Sun, September 29, 2024

ই-পেপার দেখুন
logo

সারাদিন কত পা হাঁটলে শরীর থাকবে সুস্থ, জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা


Bipasha Chakraborty   প্রকাশিত:  ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ০৮:৫৪ এএম

সারাদিন কত পা হাঁটলে শরীর থাকবে সুস্থ, জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা


 

বিশেষ প্রতিনিধি: আধুনিক সমাজে মানুষ স্বাস্থ্য সচেতন। স্বাস্থ্য রুটিনের মধ্যে তাই হাঁটা তার বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে। সুস্থ থাকার একটি ভালো উপায় হচ্ছে পায়ে হাঁটা। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ হাত পা ব্যথায় ভুগতে থাকে। ডায়াবেটিস, থাইরয়েড, মানসিক চাপ এখন খুব সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব সমস্যা থেকে রেহাই পেতে সকাল বিকাল হাঁটার অভ্যাস গড়ে তোলার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। তাছাড়া স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ নিয়ম করে হাঁটেন। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এই ব্যস্ততার যুগে প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটা খুব ভালো। পরে ধীরে ধীরে হাঁটার সময় বাড়াতে পারেন। 

আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন অ্যান্ড দ্য সেন্টার ফর ডিজিজ অ্যান্ড প্রিভেনশন(সিডিসি) জানাচ্ছে, প্রতি সপ্তাহে প্রায় ১৫০ মিনিটের সমান হাঁটা উচিৎ। যাদের শরীর ফিট তারা সারাদিনে ৪০-৫০ মিনিট ধরে হাঁটতে পারে। প্রতি সপ্তাহে ৫ ঘণ্টা করে ৩০০ মিনিট করে হাঁটতে পারে। প্রতিদিন হাঁটার অভ্যাস এন্ডোরফিন (হরমোন) তৈরি করতে পারে এবং এটি ভারসাম্যপূর্ণ ওজন ধরে রাখা সহায়ক হতে পারে। প্রতিদিন নিয়ম করে হাঁটলে কার্ডিওভ্যাসকুলার স্বাস্থ্য থাকে ভালো। এতে ক্যানসার ও ডিমেনশিয়ার ঝুঁকিও কমে যায়। এমনকি হাঁটা মানসিক তীব্রতা সহনশীলতা তৈরি করতে এবং আঘাত প্রতিরোধে সাহায্য করে। 

নিয়মিত হাঁটলে যেসব উপকার হবে

১. কমবে ওজন

২. সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকবে

৩. উচ্চ রক্তচাপ কন্ট্রোলে থাকবে

৪. কোলেস্টেরল ঠিক থাকবে

৫. শ্বাসকষ্টের সমস্যা দূর হবে

৬. পেশি শক্তি বাড়বে

৭. মন ভালো থাকবে

সেইসঙ্গে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, হাঁটার ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা নিতে হবে। ঘুম থেকে উঠেই হাঁটতে যাওয়া জন্য তাড়াহুড়ো করা ঠিক নয়। যাঁরা দিনের শেষ ভাগ, সন্ধ্যা বা রাতে হাঁটেন তাঁদের ঘুমোতে যাওয়ার কমপক্ষে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা আগে হাঁটা উচিৎ। হেঁটে এসে ঘুমাতে যাওয়া উচিত না। হেঁটে এসে শরীর দুর্বল মনে হলে বা ঘুম এলে ঘুমনোর জন্য এই সময়টুকু অপেক্ষা করা উচিৎ। খাওয়ার ঠিক আগে বা খাওয়া শেষ করেই হাঁটা উচিত না। যাঁরা সকাল, বিকেল বা সন্ধ্যার পর হাঁটতে সময় পান না, তাঁরা তিন বেলা খাওয়ার পর ১০ মিনিট করে হাঁটতে পারেন। এ সময় হাঁটতে পারলে শরীরের জন্য বেশ উপকার হয়। সুগার ও ব্লাডপ্রেশার নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে খাওয়ার পর ১০ মিনিট হাঁটা।

চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন, হাঁটা একটি সহজ এরোবিক এক্সারসাইজ। এই অভ্যাস একজন মানুষকে সুস্থ-সবল রাখতে সহায়তা দেয়। যাদের পায়ে হাঁটার অভ্যাস আছে তারা সুস্থ জীবনযাপন করতে পারেন। হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে সেরে যেতে পারে ক্রনিক অসুখও। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট স্টেপ বা পা মেপে হাঁটা ভালো। 

আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) –এর তথ্য মতে, প্রতিদিন অন্ততপক্ষে ১০ হাজার স্টেপ হাঁটলে সুস্থ জীবনযাপন করা সম্ভব। বিশেষজ্ঞদের কথায়, হেঁটে উপকার পেতে চাইলে দিনে আধা ঘন্টা হাঁটতেই হবে। না হলে বিভিন্ন রোগে ভুগতে হবে।  একেবারে বেশি নয়, আস্তে আস্তে হাঁটার অভ্যাস বাড়াতে হবে। প্রথমে আধ ঘণ্টা, পরে সময়ের হিসাবে হাঁটার স্টেপ বাড়াতে হবে। দিনের যেকোন সময় হাঁটাতে পারেন। তবে সব থেকে ভালো সময় হচ্ছে সকাল। বাড়ির কাছাকাছি কোনও পার্ক, রাস্তায় হাঁটা যেতে পারে। নিজের বাড়ির ছাদেও হাঁটতে পারেন। 

গবেষণা বলছে, প্রতিদিন ৪ হাজার কদম হাঁটলেই তা অকালে মৃত্যুর ঝুঁকি কমানোর জন্য যথেষ্ট। বিশ্বজুড়ে ২ লক্ষ ২৬ হাজার মানুষের ওপর সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে, প্রতিদিন ৪ হাজার কদম হাঁটলেও তা অকালে মৃত্যুর ঝুঁকি কমানোর জন্য যথেষ্ট। গবেষণায় দেখা গেছে, ৬০ বছরের নিচে যাদের বয়স, প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ হাঁটেন, তারাই সবচেয়ে বেশি উপকার পেয়েছেন।

শরীর ফিট রাখতে ও ওজন ঝরাতেই শুধু নয়, হার্ট ভালো রাখা থেকে শুরু করে একাধিক দিক থেকে হাঁটা খুবই উপকারি। বহু চিকিৎসকই হাঁটার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। গবেষকরা জানান, এতে কার্ডিওভ্যাসকুলার স্বাস্থ্য থাকে ভালো। এতে ক্যানসার ও ডিমেনশিয়ার ঝুঁকিও কমে যায়। বহু ফিটনেস বিষয়ে আগ্রহীদের মধ্যে ১০ হাজার স্টেপের টার্গেট পূরণ করা এই মুহূর্তের জনপ্রিয় বিষয়। এদিকে, আরও এক নতুন গবেষণা দাবি করছে দিনে অন্ততপক্ষে ৭ হাজারটি স্টেপ হাঁটলে কম বয়সে মৃত্যুর ঝুঁকি কমে। বর্তমান সময়ে  ব্যস্ততম জীবনধারায় ও সারাদিন বসে কাজের ফলে অন্ততপক্ষে ৫ থেকে ৭ হাজার স্টেপ হাঁটতেও প্রথমে সমস্যা হতে পারে। নিয়মিত হাঁটতে থাকলে পরে সেটি অভ্যাস হয়ে যাবে। 

রাতের ঘুমের সমস্যা থেকেও মুক্তি দিতে পারে হাঁটা। প্রতিদিন অন্তত আধঘণ্টা হাঁটা রাতের ঘুমের জন্য ভালো, যা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করবে। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, অপর্যাপ্ত শারীরিক কার্যকলাপ বা নিস্ক্রিয়তার ফলে প্রতি বছর ৩২ লক্ষ মানুষ মারা যায়। তাই আগেভাগেই সতর্ক থাকতে হবে।