পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: সংবিধান প্রণেতা বি আর আম্বেদকরের নাম করে সংসদে ‘আসম্মানজনক’ মন্তব্য করেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর। আর তা নিয়েই বুধবার উত্তাল হল সংসদ। সংসদে কংগ্রেস সহ ইন্ডিয়া জোটের সমস্ত শরিক দলের সাংসদরা তো প্রতিবাদ জানানই, পাশাপাশি কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতাও। একযোগে শাহকে নিশানা করেছেন তাঁরা। বিরোধীরা একজোট হয়ে সরব হতেই শাহর হয়ে পালটা ময়দানে নামেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
আসলে মঙ্গলবার রাজ্যসভায় সংবিধান নিয়ে আলোচনা চলাকালীন কংগ্রেসকে আক্রমণ করে অমিত শাহ বলেছিলেন, ‘এখন একটা ফ্যাশন হয়েছে—আম্বেদকর, আম্বেদকর, আম্বেদকর, আম্বেদকর। এতবার যদি ভগবানের নাম নিত, তাহলে সাত জন্ম পর্যন্ত স্বর্গে জায়গা পেয়ে যেত।’ শাহর এই মন্তব্যের পরই ক্ষোভে ফেটে পড়ে কংগ্রেস সহ বিরোধী দলগুলি।
তাদের বক্তব্য, এই ধরনের মন্তব্য করে আম্বেদকরকে অসম্মান করেছেন শাহ। আম্বেদকর দলিত ছিলেন বলেই তাঁকে এই অসম্মান? শাহ কি বোঝাতে চেয়েছেন দলিত নাম মুখে আনলে স্বর্গ মেলে না? আর এইসব নিয়েই যখন বুধবার সংসদে বিরোধীরা প্রতিবাদের ঝড় তুলছে তখন বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেন মমতা বও।
বিরোধীদের দাবি, এই ‘ফ্যাশন মন্তব্যের’ জন্য অমিত শাহকে ক্ষমা চাইতে হবে। আর তৃণমূল সুপ্রিমো নিজের অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডেলে একটি দীর্ঘ পোস্ট করেন। যার শিরোনাম – ‘মুখোশ খুলে গিয়েছে!’ সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘‘একদিকে যখন সংবিধান প্রণয়নের গৌরবোজ্জ্বল ৭৫টি বছর উদযাপন করা হচ্ছে, ঠিক সেই আবহেই সংবিধান প্রণেতা ড. বাবাসাহেব আম্বেদকরের চরম অপমান করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ!
তিনি বাবা সাহেবের বিরুদ্ধে চরম অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন। এবং সেই মন্তব্য করা হয়েছে ভারতের ‘গণতন্ত্রের পীঠস্থান’ হিসাবে পরিচিত সংসদ ভবনের অন্দরে! এটা বিজেপির বর্ণবাদী ও দলিত বিরোধী মানসিকতার প্রদর্শন।
২৪০টি আসন পেয়েই যদি বিজেপি এমন দলিতবিরোধী আচরণ করতে পারে, তাহলে তারা যদি সত্যিই গত লোকসভা নির্বাচনে তাদের ‘৪০০ পার’-এর টার্গেট পূরণ করত, তাহলে কতটা ক্ষতি করত তা কল্পনা করুন। ওরা আম্বেদকরের অবদানকে সম্পূর্ণভাবে মুছে ফেলার জন্য ইতিহাসের পুনর্লিখন করবে। অমিত শাহর মন্তব্য লক্ষাধিক মানুষের জন্য অপমান যারা পথনির্দেশ ও অনুপ্রেরণার জন্য বাবাসাহেবের দিকে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু, যে দল ঘৃণা ও ধর্মান্ধতাকে আষ্টেপিষ্টে গ্রহণ করেছে তাদের থেকে আর কী বা আশা করা যায়।
ড. বাবাসাহেব আম্বেদকর হচ্ছেন সংবিধানের জনক। এই আপত্তিকর মন্তব্যটি শুধুমাত্র তাঁকে (আম্বেদকর) নয় বরং সংবিধানের খসড়া কমিটির প্রত্যেক সদস্যের উপর আক্রমণ, যেখানে যেখানে দেশের নানা প্রান্তের সমস্ত সম্প্রদায়, ধর্ম, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির মানুষের প্রতিনিধিত্ব ছিল। যা কিনা ভারতের ‘বৈচিত্রে ঐক্য’-এর আদর্শকেই প্রতিফলিত করে।’’ মমতা বলেছেন, বিজেপি যে কেবলই জাতপাতের রাজনীতি করে এবং দেশের দলিত সম্প্রদায়কে সহ্য করতে পারে না, আরও একবার তারই প্রমাণ দিয়েছেন অমিত শাহ।
কংগ্রেস সাংসদ মল্লিকার্জুন খাড়গে সরাসরি শাহর পদত্যাগ দাবি করেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লেখেন, ‘তিনি (শাহ) বাবা সাহেব আম্বেদকর এবং সংবিধানকে অপমান করেছেন। মনুস্মৃতি তাঁর আদর্শ। এটা স্পষ্ট যে তিনি বাবা সাহেব আম্বেদকরের সংবিধানকে সম্মান করতে চান না। আমরা এর নিন্দা করছি এবং তাঁর পদত্যাগ দাবি করছি। দেশের মানুষের কাছে তাঁর ক্ষমা চাওয়া উচিত।’
যদিও এই বিতর্কের মধ্যে শাহর পাশে দাঁড়িয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, ‘‘কংগ্রেস এবং তার পচা বাস্তুতন্ত্র যদি মনে করে যে তাদের দূষিত মিথ্যা এত বছরের অপকর্মকে লুকিয়ে রাখতে পারবে, বিশেষ করে বাবাসাহেব আম্বেদকরকে অমর্যাদা করার ক্ষেত্রে, তাহলে তারা বড় ভুল করছে। দেশবাসী বারবার দেখেছে, কীভাবে একটি পরিবারের নিয়ন্ত্রিত একটা দল বাবাসাহেব আম্বেদকরের পরম্পরাকে নিশ্চিহ্ন করার নোংরা কৌশলকে উৎসাহিত করেছে। তফসিলি জাতি ও উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষকে অপমান করে।
আমরা এখন যা হয়েছি, তা বাবাসাহেব আম্বেদকরের জন্য। বাবাসাহেব আম্বেদকরের লক্ষ্য পূরণে গত এক দশক ধরে আমাদের সরকার অক্লান্ত পরিশ্রম করছে। পাঁচতীর্থের উন্নয়নে কাজ করছে সরকার। বাবাসাহেব আম্বেদকরের সঙ্গে সম্পর্কিত এই পাঁচটি স্থান। চৈত্য ভূমির জমি নিয়েও দীর্ঘদিন সমস্যা ছিল। তার সমাধান করা হয়েছে। দিল্লির ২৬ আলিপুর রোডে যেখানে তিনি শেষজীবন কাটিয়েছিলেন, সেই বাড়িটি সংস্কার করা হয়েছে। লন্ডনে যে বাড়িতে থাকতেন, তাও কেন্দ্রীয় সরকার নিজেদের দখলে নিয়েছে।’’