Mon, September 30, 2024

ই-পেপার দেখুন
logo

বাংলাদেশের অশান্তির আঁচ ওড়িশায়, পরিযায়ী শ্রমিককে হেনস্থা, চাওয়া হল আঁধার কার্ড


Bipasha Chakraborty   প্রকাশিত:  ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ০৫:৫৮ পিএম

বাংলাদেশের অশান্তির আঁচ ওড়িশায়, পরিযায়ী শ্রমিককে হেনস্থা, চাওয়া হল আঁধার কার্ড

 

দেবশ্রী মজুমদার,  রামপুরহাট: বাংলাদেশের অশান্তির আঁচ পড়ল ওড়িশায়।  এক পরিযায়ী শ্রমিকে হেনস্থার অভিযোগ।  ওই ব্যক্তি বীরভূমের বাসিন্দা ওড়িশায় ফেরিওয়ালার কাজ করেন। ওই ব্যক্তির অভিযোগ, তিনি আঁটকালো গ্রামে যখন ফেরির কাজ করছিলেন তখন তার কাছ থেকে আধার কার্ড দেখতে চাওয়া হয়। পরে তাকে ওড়িশা ছেড়ে যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়, এমনকি ওই গ্রামের মধ্যে তাকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।  ওই ফেরিওয়ালার নাম আনিসুর রহমান ওরফে আলি আনিসুর হক। বাড়ি নলহাটির কয়থায়।  বর্তমানে ঘটনার ভিডিয়োটি ভাইরাল হয়েছে। যদিও ভিডিওর সত‍্যতা যাচাই করেনি পুবের কলম ডিজিটাল। 

ভিডিওটিতে দেখা যায় ওড়িশার এক গ্রামে প্রবেশ করার মুখে ওই ফেরিওয়ালাকে আটকায় এক ব‍্যাক্তি। সে ফেরিওয়ালাকে বাংলাদেশী বলে দেগে দেয়। তার কাছে আধার কার্ড দাবি করে। ফেরিওয়ালা আনিসুরকে বলতে শোনা যায়, আমি পঁচিশ বছর ধরে ওড়িশা আসছি। কিন্তু তারা তার কোনো কথা শুনতে চায়নি। কিছু মাল উঠিয়ে নেয় তার সাইকেল থেকে। পরে অবশ‍‍্য তা ফেরত দেয়। ফেরিওয়ালাকে দেখা যায় তিনি তাদের কথা মতো, বাড়িতে ফোন করে আধার কার্ড চেয়ে নেন। কিন্তু সেই আধার কার্ডেও তারা সন্তুষ্ট না হয়ে বলে জায়গার নাম কৈ?

 

ওই পরিযায়ী শ্রমিকের আরও দাবি তাকে গ্রামে প্রথমে এক হিন্দুত্ববাদি ব্যক্তি তার পথ আটকে দাঁড়ায়। প্রথমে চড় থাপ্পড়, সাইকেল থেকে সমস্ত মালপত্র মাটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেওয়া হয়। মারধরের পর ভিডিও করা হয় বলে ফেরিওয়ালার দাবি।  ওড়িশার জাজপুর জেলার মঙ্গলপুর গ্রামে এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। 

ফেরিওয়ালা জানান, তার বাড়ি বীরভূমের নলহাটির কয়থায়। রামপুরহাট মহকুমা। সদর সিউড়ী। বোলপুর, শান্তিনিকেতন। কিন্তু তাদের বিশ্বাস না হওয়াই তারা তাকে গ্রাম থেকে বের করে দেন। তারা বলতে থাকেন, বাংলায় ভুয়ো কার্ড করে দেওয়া হয়। বাংলাদেশে হিন্দুদের খেদায় দাও। আনিসুর ফেরিওয়ালা বোঝাতে থাকেন, কোথা বাংলাদেশ, কোথা ইন্ডিয়া, কোথা পাকিস্তান! আমার বাপ ঠাকুর্দার আমল থেকে আমরা ইন্ডিয়ায় আছি। ওই ব‍্যক্তি বলতে থাকেন, ওড়িশায় এখন বিজেপি। সরকার পাল্টেছে। কাটিহারে মুসলমান আছে। ওখান দিয়ে ঢুকেছো। ওখানে ঢোকা বন্ধ করতে হবে।  এখন ভাগো। ওড়িশা ছাড়ো। 

আনিসুর তার প্রাথমিক হতভম্ব ভাব কিছুতেই কাটিয়ে উঠতে পারছিল না। বার বার তার মুখে বিড়ির আগুন নিভে আসছিল। তার পরিচিত ব‍্যবসার জায়গা বদলে যাচ্ছিল। ওই লোকটাকে দেখে নেতা গোছের মনে হচ্ছিল। তার গলায় ছিল গামছার মতো কিছু। লোকজন জড়ো হলেও, কেউ তার পাশে ছিল না। আনিসুর বলছিলেন, সন্দেহ হলে আমার সিমটা নিয়ে দেখুন। ফোন নাম্বার লিখে রাখুন।  থানায় জানান।

হাত থেকে তার ফোন নিয়ে সার্চ করে আনিসুরের হাতে ফিরিয়ে দিয়ে, একটাই রায়- ওড়িশা ছাড়ো। আনিসুর তার মাল সাইকেলে ভালো করে বেঁধে রাস্তা ছাড়লো। তার চেনা সর্পিল রাস্তা আরও অচেনা মনে হলো তার।

ফেরিওয়ালা বর্তমানে তার ডেরায় নিরাপদে আছেন। সেখানে আট দশজন মিলে আছেন। নিরাপত্তার কারণে তারা কোথায় আছে সেটি গোপন রাখা হলো। ফেরিওয়ালা আনিসুর জানান, আমরা দিনে বের হতে সাহস পাচ্ছি না। রাতে মোটরসাইকেলে করে বের হয়ে ট্রেনে বাংলা ফিরে যাব। আর ওড়িশায় আসব না। জানা গেছে, তার এক ছেলে সাকির হোসেন ওড়িশাতেই আছেন। সেখানে তিনি  ঠিকাদারির কাজ করেন। তারও একই অবস্থা। তাকেও বাংলাদেশী দেগে মারধর করার ঘটনা ঘটে। কোনো ক্রমে দৌড়ে পালিয়ে জীবন রক্ষা করে তারা।

আনিসুর তার প্রাথমিক হতভম্ব ভাব কিছুতেই কাটিয়ে উঠতে পারছিল না। বার বার তার মুখে বিড়ির আগুন নিভে আসছিল। তার পরিচিত ব‍্যবসার জায়গা বদলে যাচ্ছিল। ওই লোকটাকে দেখে নেতা গোছের মনে হচ্ছিল। তার গলায় ছিল গামছার মতো কিছু। লোকজন জড়ো হলেও, কেউ তার পাশে ছিল না। আনিসুর বলছিলেন, সন্দেহ হলে আমার সিমটা নিয়ে দেখুন। ফোন নাম্বার লিখে রাখুন। থানায় জানান। হাত থেকে তার ফোন নিয়ে সার্চ করে আনিসুরের হাতে ফিরিয়ে দিয়ে, একটাই রায়- ওড়িশা ছাড়ো। আনিসুর তার মাল সাইকেলে ভালো করে বেঁধে রাস্তা ছাড়লো। তার চেনা সর্পিল রাস্তা আরও অচেনা মনে হলো তার।

আনিসুরের বাড়িতে নলহাটির কয়থার পোদ্দার পাড়ায় সরিফা বিবি তার দুই মেয়েকে নিয়ে আছেন। স্বামী ও ছেলেকে নিয়ে খুবই চিন্তায় আছেন। সরিফা বিবি বুঝতে পারছেন না হঠাৎ উড়িষ্যার পরিস্থিতি কেন পাল্টালো। একই অবস্থা আটকে পড়া আনিসুরের।

তবে আনিসুর প্রতিবেদককে জানান, সবাইতো খারাপ হয় না। যেমন একজন আমাকে ওড়িশায় ঢুকলে প্রাণে মারার হুমকি দেন। এক চায়ের দোকানদার সহ বেশ কয়েকজন মিলে আমাকে নিরাপদে মেইন রাস্তায় তুলে দেন। এবং সেই চায়ের দোকানের সামনে কাউকে গায়ে হাত দিতে দেয়নি।

এব‍্যাপারে নলহাটির কয়থার ওয়ার্ড মেম্বার সামিম মোমিন বলেন,  ওড়িশায় বিজেপি আসার পর পরিস্থিতি পাল্টেছে। আমাদের বাংলা এমন নয়। তবে ওরা নিরাপদে আছে। ওদের সঙ্গে এবং পরিবারের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে।