Sun, September 29, 2024

ই-পেপার দেখুন
logo

দেশরক্ষার লড়াইয়ে শহিদ হয়েছিলেন সিরাজ: ইমরান


Bipasha Chakraborty   প্রকাশিত:  ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ০৬:৫৭ এএম

দেশরক্ষার লড়াইয়ে শহিদ হয়েছিলেন সিরাজ: ইমরান
খোশবাগে নবাব সিরাজের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন আহমদ হাসান ইমরান। রয়েছেন ছোটে রেজা আলি মির্জা, আলিমুজ্জমান প্রমুখ।

 

মুহাম্মদ মুস্তাক আলি ও সুবিদ আবদুল্লাহ্:   নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাহ ছিলেন বাংলার হিন্দু-মুসলমান সহাবস্থানের প্রতীক। তিনি বাংলার জন্য লড়াই করেছিলেন। ১৪ মাসের শাসনে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাহ তিনটে বড় যুদ্ধ করেন। যুদ্ধে তার বিশ্বস্ত সেনাপতি ছিলেন মুসলমান মীর মর্দান ও হিন্দু মোহনলাল। তাঁর রাজত্বে প্রশাসনিক কাজ সামলাতেন হিন্দু-মুসলিম সকলে। তরুণ নবাব সিরাজ হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে তাঁর রাজ্যের প্রজাদের কল্যাণ এবং স্বাধীনতা রক্ষায় শহিদ হয়েছিলেন।

নবাব সিরাজ কোনও অবস্থাতেই আপস করেননি ইংল্যান্ডের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে। এভাবেই নবাব সিরাজের মূল্যায়ন করলেন রাজ্য সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়্যারম্যান, ‘পুবের কলম’-এর সম্পাদক আহমদ হাসান ইমরান। একদা বাংলা-বিহার-ওড়িশার রাজধানী মুর্শিদাবাদের 'খোশবাগে অবস্থিত সিরাজের সমাধি প্রাঙ্গণে বুধবার নবাবের শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনাসভায় বক্তব্য রাখেন তিনি। এ দিন সিরাজের শাহাদাত দিবস উপলক্ষে 'খোশবাগে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাহ স্মরণ সমিতি ও বিশ্বকোষ পরিষদের উদ্যোগে এক কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। সকাল থেকে নবাবের পারিবারিক কবরখানা যেন নীরবে আহ্বান করছিল শহিদের কবরে দু-দণ্ড সময় কাটিয়ে যেতে।

প্রতি বছর এই দিনটিতে বিষণ্ণ থাকে আকাশের জমাট কালো মেঘের গোমড়া মুখ। শহিদ শোকে আকাশের কান্নারা ঝরে পড়ে ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি হয়ে। তার ব্যতিক্রম ছিল না এ দিনও। সে-সব বাধা উপেক্ষা করে অগণিত সিরাজপ্রেমী মানুষ এসে উপস্থিত হয়েছিলেন খোশবাগের নির্জন কবরভূমিতে। তবে, এ দিনের স্মরণ অনুষ্ঠানটি বাঙ্ময় করে তোলে একঝাঁক স্কুল পড়ুয়ার উপস্থিতি। খোশবাগ নারিকেলবাগান এলাকার আবাস  মুনলাইট ইন্সটিটিউটের সম্পাদক কাদির আলি হাজির করিয়েছিলেন এই কচিকাঁচাদের। 

এদিন সকাল ১০টায় নবাবের পারিবারিক গোরস্থান খোশবাগে বীর শহিদের কবরে ফুল রেখে তাঁকে শ্রদ্ধা জানান আহমদ হাসান ইমরান। উপস্থিত ছিলেন ছোটে নবাব সৈয়দ রেজা আলি মির্জা, নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাহ্ স্মরণ সমিতির সম্পাদক বিপ্লব বিশ্বাস, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সনৎ কর, প্রতীচী ইন্সটিটিউটের ন্যাশনাল রিসার্চ কো-অর্ডিনেটর সাবির আহমেদ, প্রাবন্ধিক আলিমুজ্জমান, মুর্শিদাবাদ ডিস্ট্রিক্ট মাইনোরিটি অফিসার রেণুকা খাতুন, মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত জেলাশাসক শামসুর রহমান, কবি কাজী নজরুল গবেষক সোমঋতা মল্লিক, কাজী আমিনুল ইসলাম, হাসিবুর রহমান, বিশ্বকোষ পরিষদের মুর্শিদাবাদ জেলা সম্পাদক জাহাঙ্গির আলি, আবদুর রাজ্জাক, আবুল হাসনাত প্রমুখ।

গেট থেকে পায়ে হেঁটে অদূরে বারোদুয়ারি কবরখানায় পা রেখে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন ইমরান সাহেব। কাঁপা হাতে কবরে ফুল রেখে প্রিয় নবাবের বেহেস্ত নসীব চেয়ে আল্লাহ্র কাছে দোওয়া করেন। ইমরান সাহেব জানান, নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাহকে নিয়ে কুৎসার ইতিহাসচর্চা বন্ধ হোক। প্রাবন্ধিক আলিমুজ্জমান দাবি করেন, প্রত্যেকটি কবরে নামফলক দেওয়া হোক।

অতিরিক্ত জেলাশাসক শামসুর রহমান জানান, নবাবের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁকে স্মরণ করে অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে। ডোমা রেণুকা খাতুন বলেন, ধূসর হয়ে যাওয়া স্মৃতিকে জীবন্ত করে তোলার জন্য সমিতিকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। নবাবের প্রাসাদ হীরাঝিল বাঁচাও আন্দোলনের মুখ্য মুখ সমর্পিতা দত্ত জানান, সিরাজপ্রেমী মানুষের জমে থাকা আবেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটল আজ। সভায় কবি নজরুলের গান পলাশী হায় পলাশীদুর্গম গিরি কান্তারমরুপরিবেশন করেন সোমঋতা মল্লিক।

এ দিন আহমদ হাসান ইমরান বলেন, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এ দেশে ব্যবসা করার চেয়েও অনেক বেশি লোলুপ দৃষ্টি ছিল বাংলা-বিহার-ওড়িশার পাশাপাশি ভারতের রাজনৈতিক ক্ষমতার দিকে। আর ইংরেজদের ওই অভিসন্ধি প্রথমেই বুঝতে পেরেছিলেন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাহ।

ইমরানের মতে, বাংলা-বিহার-ওড়িশার তৎকালীন শাসন ক্ষমতার অধিকারী নবাব সিরাজ নিজের স্বার্থের কথা ছেড়ে ইংরেজদের বেশ কিছু সুবিধা দিয়ে নিজেকে হয়তো রক্ষা করতে পারতেন। কিন্তু স্বাধীনচেতা নবাব সেইপথে পা না বাড়িয়ে ইংরেজদের দমন করাকেই শ্রেয় মনে করেন। ১৭৫৬ সালে নবাব পদে অধিষ্ঠিত হয়েই পাটনাতে ইস্ট ইন্ডিয়াকে পরাজিত করেন। এই ইংরেজ বেনিয়ারা আরও বাড়াবাড়ি শুরু করলে কাশিম বাজার এবং ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গও দ'ল করে নেন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাহ। প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ১৭৫৭ সালে ২৩ জুন পলাশির প্রান্তরে যুদ্ধের নাটকে পরাজিত হন নবাব।

সেদিন ওই যুদ্ধে নবাবের বিরুদ্ধে ইংরেজদের সহায়তা করেছিল দরবারের প্রধান সেনাপতি মীর জাফর, ইয়ার লতিফ, রায় দুর্লভ, জগৎ শেঠ, উমি চাঁদের মতো বিশ্বাসঘাতকরা। পরাজিত নবাব য'ন নদীপথে পাটনার উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন সেই সময় রাজমহলের কাছ থেকে ধরে আনা হয় তাঁকে। এর পরে ক্লাইভের ইঙ্গিতে ষড়যন্ত্রকারীরা ২ জুলাই গভীর রাতে তাঁকে নৃশংসভাবে 'খুন করে।

ইমরান আরও বলেন, সিরাজ-উদ-দৌলাহ প্রজাদের স্বার্থে জীবন দান করলেও কিছু ইতিহাসবিদ নবাবের চরিত্র বিকৃত করে উপস্থাপন করে মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন। তিনি সঠিক ইতিহাস চর্চার পাশাপাশি স্মৃতি ফলক এবং সমাধিগুলো রক্ষণাবেক্ষণের আবেদন জানান। ইমরান-সহ অন্যান্য সব বক্তাই ইতিহাসের তথ্য দিয়ে বলেন, নবাবি আমলে বাংলার অর্থনীতি ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহৎ। সে-সময় মুর্শিদাবাদের সম্পদের পরিমাণ লন্ডনের চেয়ে যে বেশি ছিল সে-কথা স্বয়ং উল্লেখ করে গিয়েছেন লর্ড ক্লাইভ।