Pahalgam Terror Attack: ভূ-স্বর্গে প্রাণ হারানো সমীর গুহ-র বাড়িতে এল কফিন সঙ্গে শোকস্তব্ধ স্ত্রী ও কন্যা

- আপডেট : ২৪ এপ্রিল ২০২৫, বৃহস্পতিবার
- / 90
পরিবারকে ফোন করে সমবেদনা জানালেন মুখ্যমন্ত্রী
সাহানারা খাতুন: বেহালা পশ্চিমের বড়িশা অঞ্চলের ১২৬ নং ওয়ার্ডের ঊষা অ্যাপার্টমেন্টে ৬৯/৭ জগৎ রায়চৌধুরি রোড, কলকাতা ৭০০০০৮-এর বাসিন্দা সমীর গুহ পহেলগাঁওতে জঙ্গিদের গুলিতে (Pahalgam Terror Attack) প্রাণ হারিয়েছেন স্ত্রী ও একমাত্র কন্যার সামনে। স্ত্রী ও কন্যাকে নিয়ে কাশ্মীর বেড়াতে যান সমীর গুহ। গত ১৬ তারিখ তিনি (৫৪), স্ত্রী (শবরী গুহ, ৪৫) (কন্যা-১৭) কাশ্মীরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। পরিবার নিয়ে বেড়াতে যাওয়া তাঁর নেশা ছিল বলে জানালেন, তাঁর একমাত্র শ্যালক। সমীরবাবুর ফেরার কথা ছিল ২৩ এপ্রিল। সমীর গুহের শ্যালক জানান, ২২ এপ্রিল সন্ধ্যা থেকে ফোনে আর কোনওরকম যোগাযোগ হয়নি, তখন থেকেই বেহালার এই পরিবারটির লোকজন চিন্তিত ছিলেন।
রাত তিনটে নাগাদ পহেলগাঁও থেকে গাড়ির ড্রাইভার পরিচয় দিয়ে একজনের ফোন আসে এবং তারা জানতে পারেন তাদের জামাইবাবু অর্থাৎ সমীর গুহ আর নেই। হঠাৎ এমন এক মারাত্মক ঘটনায় সবকিছু ওলোট-পালট হয়ে যায়। ড্রাইভারের পাশ থেকে দিদি ও ভাগ্নির কান্না ভেসে আসে। আর্তনাদ শুনে ভিডিয়ো কল করে দিদির সঙ্গে তিনিও খবরের বাকি অংশ শুনতে পান। (Pahalgam Terror Attack) সমীর বাবুরা আকস্মিক গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর কোনওরকম চিকিৎসার সুযোগ পেয়েছেন কি না, কতক্ষণ পর্যন্ত প্রাণটুকু ছিল সেইটুকুও বলার মতো অবস্থায় দিদি ও ভাগ্নি ছিল না বলে জানান সমীরবাবুর শ্যালক। এদিন রাতেই সমীরবাবুর কফিনবন্দী দেহ-সহ তাঁর স্ত্রীও কন্যা ফিরে এসেছেন। তাঁদের বাড়িতে গিয়ে সমবেদনা জানান মেয়র ও মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ও মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস।
আরও পড়ুন: Pahalgam Terror Attack: সন্ত্রাসবাদের কোমর না ভাঙা পর্যন্ত বিশ্রাম নেবে না ভারত: কড়া হুঁশিয়ারি মোদির
সমীর গুহ ছিলেন একজন নম্র, বিনয়ী, শান্ত স্বভাবের মানুষ। তিনি এনএসএস অর্থাৎ ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিক্যাল সার্ভেতে যুক্ত ছিলেন। উচ্চপদস্থ অফিসার ছিলেন তিনি। ২০১৯ সালে তিনি তাঁর বেহালার এই অঞ্চলের ফ্ল্যাটে আসেন। তার আগে তিনি রাজ্যের বাইরে বিভিন্ন জায়গায় কর্মরত ছিলেন। প্রথমে দু’দিন দিল্লি থেকে তারপর কাশ্মীর যান তাঁরা। একমাত্র মেয়ের আইএসসি পরীক্ষার পর কাশ্মীর ভ্রমণ ছিল সমীরবাবুর ইচ্ছা, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেখানেই তাঁর জীবন দিতে হল। দুপুরের ফ্লাইটে শ্রীনগরে এসে রাত আটটায় কলকাতা বিমানব¨রে নামার কথা ছিল সমীরবাবুদের। প্রতিবেশী অধ্যাপক পার্থ চক্রবর্তী, অধ্যাপক স্বপন কুমার দাস, বিমান গুহ ঠাকুরতা-রা জানালেন তাঁর মতো এমন মানুষ এ অঞ্চলে কম আছেন। যেমন মিষ্টি স্বভাব তেমন সৎ মানুষ ছিলেন সমীর গুহ। পাড়ায় বিজয় সংঘ ক্লাবে পুজোর সময় অনেকটা সময় দিতেন সমীর গুহ। পরিবার ও প্রতিবেশীদের নিয়ে তিনি থাকতে ভালোবাসতেন। বেহালার কদমতলায় তাঁর শ্বশুরবাড়ি। সেখানে শ্বশুর-শাশুড়ি ও শ্যালকের পরিবার থাকেন। শ্যালক কান্না থামিয়ে জানালেন, রাত তিনটের সময় ড্রাইভারের ফোনে কথা বলার পর ভিডিয়ো কলে দিদির আর্তনাদের সঙ্গে একটাই কথা বললেন, ‘এক লহমাতে সব শেষ’।
আরও পড়ুন: Pahalgam Terror Attack: ল’ বোর্ডের সমস্ত প্রগাম ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত স্থগিত
বুধবার সকাল ১১ টা নাগাদ কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম এসেছিলেন সমীরবাবুর ফ্ল্যাটে। শোকস্তব্ধ পরিবারের সঙ্গে তিনি কথা বলেন ও সান্ত্বনা দেন। সঙ্গে ছিলেন বেহালা পূর্বের বিধায়ক রত্না চ্যাটার্জি, বোরো চেয়ারম্যান সুদীপ পোল্লে। লোকাল কাউন্সিলর ঘনশ্রী বাগ। সমীরবাবুর শ্যালককে ফোন করে সমবেদনা জানান রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সমীরবাবুর মৃতদেহ ও তাঁর স্ত্রী ও মেয়েকে বেহালার বাড়িতে ফেরানোর সমস্ত দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন বলে জানান সমীরবাবুর শ্যালক।
আরও পড়ুন: Pahalgam Terror Attack: পাকিস্তানকে উচিত শিক্ষা দেওয়া শুরু ভারতের
কাশ্মীরে জঙ্গি হানায় (Pahalgam Terror Attack) নিহত বিতান অধিকারী। ফ্লোরিডাবাসী বিতানের বাড়ি বৈষ্ণবঘাটায়। বিদেশ থেকে ফিরে সপরিবারে বেড়াতে গিয়েছিলেন। মঙ্গলবার জঙ্গিদের গুলিতে নিহত হন।খবর পেয়ে তাঁর বৈষ্ণবঘাটার বাড়িতে যান মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। তাঁর ফোন থেকেই কাশ্মীরে স্বামীর মরদেহের পাশে থাকা সোহিনীর সঙ্গে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই চরম বিপদের দিনে সঙ্গে আছেন, জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। যা যা করণীয়, রাজ্য সরকার করছে বলে আশ্বাস দেন তিনি। এদিন অপর এক নিহত বিতান অধিকারীর পাটুলির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় তাঁর বৃদ্ধ বাবা মা সেখানে সেই বাড়িতে নেই। পুত্রের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে তাঁরা এতটাই বিমর্ষ হয়ে পড়েন, তাঁদের এক আত্মীয়র বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রতিবেশীরা জানান এই পরিবারটি প্রবাসী খুব বেশিদিন হয়নি তাঁরা এখানে এসেছেন।