Sun, September 22, 2024

ই-পেপার দেখুন
logo

পাঁচ লক্ষাধিক সাইবার প্রতারণার শিকার শান্তিনিকেতনের শিল্পী


Bipasha Chakraborty   প্রকাশিত:  ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১২:৫১ এএম

পাঁচ লক্ষাধিক সাইবার প্রতারণার শিকার শান্তিনিকেতনের শিল্পী

দেবশ্রী মজুমদার, শান্তিনিকেতন : সিবিআইয়ের ভুয়ো পরিচয় দিয়ে পাঁচ লক্ষাধিক টাকার প্রতারণা করলো সাইবার অপরাধীরা। ঘটনাটি ঘটেছে বীরভূমের শান্তিনিকেতনের পূর্বপল্লীতে। এই সাইবার অপরাধীদের খপ্পড়ে পড়েন শান্তিনিকেতনের বাসিন্দা তথা এক প্রসিদ্ধ শিল্পী। নাম সুনিধি নায়েক।  বিশ্বভারতীর সঙ্গীত ভবনের প্রাক্তন ছাত্রী তিনি।  তার নিজের বাড়ি আসানসোল হলেও কর্মসূত্রে তিনি শান্তিনিকেতনের পূর্বপল্লিতে একটি ভাড়াবাড়িতে থাকতেন। অভিযোগ,  সঙ্গীত শিল্পীকে সিবিআই পরিচয় দিয়ে প্রাণনাশেরও হুমকি দেয় অপরাধীরা।



বুধবার হুমকি দেওয়ার ঘটনাটি ঘটে। বৃহস্পতিবার তার নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে পাঁচ লক্ষাধিক টাকা অপরাধীদের ট্রান্সফার করেন অভিযোগকারীনি। তারপর শান্তিনিকেতন থানার দ্বারস্থ হয়েছেন বিশ্বভারতীর প্রাক্তন ছাত্রী। ঘটনার তদন্তে শান্তিনিকেতন থানার পুলিশ। তার দাবি, বাড়ির বাইরে অজ্ঞাত পরিচয় মানুষজনদের ঘোরাফেরা করতে দেখেছেন তিনি। তিনি জানান,  দুষ্কৃতীরা তাকে সিবিআই পরিচয় দিয়ে ভিডিও কলের মাধ্যমে প্রায় গোটা দিন হোম অ্যারেস্ট করে রেখেছিল।


এরপর তাকে ও তার বাবাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে অনলাইন মাধ্যমে সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকা আদায় করে সাইবার দুষ্কৃতীরা। তাৎপর্যপূর্ণভাবে তার ভাড়া বাড়ির ১০০ মিটারের মধ্যে রয়েছে শান্তিনিকেতন থানা ও এসডিপি অফিস। ‌ ফলে নতুন ধরণের এই অপরাধের বিষয়টি জানাজানি হতেই শান্তিনিকেতনে তীব্র চঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। যদিও অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে শান্তিনিকেতন থানা।
সুনিধি শান্তিনিকেতনের সঙ্গীত ভবনে রবীন্দ্র সঙ্গীত নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন।


নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিকড়ের টানে মাঝে মাঝেই থাকতেন শান্তিনিকেতনে। এর জন্য তিনি পূর্বপল্লিতে একটি বাড়ি ভাড়াও নিয়েছিলেন। একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন করে তাকে হুমকির সুরে বলা হয় “সিবিআই থেকে বলছি আপনার বিরুদ্ধে ব্যাংকের আর্থিক তছরূপের অভিযোগ রয়েছে। ভিডিও কলের মাধ্যমে আপনাকে হোম অ্যারেস্ট করা হলো।


ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি আপনার উপর নজরদারি চালাচ্ছে। চালাকি করলেই বিপদ। আপনাকে ও আপনার বাবা নিধিরাম নায়েককে প্রয়োজনে প্রাণনাশ করতেও আমরা পিছপা হবো না। আসানসোলের বাড়িতে সামনে আপনার বাবার উপর নজরদারি চালানো হচ্ছে। এই কথাগুলি শুনে অত্যন্ত আতঙ্কিত ও হতভম্ব হয়ে পড়েন সুনিধি।


এরপর অসহায়তা সুযোগ নিয়ে অ্যাকাউন্ট যত টাকা আছে সমস্ত পাঠানোর জন্য তাকে নির্দেশ দেয় দুষ্কৃতীরা। ‌কী করবেন বুঝতে না পেরে দুষ্কৃতীদের কথামতো তার অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকা তাদের দেওয়া অ্যাকাউন্ট নম্বরে তিনি পাঠিয়ে দেন। ‌ টাকা পেতেই দুষ্কৃতীরা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। ‌বাইরে দুষ্কৃতীরা অপেক্ষা করছে এই আশঙ্কায় মোবাইলের মাধ্যমে কোনওক্রমেই স্থানীয় বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করে শান্তিনিকেতন থানায় গভীর রাতে অভিযোগ জানান। 


শান্তিনিকেতনে নিজের নিরাপত্তা নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। ‌এপ্রসঙ্গে তিনি বলেন “দুষ্কৃতীরা যেভাবে তার সঙ্গে কথা বলেছিলেন তাতে কোনোভাবেই মনে হয়নি তারা অপরাধমূলক কাজের জন্য যুক্ত। তাদের দাবি ছিল আমার ক্রেডিট কার্ড থেকে আর্থিক তছরূপ হয়েছে।‌ সাম্প্রতিককালে দেশের কয়েকশো কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়া ব্যবসায়ীর সঙ্গে এর যোগ রয়েছে।


সেজন্য বাবা ও আমার ওপর নজরদারি রেখেছে পুলিশ। চালাকি করা হলে প্রাণনাশেরও হুমকি দেওয়া হয়। এই বিষয়টি বলার পর থেকেই আমি হতভম্ব হয়ে গেছিলাম। তারপরেই হুমকি দিয়ে তারা আমার অ্যাকাউন্ট থেকে সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকা আদায় করে।” তবে অভিযোগের পরেই নড়েচড়ে বসেছে শান্তিনিকেতন থানা। সংশ্লিষ্ট নম্বরগুলোর বিরুদ্ধে সাইবার আইনে তদন্ত শুরু হয়েছে।