Sun, September 29, 2024

ই-পেপার দেখুন
logo

শেখ হাসিনার আয়নাঘরঃ এক বিভীষিকাময় গুমখানা


ইমামা খাতুন   প্রকাশিত:  ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ০৯:৪৯ এএম

শেখ হাসিনার আয়নাঘরঃ এক বিভীষিকাময় গুমখানা

পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক:  বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই-একদম ঝাঁ চকচকে। কাচ লাগানো বহুতল সেনা-গোয়েন্দা অফিস। কিন্তু তার ভেতরেই ছিল গোপন অত্যাচার-কুঠুরি। নাম তার ‘আয়নাঘর’। শেখ হাসিনার পতনের পর ‘আয়নাঘর’ আলোচনায় উঠে এসেছে।

এভাবেই আইনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে হাসিনা সরকার তৈরি করেছিল এমন অমানবিক নির্যাতন সেল। ভাবতেই শিউরে উঠছেন বিশ্বের মানুষ। এত নৃশংস, ছি! ছাত্র অভ্যুত্থানের পর সেখান থেকে তিনজন বন্দি মুক্তি পেয়েছেন। গত দুই দিন ঢাকার কচুক্ষেতে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুম হওয়া মানুষের খোঁজে ভিড় জমাচ্ছেন স্বজনরা। 

আয়নাঘর কী?

বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর কাউন্টার-টেরোরিজম ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (সিটিআইবি) দ্বারা পরিচালিত একটি গোপন আটক কেন্দ্রের নাম আয়নাঘর। ধারণা করা হয়, এখানে কমপক্ষে ১৬টি কক্ষ রয়েছে, যেখানে একসঙ্গে ৩০ বন্দি রাখার সক্ষমতা রয়েছে। আওয়ামী আমলেই তৈরি হয়েছে এই সেল। বাংলাদেশের কর্তারা আয়নাঘরে বলপূর্বক গুমের শিকারদের আটক ও নির্যাতন করেছে। আয়নাঘর। শুনতে যতটা সাদামাটা ততটাই রহস্যময়। 

শেখ হাসিনার আমলে তৈরি এই আয়নাঘরেই রাখা হতো গুম করে রাখা মানুষদেরকে। আলো বাতাসহীন একটি কক্ষ। সেখানে সারাক্ষণ ঘড়ঘড়িয়ে চলে ফ্যান। শেখ হাসিনার আমলে বিরোধীদলের বহু নেতাকর্মী নিখোঁজ হয়ে গেছে। তারা কোথায় তাদের কোনো খোঁজ নেই। এমনকি সেনাবাহিনীর লোকজন রয়েছেন ওই তালিকায়। আয়নাঘর আসলে গোয়েন্দাদের একটি গোপন বন্দিশালা বা ডিটেনশন ক্যাম্প। 

হাসিনার শাসনকালে ২০০৯ সাল থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সেখানে মোট ৬০৫ জনকে গোপনে বন্দি করে রাখা হয়েছিল। আয়নাঘর থেকে সম্প্রতি ছাড়া পেয়েছেন বাংলাদেশী ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাসেম, সাবেক সামরিক জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আজমি, পার্বত্য চট্টগ্রামের মাইকেল চাকমা। বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ এইসব ঘটনার জন্য রাষ্ট্রসংঘ ও বিভিন্ন মানবাধিকার রক্ষাকারী সংস্থা, যেমন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ সরকারকে নিন্দা প্রস্তাব জানায়। 

২০২৪ সালের হিউম্যান রাইটস ওয়াচের রিপোর্ট অনুযায়ী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার বছর, ২০০৯ সাল থেকে তার পতন পর্যন্ত বাংলাদেশে ৬০০টিরও বেশি গুম হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। রিপোর্ট অনুযায়ী আয়নাঘর থেকে খুব কম বন্দি মুক্তি পেয়েছে। তবে কিছু বন্দিকে দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মুক্তি দেওয়া হয়। অনেকেই আবার এনকাউন্টারের শিকার হয়েছেন। বাংলাদেশে এজাতীয় ঘটনার তদন্ত প্রায় হয়নি বললেই চলে।

আয়নাঘরে রাখা অনেকেই দিনের পর দিন অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে মারা যায়। তারপর লাশ সরিয়ে দেওয়া হয়। যাদের গ্রেফতার করা হয় তাদের খাতা-কলমে কোনো তথ্য রাখা হয় না। আর যারা হাসিনার আস্থাভাজন ছিলেন তারাই আয়নাঘরের দায়িত্ব পেতেন। আয়নাঘরের বন্দিদের সঙ্গে তাদের পরিবারের সদস্যদের দেখা করা বা যোগাযোগের কোনও আইন ছিল না। বুধবার মধ্যরাতে আমান আযমী পরিবারের সদস্যদের কাছে ফিরেছেন।

২৯১৭ দিন কীভাবে কেটেছে আয়না ঘরে তার কিছু বর্ণনা পরিবারের সঙ্গে দিয়েছেন সাবেক এই সেনাকর্মকর্তা। তার ব্যাগে থাকা একটি গামছা বের করে বলেন, এ গামছাটি আমি নিয়েছিলাম নামায পড়ার জন্য; কিন্তু এটা দিয়ে যে পরিমাণ চোখের পানি আমি মুছেছি তা দিয়ে একটি দিঘি বানানো যেত।

তার ব্যাগে থাকা পবিত্র কুরআন খুলে দেখিয়ে তিনি বলেন, ৮ বছর এ কুরআন পড়েছি। এটা অনেক ছিড়ে গেছে। এটাই অনেক জোড়া-তালি নিজেই দিয়েছি। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ২২ আগস্ট দিবাগত রাতে আমান আযমীকে তুলে নেওয়া হয়। পরে আবদুল্লাহিল আমান আযমীকে সেনাবাহিনী থেকে বাধ্যতামূলক অব্যাহতি দেয় আওয়ামী লীগ সরকার।