Sun, September 29, 2024

ই-পেপার দেখুন
logo

ঈদ পালন পরে, আগে উদ্ধারকাজে হাত লাগান’, মসজিদের নির্দেশ পেয়ে কুরবানি বন্ধ রেখে ঝাঁপিয়ে পড়ল মুসলিম অধ্যুষিত  নির্মলজোত গ্রাম


Bipasha Chakraborty   প্রকাশিত:  ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ০৬:৪০ এএম

ঈদ পালন পরে, আগে উদ্ধারকাজে হাত লাগান’, মসজিদের নির্দেশ পেয়ে কুরবানি বন্ধ রেখে ঝাঁপিয়ে পড়ল মুসলিম অধ্যুষিত  নির্মলজোত গ্রাম


পুবের কলম প্রতিবেদক: সোমবারের সকালটা ছিল একটু অন্যরকম। কারণ ১৭ জুন ছিল ঈদ উল আযহা। এই দিনটি প্রতিটি মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে একটি বিশেষ মর্যাদা বহন করে। সেই পরবের উৎসবেই মেতে ছিল বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ফাঁসিদেওয়া ব্লকের মুসলিম অধ্যুষিত গ্রাম নির্মলজোত। ঈদের নামায শেষে চলছিল কুরবানির প্রস্তুতি। কিন্তু সেই আনন্দের যেন হঠাৎই ছন্দপতন। নামায শেষে পুরুষরা বাড়ি ফিরে এসেছেন, ঘরে ঘরে বিশেষ মেনুর প্রস্তুতি, কিন্তু হঠাৎ-ই কান ফাটানো বিকট শব্দ। মানুষ ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ে উদভ্রান্তের মতো রেললাইনের দিকে দৌড়তে থাকে। তারপরেই চোখে পড়ে সেই বীভৎস অবস্থা। একটি ট্রেনের উপর উঠে গেছে অপর একটি ট্রেন। এক মুহূর্তে মধ্যে তখন গ্রামের চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে সেই ভয়াবহতার খবর। দলে দলে মানুষ এসে ভিড় জমাতে থাকে। আর ঠিক তখনই মসজিদ থেকে ভেসে আসে একটি নির্দেশ। এখন পরব স্থগিত রেখে আগে দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধারকাজে আপনারা হাত লাগান। মৌলবীরাও দ্রুত ঘটনাস্থলের দিকে যেতে নির্দেশ দেন। 
নির্দেশ পেয়ে আর দেরি করেনি কেউই। গোটা গ্রামটাই যেন এসে দাঁড়িয়ে গেল উদ্ধারকাজের সহযোগিতায়। 
আমিনা বিবি নামে এক গৃহবধূ জানান, এই রকম দিন দেখব ভাবিনি কখন। সকাল থেকেই ঈদ নিয়ে অনেক পরিকল্পনা ছিল। আনন্দ যেন এক নিমেষেই উবে গেল। চোখের সামনে এমন বীভৎস দৃশ্য দেখে গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। মসজিদের নির্দেশ পেয়ে এক মুহূর্ত দেরি করিনি। বাড়ির পুরুষরা তো গিয়েছিল, তাদের সঙ্গে আমরাও যাই। আমাদের সেই সময় মনে হয়েছিল, ঈদের পরব আবার আসবে, কিন্তু যদি মানুষকে একটু সাহায্য করতে পারি, সেটাই আমার সব বড় নিবেদন হবে আল্লাহর প্রতি’। 
পাশাপাশি সুলতানা বিবি জানান, বাড়িতে যা খাবার ছিল সেগুলি সমেত জল নিয়ে ছুটে যাই। সারাদিন আমরা ওখানেই লড়াই চালিয়ে গেছি। বাদ দিয়েছি পরবের আনন্দ। সেই সময় আর আনন্দ করার কথা পরিকল্পনা মাথায় ছিল, অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানো মূল উদ্দেশ্য ছিল।‘
মেহেরউন্নেসা জানান, বাড়িতে ঈদের দিন অনেক কাজ থাকে। সেই সাজগোজ, আনন্দ সব কিছুই চলতে থাকে। কুরবানি মাংস কিভাবে বন্টন করা হবে, সেই নিয়েই পরিকল্পনা চলছিল। সেই সময় হঠাৎ বাজ পরার মতো কান ফাটানো আওয়াজ। তাই পরেই মসজিদ থেকে পরব স্থগিত রেখে উদ্ধারকাজে হাত লাগানোর নির্দেশ। আর বুঝতে বাকি থাকেনি কি হয়েছে। 

বাংলাদেশ লাগোয়া এই নিজামতারা পঞ্চায়েতের  নির্মলজোত গ্রামে প্রায় শ’ দেড়েক পরিবারে বাস। অধিকাংশের পেশাই কৃষি।  চারদিকে যখন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সাম্প্রদায়িক হিংসা বলে হিন্দু-মুসলিম বিভাজনে চেষ্টা চলছে, তখন নির্মলজোত গ্রাম দেখিয়ে দিল ‘মনুষ্যত্ব’ কাকে বলে।