Fri, September 20, 2024

ই-পেপার দেখুন
logo

ছাদ হারিয়ে অসহায় মাথায় ছাতির কারিগর শামীম আহমেদ


Bipasha Chakraborty   প্রকাশিত:  ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ০৯:১৭ পিএম

ছাদ হারিয়ে অসহায় মাথায় ছাতির কারিগর শামীম আহমেদ

 

দেবশ্রী মজুমদার, রামপুরহাট: ছাদ হারিয়ে অসহায় বর্ষার ছাতির কারিগর শামীম আহমেদ। বাড়ি রামপুরহাট পুরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ডের ওল্ড বিডিও অফিসের গলিতে।  রামপুরহাট দেশবন্ধু রোডে  জেলখানার গা লাগোয়া তিন পুরুষের সাবেকি ছাতার ব‍্যবসা শামীম আহমেদ পরিবারের। এক সন্ধ্যার মাইকিংয়ে শেষ হয়ে গেল তাদের জাত ব‍্যবসার ভবিষ্যৎ। 
ছোটতে অনেকেই পড়েছে,  ‘বর্ষাসাথী আমার ছাতি আজকে তুমি নাই, যাচ্ছে ফাটি বুকের ছাতি তোমার শোকে ভাই’। সেই ছাতার সঙ্গে শামীমদের তিন পুরুষের সম্পর্ক সহজে যাবার নয়। নিষ্পলক শূন‍্য দৃষ্টিতে চেয়ে  সামীম বলেন, অনেক স্মৃতি এই ব‍্যবসার সঙ্গে! আমার দাদাজান মহম্মদ সিদ্দিক সেই কবে এই জায়গাই বসে ব‍্যবসা করতেন। তিনি জে এল ব‍্যানার্জীর মতো প্রখ‍্যাত মানুষ দেখেছেন, এই ছাতা সারাইয়ের কাজ করতে করতে। বাবা মহম্মদ মুর্তজার কাছে আসতেন বিদ‍্যাভবন, হাইস্কুলের সব বিখ‍্যাত মাস্টাররা। আমিও তখন একটু আধটু কাজ করছি। তাঁরা ছাতা সারাই করতে এসে কত গল্প করতেন। শুনতাম। তেরো বছর বয়েসে বিরানব্বই সাল থেকে এই ব‍্যবসা করছি। নিখিল স‍্যার, পার্থ প্রতিম গুহ, রাজেশ মিশ্র অনেকেই আসেন।  ছিয়ানব্বই সালে বাবা মারা যান। তারপর পরিবারের বোঝা আমার উপর পড়ে। আমার বত্রিশ বছর কাজ হয়ে গেল। দুটো গ্রুপ লোন করে এই দোকানটা একটু সাজিয়েছিলাম। এখন লোনের প্রিমিয়াম। আবার দোকান নেই। আয় নেই। কী যে করবো! ছাতা সারাইয়ের পাশাপাশি কাপড়ও বিক্রি করছিলাম। শামীম আরও বলেন, আমার পরিবারের দশজন সদস‍্য। ভাইয়ের সেরকম আয় নেই। তার নিজস্ব পরিবার আছে। বোনকে বিয়ে দেওয়ার পর ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। সেও বাড়িতে থাকে। আমার দুই ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে কলেজে ভর্তি হয়েছে। ছোট ছেলে ক্লাস ফাইভে পড়ে। মেয়ে দশম শ্রেণিতে পড়ে। শামীমের কথা থামতেই চায় না।

বাঁধভাঙা হতাশা নিয়ে বলেন, আমার জিহ্বায় ক‍্যান্সার। মুম্বাইয়ের টাটা মেমোরিয়ালে তিন মাস অন্তর চিকিৎসা করতে যায়। যখন যায়, পঁচিশ থেকে তিরিশ হাজার খরচ হয়। দুই একটি জায়গাই আবেদন করেছি। কিন্তু ক‍্যান্সার রোগী হিসেবে চিকিৎসার জন‍্য না কেন্দ্র না রাজ‍্য, কারো সাহায্য পাই নি। শেষ পর্যন্ত পেটের খাবারের জায়গাটাও কেড়ে নিল। পৌরসভা আমাদের ট্রেড লাইসেন্স দিয়েছে। বিদ‍্যুৎ সংযোগে অনুমতি দিয়েছে। আজ মাথার উপর বড়ো ছাতিটাই নেই। 
বর্ষার ছাতার মতো মাথার ছাদ হারিয়ে কারো মনের অবস্থা কেমন হয়, তা শামীমকে দেখলেই বোঝা যায়। এখন মাথায় ছাদ না থাকলেও, খোলা আকাশের নীচে ছাতা সারাইয়ের সরঞ্জাম নিয়ে বসেন। পেটের ভাত যোগার করতে।

বিশিষ্ট সমাজসেবী পার্থ প্রতিম গুহ বলেন, পৌরসভার কাছ থেকে ট্রেডিং লাইসেন্স নিয়ে, ট‍্যাক্স দিয়ে এরা ব‍্যবসা করছিল। আমরা কোন সভ‍্য দেশে বাস করছি, যেখানে একজন ক‍্যান্সার পেশেন্টের প্রতি কোনো দয়া দেখানো হয় না। পুনর্বাসন না করেই তার দোকান ঘর কেড়ে নেওয়া হয়। সবার কাছে আবেদন এই অসহায় মানুষটির পাশে দাঁড়ান। শামীম আহমেদের আরেকটি পরোপকারী গুণ দেখেছি। যখনই কোনো মানুষের রক্তের দরকার পড়েছে, নিজের দোকান বন্ধ করে হাসপাতাল ছুটেছে শামীম।