Mon, July 1, 2024

ই-পেপার দেখুন
logo

শুরু হলো দীর্ঘ প্রতীক্ষিত গঙ্গাসাগর সেতুর কাজ


Bipasha Chakraborty   প্রকাশিত:  ০১ জুলাই, ২০২৪, ১২:৩১ পিএম

শুরু হলো দীর্ঘ প্রতীক্ষিত গঙ্গাসাগর সেতুর কাজ

 

উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়, সাগর: সুন্দরবন তথা সাগরবাসীদের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে এবার। এবার মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে জুড়তে চলেছে গঙ্গাসাগর। বিদ্যুতের টাওয়ারের পাশ দিয়েই মুড়িগঙ্গার সেতু তৈরি হতে চলেছে।

এবারের রাজ্য সরকারের বাজেটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, মুড়িগঙ্গা নদীর উপর সেতু রাজ্য সরকারই তৈরি করবে।আর ভোট মিটতেই সেই সেতু নির্মাণের প্রস্তুতি শুরু করে দিল প্রশাসন।

কবে থেকে এবং কীভাবে এই সেতু তৈরি হবে, নদীর উপর কোন অংশ দিয়ে সেটি যাবে এসব নিয়ে কিছু পরিকল্পনা ও হয়েছে।

সরকারি সূত্রে জানা গেল, ইতিমধ্যে এই সেতুর প্রাথমিক একটি নকশা তৈরি করেছেন ইঞ্জিনিয়াররা। সেখানে দেখা যাচ্ছে, মুড়িগঙ্গা নদীর উপর বসানো বিদ্যুতের টাওয়ার গুলির সমান্তরালে এই সেতুটি তৈরি হবে। পূর্তদপ্তর দপ্তর সূত্রে জানা গেল, এই সেতু তৈরি করতে অন্তত চার-পাঁচ বছর লাগবেই। এই সময়কালে ভেসেল পরিষেবা যাতে বিঘ্নিত না হয়, তা মাথায় রেখেই পরিকল্পনা করতে হচ্ছে। তাই জেটিঘাট থেকে দূরে একটি জায়গা চিহ্নিত করে সেখান থেকে সেতুর কাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তাছাড়া, বহু বছর আগে সমীক্ষা করে লট এইট থেকে কচুবেড়িয়া পর্যন্ত বিদ্যুতের টাওয়ারগুলি নির্দিষ্ট রুট ধরে বসানো হয়েছে।

মোটের উপর ওই পথ ধরেই সেতুটি নিয়ে যাওয়া গেলে বাড়তি পরীক্ষা নিরীক্ষা খুব একটা করতে হবে না।সময় এবং সরকারের খরচ, দু’য়েরই সাশ্রয় হবে। প্রস্তাবিত এই সেতুটির মোট দৈর্ঘ্য হবে ৪.৭৬ কিলোমিটার। দু’টি বাঁক থাকবে সেতুতে।লট এইট এবং কচুবেড়িয়ার দিকে অ্যাপ্রোচ রোড তৈরি করতে ১২ একর জমি প্রয়োজন।

মুড়িগঙ্গার উপরের অংশ হবে ৩১৬৮ মিটারের। লট এইটের দিকে অ্যাপ্রোচ রোড হবে ৯৩২ মিটার এবং কচুবেড়িয়ার দিকে থাকবে ৬৬০ মিটারের অ্যাপ্রোচ রোড। সেই জমি সরকার কিনে নেবে। এখন তার জন্য সমীক্ষা চালানো হচ্ছে। মুড়িগঙ্গা দিয়ে অনেক জাহাজ চলাচলকরে।আর তাই সেই কথা মাথায় রেখে নদীর জলস্তর থেকে ১২ থেকে ১৩ ফুট উচ্চতায় সেতুটি তৈরি করা হবে বলে ঠিক হয়েছে।এও জানা গেল, কল্যাণীর ঈশ্বর গুপ্ত সেতুর যে ধরন, এখানেও ঠিক সেই ধাঁচে সেতু হবে।

ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পরিভাষায় একে বলে ‘পিএসসি সেগমেন্টাল বক্স গার্ডার এক্সট্রা ডোজড ব্রিজ’। এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল, সেতুর কাঠামো সেতুর মূল গার্ডারের শক্তি বৃদ্ধি করবে। নদীর উপর দুটি পিলারের মাঝে ১৫০ মিটারের তফাৎ থাকার কথা রয়েছে। মূল দুই লাইনের সঙ্গে থাকবে একটি রিকভারি লেনও।

অর্থাৎ,তিন লাইনের ক্যারিয়েজওয়ে থাকবে এই সেতুতে। সূত্রের খবর, রাইটসকে এই প্রকল্পের ডিপিআর তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রাজ্য পূর্ত দপ্তরের তরফে। যার শেষ পর্যায়ের কাজ চলছে। তবে প্রকল্পের খরচ অনেকটাই বাড়ছে বলেই জানা গিয়েছে। আগে এই সেতুর নির্মাণ খরচ বাবদ ১২০০ কোটি টাকাধরা হলেও, বর্তমান হিসাব অনুযায়ী এর খরচ গিয়ে দাঁড়াচ্ছে প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা।যার সম্পূর্ণটাই দেওয়া হবে রাজ্যের কোষাগার থেকে। ইতিমধ্যে, দক্ষি ২৪ পরগনার জেলা প্রশাসনের তরফে দুপারেই জমি কেনার কাজ ও শুরু হয়ে গেছে। রাজ্য সরকার চাইছে পুজোর আগেই এই সেতুর শিলান্যাসের কাজটা সেরে ফেলতে। সেই মতো প্রশাসনিক স্তরে তৎপরতা শুরু হয়েছে। 

এই সেতু তৈরি হয়ে গেলে সুন্দরবনের আরও একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ (সাগর দ্বীপ) সড়কপথে জুড়ে যাবে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে। শুধু তাই নয়, কলকাতা থেকে গাড়ি করেই তখন সরাসরি পৌঁছনো যাবে কপিল মুনির আশ্রমে। সুবিধা পাবেন গোটা দেশের লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থী। গঙ্গাসাগর মেলা আরও জমজমাট হয়ে যাবে।

ইতিপূর্বে এভাবে সেতুর মাধ্যমে যুক্ত হয়েছে সুন্দরবনের কাকদ্বীপ পাথরপ্রতিমা, ক্যানিং-বাসন্তী,কুলতলি মৈপীঠের মতো বিভিন্ন এলাকা।

এব্যাপারে সাগরের বিধায়ক তথা রাজ্যের সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী বঙ্কিম চন্দ্র হাজরা বলেন,রাজ্য সরকার তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কথা দিলে কথা রাখতে জানে।

কেন্দ্রকে এতবার বলার পরেও এই সেতু নির্মাণে তাঁরা এগিয়ে এলো না। আমাদের রাজ্য সরকার তাই সেই কাজ করে দেখিয়ে দিতে চলেছে।আর এই সেতু তৈরি হচ্ছে জেনে খুশি সাগরের মানুষ। এই সেতু তৈরি হলে পর্যটনে আলাদা মাত্রা এনে দেবে এই বিচ্ছিন্ন দ্বীপ গঙ্গাসাগর।