পুবের কলম প্রতিবেদক: জেপিসির ইতিহাসে বিরল ঘটনা। ওয়াকফ আইন সংশোধনী ২০২৪-এর পর্যালোচনা করার জন্য এক যৌথ সংসদীয় কমিটি বা জেপিসি গঠন করা হয়েছে। এখন থেকে অবস্থা সরেজমিনে খতিয়ে দেখার জন্য ওয়াকফ সম্পর্কিত জেপিসি যে সফর বা ট্যুর প্রোগ্রাম তৈরি করেছিল, জেপিসিতে বিরোধী দলগুলির সাংসদরা তা বয়কট করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আজ কলকাতা প্রেস ক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ কথা জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ থেকে জেপিসি-র সদস্য সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
উল্লেখ্য, জেপিসি-র সাংসদদের পরবর্তী সফর প্রোগ্রাম শুরু হচ্ছে ৯ নভেম্বর ২০২৪। সেদিন জেপিসি-র চেয়ারম্যান জগদম্বিকা পালের নেতৃত্বে ওয়াকফ সম্বন্ধিয় ওই সংসদীয় কমিটি র গুয়াহাটি সফর শুরু করার কথা। এই কমিটি পশ্চিমবঙ্গে আসবে ১২ নভেম্বর, ২০২৪।
এরপর তারা যাবেন ভুবনেশ্বর। যেহেতু জেপিসি-র ট্যুর প্রোগ্রাম বিরোধী দলের সব সাংসদ (কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, মিম, এসপি প্রভতি রাজনৈতিক দল) বয়কটের ঘোষণা দিয়েছেন তাই জেপিসি-র পশ্চিমবঙ্গ সফরের সময় তৃণমূল কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলির কেউই সংসদীয় কমিটির কলকাতা বৈঠকে থাকবেন না।
READ MORE: সুফি স্কলার ডঃ সৈয়দ শাহ খুসরো হুসাইনীর ইন্তেকাল
এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, জেপিসি-র চেয়ারম্যান জগদম্বিকা পাল জেপিসি-র ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত যে নিয়ম-নীতি, ঐতিহ্য রয়েছে তার কিছুই মানছেন না। ট্যুর প্রোগ্রামের জন্য বিরোধী দলগুলির সাংসদদের সঙ্গে কোনও পরামর্শ করা হচ্ছে না। বিরোধী দলগুলির সাংসদ সদস্যদের কথা বলার সময় দেওয়া হচ্ছে না।
যারা ওয়াকফ সম্পর্কে কিছুই জানেন না, এমন গেরুয়াপন্থী দল ও ব্যক্তিবর্গকে শুনানির জন্য কমিটিতে ডাকা হচ্ছে। সমস্ত বিষয়ে তাড়াহুড়ো করে জগদম্বিকা পাল মহাশয় স্বেচ্ছাচারিতা চালাচ্ছেন এবং কারও সঙ্গেই পরামর্শ করছেন না।
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিক সম্মেলনে আরও বলেন, বিরোধী দলগুলির সাংসদদের আরও একটি ক্ষোভ এবং অসুবিধার কারণ হল, ওয়াকফ সম্পর্কিয় জেপিসি-র সংসদের পরবর্তী অধিবেশনে রিপোর্ট পেশ করার প্রতিজ্ঞা নিয়ে চেয়ারম্যান জগদম্বিকা পাল এবং যৌথ কমিটির বিজেপি সদস্যরা খুবই তাড়াহুড়ো করছেন।
তাঁরা সপ্তাহে দু’দিন করে জেপিসি-র বৈঠক রেখেছেন এবং তা চলে সকাল ১০-১১টা থেকে রাত্রি ৮টা পর্যন্ত। জেপিসি-র সাংসদরা আরও অনেক সংসদীয় কমিটির সদস্য। তাঁরা সেইসব দায়িত্বপূর্ণ কমিটির বৈঠকে যেতেই পারছেন না।
এছাড়া ট্যুর প্রোগ্রামও কারও সঙ্গে পরামর্শ না করে এমন ভাবে রাখা হয়েছে, যার ফলে বিরোধী দলের সদস্যরা ওয়াকফ নিয়ে স্টাডি করার সময়ই পাচ্ছেন না। তাহলে জেপিসি-তে আমরা কী করে বক্তব্য রাখব বা পরামর্শ দেব? আর যে ট্যুর প্রোগ্রাম তৈরি করা হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে বিজেপি রাজ্যগুলিতে জেপিসি বৈঠকে প্রচুর সময় বরাদ্দ করা হয়েছে।
আর কংগ্রেস বা তৃণমূল কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলিতে সময় দেওয়া হচ্ছে খুবই কম। যেমন, ১২ নভেম্বর, ২০২৪ জেপিসি-র কলকাতা সফরে সময় বরাদ্দ হয়েছে মোটামুটি সাড়ে ৪ ঘণ্টা। এর মধ্যে আবার ঝাড়খন্ডের বক্তব্যও শোনা হবে। কল্যাণ বলেন, কাজেই বোঝা যায় জেপিসি বিশেষ এক এজেন্ডা নিয়ে কাজ করছে।
তিনি আরও বলেন, চেয়ারম্যান জগদম্বিকা পালের একপেশে মনোভাব ও স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ে স্পিকার ওম বিড়লার সঙ্গে বিরোধী দলগুলি সাংসদরা ৩ নভেম্বর, ২০২৪ সাক্ষাৎ করে। ওম বিড়লা বলেছিলেন, এত তাড়াহুড়ো করা ঠিক নয় এবং জেপিসি-র ট্যুর প্রোগ্রামটি স্থগিত করার জন্য তিনি জেপিসি-র চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলবেন। কিন্তু তা আজ পর্যন্ত স্থগিত করা হয়নি।তাই জেপিসি-র অন্তর্ভুক্ত বিরোধী দলগুলি ট্যুর প্রোগ্রাম বয়কট করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।