Sun, September 29, 2024

ই-পেপার দেখুন
logo

ছাত্রীর রহস্যমৃত্যুতে ফরেনসিক তদন্তে বিশ্বভারতীতে আধিকারিকরা


Bipasha Chakraborty   প্রকাশিত:  ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ০৬:৫৯ এএম

ছাত্রীর রহস্যমৃত্যুতে ফরেনসিক তদন্তে বিশ্বভারতীতে আধিকারিকরা

দেবশ্রী মজুমদার, শান্তিনিকেতন : পুলিশের হাতে হুমকিমূলক হোয়াটস অ্যাপ চ্যাট আসার পর পুলিশ খতিয়ে দেখছে মৃত বিশ্বভারতীর ছাত্রী কোনো ব্ল্যাকমেলিংয়ের শিকার হয়েছিল কিনা?


যে চ‍্যাটটি মৃত্যুর আগে এক বান্ধবীর হোয়াটসএ‍্যাপে ফরওয়ার্ড করা হয়েছিল, তাতে লেখা," চ‍্যাটে  আপ ধামকি দে রেহে হে? ওয়েট কারো মালুম চলেগা…।" বিশ্বভারতীর ছাত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর এমনই হুমকি ভরা হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট হাতে পেয়েছে শান্তিনিকেতন থানার পুলিশ।


বোনের গুরুতর দুর্ঘটনা ঘটেছে অপারেশনের জন্য পাঁচ লক্ষ টাকার প্রয়োজন এইভাবেই সাহায্য চেয়ে বন্ধু ও অধ্যাপকদের কাছে অর্থ সংগ্রহ করেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পসদনের মৃত ছাত্রী অনামিকা সিং। কিন্তু পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে এমন কোনও ঘটনায় ঘটেনি। তাহলে কেন এত টাকার প্রয়োজন হয়েছিল? যার জন্য সহপাঠী ও অধ্যাপকদের এমন মেসেজ করতে বাধ্য হয়েছিল অনামিকা? 


অনামিকাকে কে ব্ল্যাকমেল করছিল? তার উদ্দেশ্যই বা কী? সেই বিষয়গুলোই এখন খতিয়ে দেখে তদন্ত শুরু করেছে শান্তিনিকেতন থানা।


গত ৭ আগস্ট বন্ধু ও অধ্যাপকদের একটি হোয়াটস্অ্যাপ গ্রুপে অনামিকা লিখেন “আমি স্নাতক তৃতীয় বর্ষের পঞ্চম সেমিস্টারের ছাত্রী। আমার বোনের একটি গুরুতর দুর্ঘটনা ঘটেছে। অপারেশনের জন্য ৫ লক্ষ টাকার প্রয়োজন। আমার পরিবার ইতিমধ্যেই চার লক্ষ ৩০ হাজার টাকা যোগাড় করতে পেরেছে। ‌ অপারেশনের করতে এখনও ৭০ হাজার টাকা প্রয়োজন। আর্থিক সাহায্যের জন্য সকলকে অনুরোধ করছি।‌ অপারেশনের পর  সকলকেই টাকা ফিরিয়ে দেবো।”


এই ঘটনায় শিল্প সদনের কমবেশি সকলেই তাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে প্রায় ৭০ হাজার টাকা তার অ্যাকাউন্টে জমা করেন। কিন্তু তারপর থেকেই অনামিকাকে খুব বেশি শিল্পসদনে দেখা যেত না। এমনকি, শিক্ষক দিবসের দিনেও তাকে দেখা যায়নি। বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি একা একা থাকছিলেন। এমনটাই তার সহপাঠীরা জানিয়েছেন। তিনি শান্তিনিকেতনের আম্রপালি হস্টেলে থাকতেন।


বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তার রুমমেটরা তাকে অসুস্থ অবস্থায় দেখতে পেলে তড়িঘড়ি ওয়ার্ডেনকে ডাকেন। হস্টেল সূত্রে জানা গিয়েছে ওয়ার্ডেনকে অনামিকা বলেন “বিষ খেয়েছি আমাকে বাঁচান” তিনি ক্রমাগত বমি করতে থাকলে তাকে তড়িঘড়ি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিয়ারসন মেমোরিয়াল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু অবস্থা অবনতি হওয়ায় বোলপুর মহকুমা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। কিন্তু ওই রাতেই তার মৃত্যু হয়। কর্তৃপক্ষের তরফে তার পরিবারকেও খবর দেওয়া হলে শুক্রবার সকালে বোলপুরে অনামিকার বাবা, মা ও দাদা উপস্থিত হন। ‌সেখানে সাংবাদিকদের মা প্রেমলতাদেবী বলেন কোনও কিছুর চাপে পড়েই মেয়ে এই পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরা সত্য জানতে চাই। ‌


ঘটনা প্রসঙ্গে তার এক সহপাঠিনী  বলেন, টাকা পাঠানোর পরেও অনামিকা উৎকণ্ঠায় ছিল। জিজ্ঞেস করাই সে হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটে জানাই “আমার শরীর ঠিক নেই, এক ব্যক্তি লোনের জন্য আমাকে মানসিক অত্যাচার করছেন” আমার কাছে টাকা কম। তারপরও আমাকে হুমকি দিচ্ছেন। কী করবো কিছু বুঝতে পারছিনা” এরপর অনামিকা অভিযুক্তের সঙ্গে সমস্ত হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটের কথোপকথন তার ওই বান্ধবীকে পাঠিয়ে দেন। বিস্ফোরক সেই কথোপকথনে এক ব্যক্তি অনামিকাকে হুমকি দিয়ে লেখেন “রুপিয়া এরেঞ্জ কিজিয়ে। কেয়া হোনে বালা মালুম চলেগা আপকো। এর প্রেক্ষিতে অনামিকা লেখেন কিয়া কারেঙ্গে আপ? ধামকি দে রেহে হে? তাতে হুমকিবাজ উত্তরে লেখেন ওয়েট করো মালুম চালেগা…।”


অর্থাৎ কোনও কিছুর বিষয়ে অনামিকাকে হুমকিবাজ ব্ল্যাকমেইল করছিলেন। এদিকে অধ্যাপক ও সহপাঠীদের দেওয়া টাকাও অনামিকার অ্যাকাউন্টে নেই। পরিবর্তে দুটি অ্যাকাউন্টে সেই টাকা পাঠানো হয়েছে বলে পুলিস জানতে পেরেছে। সেই অ্যাকাউন্টগুলি কার? কী কারণে অনামিকা তাকে টাকা পাঠিয়েছিল। এই উত্তরগুলি পেলেই অনামিকার মৃত্যুর কারণ জানা যাবে। পাশাপাশি অভিযুক্তকেও ধরা যাবে এমনটাই পুলিসের এক আধিকারিক জানিয়েছেন। 


এদিকে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে ফরেনসিকের সুবিধা না থাকায় মৃতার দেহ ময়নাতদন্তের জন্য রামপুরহাট মেডিকেল কলেজে পাঠিয়েছে পুলিশ। তদন্তে যেন কোন খামতি না থাকে সেই জন্যই এই ব্যবস্থা বলে পুলিশ জানিয়েছে।