেন রানের। তিনি বলেন, নীতেশ রানে অত্যন্ত হীন ব্যক্তি। ওঁর কাজই হল ঘৃণা ভাষণ দেওয়া। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী চাইলে ওঁর জন্য এমন একটি মন্ত্রক তৈরি করতে পারেন যার কাজই হবে দেশে ঘৃণা ছড়ানো। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ রয়েছে, কেউ ঘৃণা ভাষণ ছড়ালে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার। আমাদের সরকার কি নপুংসক হয়ে গিয়েছে?
না হলে কেন এর বিরুদ্ধে এখনও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। সম্প্রতি মহারাষ্ট্রের পুরন্দরে এক জনসভায় বত্তৃ«তা করতে গিয়ে নীতেশ বলেন, ‘‘কেরল একটি ‘মিনি পাকিস্তান’! সেই কারণেই সেখানে জিতেছেন রাহুল আর প্রিয়ঙ্কা। সব সন্ত্রাসী তাঁদের ভোট দিয়েছে।’’ পরে অবশ্য বিরোধীদের সমালোচনার মুখে পড়ে নীতেশের সাফাই, কেরলে হিন্দুদের ধর্মান্তরীকরণ এবং লভ-জিহাদের বিষয়টিকে তুলে ধরতেই তিনি ওই মন্তব্য করেছিলেন। কেরল ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
কিন্তু হিন্দুদের ক্রমহ্রাসমান জনসংখ্যা খুবই উদ্বেগের বিষয়। কেরলে বহু হিন্দু খ্রিস্টান আর মুসলমান হয়ে যাচ্ছে। লভ-জিহাদের ঘটনাও বাড়ছে। সে কারণেই পাকিস্তানের সঙ্গে পরিস্থিতির তুলনা টেনেছিলেন তিনি। যদিও তাঁর এই সাফাইয়ের পালটা কংগ্রেসের মুখপাত্র অতুল লন্ধে বলেছেন, ‘‘দেশের একতা ও অখণ্ডতা বজায় রাখার শপথ নিয়ে মন্ত্রী হয়েছেন নীতেশ রানে। অথচ তাঁরাই কেরলকে মিনি পাকিস্তান বলে ডাকছেন। এই ব্যক্তির কি মন্ত্রিসভায় থাকার কোনও অধিকার আছে?’’