Mon, September 30, 2024

ই-পেপার দেখুন
logo

কোলেস্টেরল থেকে মুক্ত থাকুন প্রাকৃতিকভাবেই


Bipasha Chakraborty   প্রকাশিত:  ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১১:৫৬ পিএম

কোলেস্টেরল থেকে মুক্ত থাকুন প্রাকৃতিকভাবেই

 ডা. ফারুকউদ্দিন পুরকাইত একজন বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। তিনি একদিকে যেমন হলদিয়া মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক আবার দক্ষিণ ২৪ পরগণার ফলতার নিকটবর্তী সহবার হাটে অবস্থিত সুপার স্পেশালিটি আশ শিফা হসপিটালের মেডিক্যাল ডিরেক্টর। হৃদরোগী বা অন্যদের ক্ষেত্রে কোলেস্টেরল কি ধরনের শারিরীক সমস্যার সৃষ্টি করে, এবং প্রাকৃতিকভাবে তার থেকে নিস্তার পাওয়া যায় কিভাবে এ সম্পর্কে কিছু পরামর্শ দিলেন তিনি। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন প্রদীপ মজুমদার

প্রশ্ন  কোলেস্টেরল শরীরে ক্ষতি করে কিভাবে? কোন ধরনের খাবারে রক্তে কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পায়? 

 

 কোনও খাবারই রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা পরিবর্তন করতে পারে না। আগে ধারনা করা হতো, কোলেস্টেরল চর্বিজাতীয় খাবারের উপর হ্রাস বৃদ্ধি হয়। আধুনিক বিজ্ঞান তা বলছে না। তাছাড়া সব কোলেস্টেরলই যে খারাপ তা ঠিক নয়। ভালো কোলেস্টেরলও আছে। 

বিষয়টি একটু ব্যাখা দিয়ে বলুন। 

 

কোলেস্টেরলের মধ্যে ভাগ আছে। যেমন হাই ডেন্সিটি লাইপ্রো প্রোটিন, যাকে সক্ষেপে বলে এইচ ডি এল--- এটা খুবই ভাল কোলেস্টেরল। আর ক্ষতিকরে এল ডি এল বা লো ডেন্সিটি লাইপ্রো প্রোটিন। প্রথমটা খাবারের পর লিভারে এসে ব্রেক হয়। লিভার থেকে রক্তে যায় না। কিন্তু এলডিএল লিভার থেকে রক্তে মেশে। 

কোন খাবার কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে? 

 ধারণা আছে, চপ-আপেল এসব খাবার খেলে কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পায়। তেল জাতীয় খাবারেও বাড়ে। বিষয়টা তা নয়। যে তেলেভাজা একবারই ফ্রেস তেলে ভাজা হয়, তাতে কোনও সমস্যা নেই। সমস্যা একই তেলে বার বার ভাজার ক্ষেত্রে। আসলে দেখতে হবে, যে খাবার খাচ্ছি তা লিভার ঠিকমত গ্রহণ করতে পারছে কিনা। সাধারণ আমরা ২০০ মাত্রার নিচে কোলেস্টেরলকে স্বাভাবিক ভাবে দেখি। এর বেশি থাকলে সমস্যা। তখন রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে খুঁজে বের করতে হবে বৃদ্ধির আসল কারনকি? সাধারণত শরীরে হাইপো থাইরয়েড থাকলে কোলেস্টেরল বেড়ে যায়। চিকিৎসা করলেই কমানো সম্ভব। 

যাদের রক্তে সুগার আছে তাদের ক্ষেত্রে? 

 

ব্লাড সুগারের রোগীদের ক্ষেত্রে অনেক সময় দেখা যায় কিছু না খেলেও সুগার কোলেস্টেরলে কনভার্ট হয়ে যায়। তখন প্রয়োজন পড়ে আনুষঙ্গিক রোগ নির্ণয় করে তার চিকিৎসা করা। 

চিকিৎসা ছাড়াও কিভাবে প্রাকৃতিক ভাবে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করা যায়? 

 

হ্যাঁ, এটা অনেক ভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। প্রথমত খাবার, দ্বিতীয়ত, ব্যায়াম। ৫ রকমের বাদাম কাজু, পেস্তা, আখরোট, আলমন্ড এবং চিনাবাদাম মিলিয়ে ১০ গ্রাম করে খেলে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ রাখা যায়। এছাড়া তিন ধরনের ব্যায়াম আছে হাঁটা, সাইকেল চালানো এবং সাঁতার কাটলে খুবই উপকার মেলে। আবার খাবারের মধ্যে ন্যাচারাল ফাইবার বেশি রাখতে হবে। যেমন ইসুফগুল, কলার থোর, ডুমুর। আপেল সিগার ভিনিগার গরম জলে মিশিয়ে খেলেও কোলেস্টেরল কমানো যায়। 

 

কখন ডাক্তারের কাছে যাওয়া দরকার? 

 

যদি দেখা যায় হাঁটতে, চলকে দমের কষ্ট হচ্ছে, বুক ধরপড় করছে কিংবা হঠাৎ করে মাথাঘোরানো, এমন কিছু লক্ষণ দেখলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। এর জন্য একটাই ওষুধ আছে সেটা হলো স্ট্যাটিন জাতীয় ওষুধ। 

 সাধারণত প্রচার আছে খাবারের তেল থেকে কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পায়। কি বলবেন? 

 তেল একটা কারণ, ঠিকই তবে এর ব্যবহার নিয়ন্ত্রিত হওয়া দরকার। মেডিক্যাল সায়েন্স বলে শরীরের জন্য সবচাইতে ভালো মিক্সট ওয়েল। তবে বাজারে এমন কোনও তেল নেই। তাই বাড়িতে ২ থেকে তিন ধরনের তেল ব্যবহার করা ভালো। রাইসবান ওয়েল, বা তুষের তেল খারাপ না। এর সঙ্গে সরষে তেল বা বাতাম তেলও রাখা যেতে পারে। এক এক ধরনের তরকারি রান্না হোক পরিমিত হারে এক এক ধরনের তেলে। তবে মাথায় রাখতে হবে একজনের জন্য মাসে ১ কেজি তেলই যথেষ্ট। তার বেশি হওয়া ঠিক নয়। 

 

হার্টের রোগী কি ডিম-দুধ খেতে পারে? 

 

অবশ্যই খেতে পারেন, তবে পরিমিত মাত্রায়। অতিরিক্ত প্রোট্রিন সবার জন্যই ক্ষতিকর।

 

ওষুধ ছাড়াই কোলেস্টেরল কমানোর উপায়

 জলপাই তেলে ভরসা

ঘি বা মাখনের জন্য অলিভ অয়েল প্রতিস্থাপন করলে জ্রঙ্গজ্র কোলেস্টেরো ১৫ শতাংশ কমে যেতে পারে, জলপাই তেলের ‘ভাল’ চর্বি আপনার হৃদয়কে উপকার করে। এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল বেছে নিন।

 আপনার ডায়েটে প্রচুর ফাইবার যোগ করুন

 

যে প্রতিদিন ৫ থেকে ১০ গ্রাম দ্রবণীয় ফাইবার গ্রহণের ফলে এলডিএল কোলেস্টেরল ৫ শতাংশ কমে যেতে পারে। ওটমিল, আপেল, ছাঁটাই এবং মটরশুটি জাতীয় খাবারে দ্রবণীয় ফাইবার বেশি থাকে।

 রঙিন ফল এবং সবজি চয়ন করুন

ফল এবং শাকসবজি এমন উপাদানে লোড করা হয় যা কোলেস্টেরো কম করে; যার মধ্যে রয়েছে ফাইবার, কোলেস্টেরল-অবরোধকারী অণু যা স্টেরল এবং স্ট্যানল নামে পরিচিত, এবং চোখ-আকর্ষক রঙ্গক। এর মধ্যে রয়েছে শাক, হলুদ স্কোয়াশ, গাজর, টমেটো, স্ট্রবেরি, বরই, ব্লুবেরি।

 রান্নায় মশলা যোগ করুন

রসুন, কারকিউমিন, আদা, কালো মরিচ, ধনে এবং দারুচিনির মতো মশলা যা কোলেস্টেরল উন্নত করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রতিদিন অর্ধেক থেকে এক কোয়া রসুন খেলে কোলেস্টেরল ৯ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে। 

 এই অতিরিক্ত ওজন কমান

ওজন বেশি হলে মাত্র ৪-৫ কেজি কমলে আপনার এলডিএল ৮ শতাংশ পর্যন্ত কমে যাবে। দিনে ১,০০০ থেকে ১,২০০ ক্যালোরি (মহিলাদের জন্য) এবং ১২০০-১৬০০ ক্যালোরি/দিন (পুরুষদের জন্য) নিরাপদে ওজন কমাতে সাহায্য করবে।

৭ ব্যায়াম নিয়মিত

এইচডিএল (ভাল কোলেস্টেরল) বাড়াতে এবং এলডিএল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের উন্নতির জন্য সপ্তাহে কমপক্ষে ২ ঘন্টা ব্যায়াম করা (প্রতিদিন প্রায় ২০ মিনিট) যথেষ্ট। প্রতিদিন ২০ মিনিটের দ্রুত হাঁটা দিয়ে শুরু করুন!

৮ এক মুঠো বাদাম আছে

বাদাম এবং আখরোটে স্টেরল থাকে, যা ফাইবারের মতো শরীরকে কোলেস্টেরল শোষণ থেকে বিরত রাখে। লবণ ছাড়া খাবারের জন্য যান এবং পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

৯ ধুমপান ত্যাগ কর

ধূমপান এলডিএল বাড়াতে পারে এবং এইচডিএল কমিয়ে দিতে পারে। ছেড়ে দেওয়া প্রায়শই সেই সংখ্যাগুলিকে উন্নত করে।  

১০ সুখী থাকো

আপনি যখন মানসিক চাপে থাকেন তখন শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়। তাই মনকে সব সময় আনন্দময় রাখতে হবে।