Sun, September 29, 2024

ই-পেপার দেখুন
logo

বন্যার কবলে বাংলাদেশ


ইমামা খাতুন   প্রকাশিত:  ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ০৭:৫৩ এএম

বন্যার কবলে বাংলাদেশ

বিশেষ প্রতিবেদক: হঠাৎ বন্যা পরিস্থিতি তীব্র আকার ধারণ করেছে বাংলাদেশের ফেনী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা অঞ্চলে। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা দাড়িয়েছে ফেনীর ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া উপজেলায়। বন্যার পানিতে  তলিয়ে গেছে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, ফসলি জমি। এখনো হাজারো মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে এসব জায়গায়।  এমন পরিস্থিতিতে এসব এলাকা পুরোপুরি বিদ্যুতহীন হয়ে পড়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে মোবাইল নেটওয়ার্কও। বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে ত্রিপুরাতেও।  

 

বন্যায় সেখানে এখন পর্যন্ত সাতজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এমন পরিস্থিতিতে ভারতের ত্রিপুরার ডম্বুর  হাইড্রোইলেক্ট্রিক পাওয়ার প্রজেক্ট বা ডম্বুর গেট খুলে দিয়েছে ভারত। ফলে হু হু করে পানি ঢুকছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশের নাগরিকদের একাংশের অভিযোগ, হাসিনা সরকারের পতনের ‘প্রতিশোধ’ নিতেই গেট খুলে দিয়ে বন্যার  মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশকে। ফেনীর নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দারা বলছেন, এই এলাকায় ১৯৮৮ সালের পর  বন্যা পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ হয়নি আগে কখনো। ফেনীর জেলা প্রশাসক শাহীনা আক্তার বলেন, পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, সবার কল্পনার বাইরে।  

 

এখন অনেক মানুষ পানিতে আটকা পড়েছে। তাদেরকে উদ্ধারে কাজ শুরু করেছে সেনাবাহিনী ও কোস্টগার্ড। চলমান বন্যায় দেশটির ৮ জেলার ৩৫৭টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ৪ লাখ ৪০ হাজার ৮৪০টি  পরিবার। মোট ক্ষতিগ্রস্ত লোকের সংখ্যা ২৯ লাখ ৪ হাজার ৯৬৪। এখন পর্যন্ত মারা গেছেন দুজন। একজন ফেনীতে,  আরেকজন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। বন্যাদুর্গত জেলা আটটি হলো ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম,  খাগড়াছড়ি, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ। এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৫৩৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে ৭৫ হাজারের বেশি মানুষ।  


বন্যার জন্য ভারতকে দোষ দেওয়ায় পালটা প্রতিক্রিয়া দিয়েছে কেন্দ্র সরকার। এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আমরা  উল্লেখ করতে চাই যে, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত গোমতী নদীর অববাহিকা এলাকায় কয়েক দিন ধরে  এ বছরের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশে এ বন্যা মূলত বাঁধের ভাটির দিকের বৃহৎ অববাহিকার  পানির কারণে ঘটেছে। বুধবার থেকে পুরো ত্রিপুরা এবং বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে পানির চাপে বাঁধ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পানি ছাড়ার ঘটনা দেখা গেছে।’ 


ভারি বৃষ্টিতে গত সোমবার দুপুর থেকে পানি বাড়তে শুরু করে মহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীতে। বিভিন্ন স্থানে  বাঁধের ভাঙা জায়গা স্থান দিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে। মঙ্গলবার সকালে থেকে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি  হয়।

 

একে একে তলিয়ে যেতে থাকে পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়ার এলাকা। স্থানীয় সাংবাদিক দিলদার হোসেন  নোমান বলেন, এখন পর্যন্ত ওই তিনটি উপজেলার অন্তত ৯৫ শতাংশ এলাকা পানির নিচে ডুবে গেছে। এমন কোনও  বাড়িঘর নেই যেখানে বন্যার পানিতে তলায়নি।

 

মানুষের পাশাপাশি গৃহপালিত পশু পাখিও এখন পানিবন্দি। বুধবার সকাল থেকে বাড়িঘর ছেড়ে দিতে হয়েছে  অনেককে। চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির শতাধিক গ্রাম তলিয়েছে পানির নিচে। এই এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, গত তিন দশকেও এই এলাকায় এমন বন্যা পরিস্থিতি দেখেননি তারা।