Sun, September 29, 2024

ই-পেপার দেখুন
logo

ছানি অপারেশনে অন্ধত্ব কাণ্ড, মেডিক্যালে চিকিৎসাতেও হল না সুরাহা


Bipasha Chakraborty   প্রকাশিত:  ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১০:৫৩ এএম

ছানি অপারেশনে অন্ধত্ব কাণ্ড, মেডিক্যালে চিকিৎসাতেও হল না সুরাহা


সেখ কুতুবউদ্দিন: নুন আনতে পান্তা ফুরায়। ঠিকমতো সংসার চলে না। এমন পরিবারের ৩২ জন মেটিয়াবুরুজ সহ-সংলগ্ন এলাকার মানুষ বড় আসা নিয়ে চোখের ছানি অপারেশন করতে আসেন গার্ডেরিচের সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। ভেবেছিলেন ঝাপসা দে'ছি, ছানি অপারেশন করলে আরও একটু বেশি ভালো দেখতে পাব। কিন্তু হল বিপরীত। যতটুকু দেখতে পাচ্ছিলেন, সেটাও এখন দে'তে পাচ্ছেন না।
মেটিয়াবুরুজ এলাকার নাদিয়ালে অবস্থিত সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালটি। সম্প্রতি ওই হাসপাতালে ৩২ জনের ছানি অপারেশন হয়। অপারেশনের পর ছেড়ে দেওয়া হয় তাদের। কিন্তু বাড়ি ফেরার পর তাদের ফের ফোন করে হাসপাতালে ডাকা হয়। ডেকে বলা হয়, চোখে ইনফেকশন হয়েছে। আপনাদের মেডিক্যাল কলেজে চক্ষু বিভাগে পাঠানো হবে। তাদের মধ্যে ২৮ জনকে মেডিক্যাল কলেজের চক্ষু বিভাগে পাঠানো হয়। সেখানে সমস্ত রোগীকে ভর্তি করিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো হয়। কয়েকজনের পুনরায় অপারেশন করা হয়। কিন্তু একজনেরও দৃষ্টি ফেরেনি।

নাদিয়াল হাসপাতালে অপারেশনের পর যে অবস্থা ছিল, একই অবস্থা রয়েছে। এই রোগীরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আরও কিছুদিন ভর্তি থেকে চিকিৎসা করাতে চায়। কিন্তু তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। হাসপাতাল আর তাদের রা'তে চায়নি। তবে রোগীদের বলেছে, শনিবার ফের চেকআপ করাতে আসতে। চিকিৎসকরা রোগীদের পরামর্শ দিয়েছেন, ধীরে ধীরে দে'তে পাবে। কিন্তু এতদিন কেটে গেল চো'ের দৃষ্টিশক্তি ফিরল না। এক চো' ছিল, নষ্ট হল। আরও এক চোখের অপারেশন পরে করার কথা। কিন্তু এই হাল। কীভাবে আমরা দে'তে পাব। রোগী এবং পরিবারের সদস্যরা সোমবার আক্ষেপের কথা ‘পুবের কলম’কে জানালেন।
হাওড়ার সাঁকরাইলের নলপুরের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান এ দিন বলেন, আমার ৬০ বছর। ছেলেরা দিনমজুরের কাজ করে। অর্থ থাকলে, আরও ভালো, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে দেখাতে পারতাম। এ'ন সারাজীবন কীভাবে বাঁচব? আমাদের কী হবে? 
মেটিয়াবুরুজের এই হাসপাতালের পিছনেই বাড়ি ৬৮ বছর বয়সি মেহের সুলতানার। তিনিও একইভাবে চো'ের অপারেশন করাতে গিয়েছিলেন ওই হাসপাতালে। মেহের সুলতানার ছেলে সে' ইসলামউদ্দিন বলেন, ‘আমি রিকশা-ভ্যান চালাই। কীভাবে টাকা দিয়ে অপারেশন করাব। বিনা 'রচে অপারেশন হবে বলে এই হাসপাতালে মাকে নিয়ে গিয়েছিলাম। ভালো হওয়ার থেকে হল আরও খারাপ। মেডিক্যাল কলেজের চক্ষু বিভাগে গিয়েও কোনও লাভ হল না। এখন আমরা কী করব? কার কাছে যাব? কীভাবে আমার মায়ের দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাব। হন্যে হয়ে ছুটে বেড়াচ্ছি। কিন্তু কোথাও কোনও সুরাহা মিলছে না। হাসপাতালে ভর্তি ছিল। কিন্তু সে'ান থেকেও ছেড়ে দিয়েছে। 
রোগী রেজওয়ানা পারভিনের জামাই সে' আরসাদ বলেন, এ'ন অপারেশন হওয়া চোখে কিছুই দেখতে পাচ্ছে না।
দু’দিন আগে নাদিয়াল থানায় এফআইআর করা হয়েছে। হাসপাতাল থেকে ছাড়া দেওয়ার পর প্রাইভেট হাসপাতালে দে'াব। তারপর চোখে ভালো না হলে নাদিয়াল-হাসপাতালের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেব।
মুহাম্মদ ইকবাল। বয়স ৪৫। বাড়ি সন্তোষপুর গুলজারবাগে। অপারেশন হয়েছিল ২৮ জুন। ছোট ব্যবসা ছিল। এ'ন সেই কাজও নেই। চো'ের ছানি কাটাবার জন্য ওই হাসপাতালে গিয়েছিলাম। পাড়ায় মানুষের কথা শুনে গিয়েছিলাম। অপারেশন হওয়া চোখে এক্কেবারে দে'তে পাচ্ছি না। কী করব আর। তিন মেয়ে ও এক আট বছরের ছেলে-বউ রয়েছে। চো'ে দে'তে না পেলে কীভাবে আয় করব। সংসার চলবে কীভাবে। তিন দিনে ৩২ জনের অপারেশন হয়েছিল। মেডিক্যালে আমরা ২৮ জন ভর্তি হয়েছিলাম। ২৮ জনই দে'তে পাচ্ছি না।
এ ছাড়া গোবি¨ চন্দ্র দেবনাথ, হাসিনা বিবি, সানোয়ারা বিবি, মুহাম্মদ রফিক মণ্ডল, আবদুর রহমান, গোপীনাথ ভট্টাচার্য, সে' মুহাম্মদ রফিক, নূর হোসেন গাজি, মুহাম্মদ আরসাদ, ইয়ার আলি মোল্লা, সেলিম সে'-সহ আরও ১৬ জনের মধ্যে সিংহভাগের বাড়ি মেটিয়াবুরুজ এলাকাতেই। তাঁদেরও বক্তব্য, আমাদের দৃষ্টিশক্তি কে ফিরিয়ে দেবে? কীভাবে আমরা বাঁচব?
গার্ডেনরিচের নাদিয়াল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে চিকিৎসায় গাফিলতির কারণে আরও কয়েকজন নাদিয়াল থানায় এফআইআর করেছেন। মঙ্গলবার গার্ডেনরিচ হাসপাতালের সুপার রোগীর পরিবারকে ডেকেছে। আজ হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভও দে'াবেন বলে জানিয়েছে রোগী-পরিবারের সদস্যরা। 
এ দিকে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী এ দিন ‘পুবের কলম’কে বলেন, হাসপাতালে রোগীরা চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে অনেকেই সুস্থ হয়েছেন। তাদের অনেকের চিকিৎসা চলছে মেডিক্যালের চক্ষু বিভাগে।