Sun, September 29, 2024

ই-পেপার দেখুন
logo

লোকসভায় ক্রমশ কমছে মুসলিম সাংসদ, এবার কি তবে রাজনীতিতেও প্রান্তিক হওয়ার পালা !


ইমামা খাতুন   প্রকাশিত:  ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ০৫:৫২ এএম

লোকসভায় ক্রমশ কমছে মুসলিম সাংসদ, এবার কি তবে রাজনীতিতেও প্রান্তিক হওয়ার পালা !

 

সৈয়দ আলি মাসুদ: রাজনীতিতে মুসলিমরা ক্রমশ প্রান্তিক হয়ে যাচ্ছেন, নাকি কৌশলে তাদের প্রান্তিক করে দেওয়া হচ্ছে? লোকসভা ভোটের পর বহু ধর্মনিরপেক্ষে রাজনৈতিক বিশ্লেষক এমন প্রশ্ন তুলতে শুরু  করেছেন। ২০১৯-এর ভোটের পর লোকসভায় মুসলিম সাংসদের সংখ্যা ছিল ২৬। এবার সেই সংখ্যা আর দু’ধাপ কমল। এবার লোকসভায় মুসলিম সাংসদের সংখ্যা মাত্র ২৪। কিন্তু এমনটা হচ্ছে কেন?

গুগল বলছে ২০২৪-এ দেশে মুসলিম জনসংখ্যা ২০ কোটির ওপর। মঙ্গলবার লোকসভা হায়দরাবাদের সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়াইসি বলেছিলেন, দেশের জনসংখ্যার ১৪ শতাংশ মুসলিম। অথচ লোকসভায় মুসলিম প্রতিনিধিত্ব ৪ শতাংশ। এর দায় কেবল বিজেপির ওপর চাপিয়ে তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলি কি নিজেদের দায়িত্ব এড়াতে পারে? সে প্রশ্নও তোলেন ওয়াইসি। 
২০১৯-এ অবিজেপি রাজনৈতিক দলগুলি ১১৫ জন মুসলিমকে টিকিট দিয়েছিল। এবার লোকসভার ৫৪৩ আসনের মধ্যে অবিজেপি দলগুলি মাত্র ৭৮ জন মুসলিমকে টিকিট  দিয়েছিল। ১৯৫২ সালে দেশের প্রথম নির্বাচনের সময় ১১ জন মুসলিম লোকসভার সাংসদ হয়েছিলেন। প্রথম লোকসভা নির্বাচন হয়েছিল ১৯৫২ সালের ১৩ মে। তখন লোকসভার আসন সংখ্যা ছিল ৪৮৯। মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ১৭.৩ কোটি। ৩৬৪ আসনে জিতেছিল কংগ্রেস। 
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১৯৮০ সালে লোকসভায় মুসলিম সাংসদদের সংখ্যা সবথেকে বেশি হয়েছিল। তারপর ফের নামতে শুরু করে। সরকারিভাবে ঘোষিত ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্রে ‘হিন্দু জাতীয়তাবাদের’ ধাক্কায় ক্রমশ কোণঠাসা হতে শুরু করে মুসলিমরা। সেই ধাক্কা এখনও বন্ধ হয়নি। অন্তত সংসদের নিম্নকক্ষের রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব সে-কথাই বলছে। 
জাতীয় রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের টিকিট জয়ী হয়ে এবার লোকসভায় এসেছেন ৭ জন মুসলিম সাংসদ। তৃণমূলের টিকিটে সাংসদ হয়েছেন ৫ জন। সপার টিকিটে ৪ জন মুসলিম, ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগের টিকিটে ৩ জন, এনসির ২ জন মুসলিম, মিমের একজন এবং দু’জন নির্দল মুসলিম জয়ী হয়ে লোকসভার সাংসদ হয়েছেন।
নিবার্চনী অন্যালিস্টদের মতে, তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ দল কংগ্রেস, ডিএমকে, আরজেডি, সপা-সিপিএমের মতো অধিকাংশ দলের ইশতেহারে ‘মুসলিম’ শব্দটি জায়গা পায়নি। তারা সকলেই নানান কথা বললেও, ইশতেহারে এই শব্দের ব্যবহার থেকে তারা সযত্নে নিজেদের দূরে রেখেছে। মুসলিমদের সমস্যা ও তাদের অভাব-অভিযোগ সম্পর্কেও অনেকে আলাদা করে কোনও কথা বলেনি। অথচ এই ভোট মুসলিমদের নিশানা করে লাগাতার প্রচার করেছেন মোদি নিজে।  
ভোটের আগে সমাজবাদী পার্টি খুব সুন্দর ক্যাচ লাইন ব্যবহার করেছিল। পিছড়েবর্গ দলিত এবং অল্পসংখ্যক মিলিয়ে ‘পিডিএ’ শধবন্ধকে ভোটের আগে জনপ্রিয় করে তোলে সপা। এই নয়া শব্দ ব্যবহার করে অত্যন্ত সুচারুভাবে মুসলিম শব্দটি এড়িয়ে গিয়েছে তারা।  
কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোটের ইশতেহারেও আলাদা করে মুসলিম শব্দ রাখা হয়নি। আসলে এমন একটা রাজনৈতিক বাতাবরণ তৈরি করা হয়েছে যাতে সকলেই কমবেশি মুসলিমদের থেকে নিজেদের দূরত্ব  তৈরি করে হিন্দুত্বের বিরুদ্ধে হিন্দু সংস্কৃতি ও হিন্দুধর্মকে দাঁড় করাতে চাইছে। এই রাজনৈতিক বাতাবরণে মুসলিমদের টিকিট দেওয়ার ব্যাপারে কমবেশি সব তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ দলই রক্ষণশীল হয়ে পড়ছে বলে বিশ্লেষকদের দাবি।  
রাহুল গান্ধি বিদ্বেষের বিরুদ্ধে বহু ভাষণ দিয়েছেন। দলিত ও আদিবাসীদের নিয়েও সরব হয়েছেন। সংখ্যালঘুদের কথা বলেছেন। কিন্তু তাঁর মুখে মুসলিম শব্দ তেমন একটা শোনা যায়নি। বিশ্লেষকরা মনে  করছেন তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলো বিজেপির ভয়ে মুখে মুসলিম শব্দ পর্যন্ত ব্যবহার করতে চাইছে না।

বিজেপি তাদের মুসলিম ঘনিষ্ঠ বলে প্রচার করে ভোটের বাজার খারাপ করে দিক, তা চাইছে না তথাকথিত ধর্ম নিরপেক্ষ দলগুলো। এর স্বাভাবিক পরিণতি মুসলিমদের লোকসভায় ক্রমশ আরও সংখ্যায় কমে যাওয়া। এখন যে প্রশ্নটা বহু মনে পাক খাচ্ছে তা হল, দেশের রাজনীতি থেকেই কি এবার মুসলিমদের প্রান্তিক হয়ে যাওয়ার পালা? প্রশ্ন অনেক, উত্তর নেই।