Sun, September 29, 2024

ই-পেপার দেখুন
logo

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রয়াণ, এক যুগের অবসান


Bipasha Chakraborty   প্রকাশিত:  ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ০৫:৪৪ এএম

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রয়াণ, এক যুগের অবসান

 

 

পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: দীর্ঘরোগ ভোগের অবসানে আজ চলে গেলেন বাম আমলের সর্বশেষ মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। গত বছরেও হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। অবস্থা কিছুটা স্বাভাবিক হতেই তিনি তাঁর প্রিয় পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতে ফিরে আসেন। তবে বাড়িতেও অসুস্থ অবস্থায় ছিলেন তিনি। তাঁর পর্যবেক্ষণে ছিলেন চিকিৎসকেরা। গতবার তাঁকে ফিরিয়ে এনেছিলেন চিকিৎসকেরা। এবারে আর ফেরানো গেল না, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের। গতকাল রাত থেকেই শারীরিক অবনতি হতে থাকে। বৃহস্পতিবার সকাল ৮.২০ নাগাদ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চিরবিদায় নিলেন তিনি।

 

বুদ্ধদেব ভর্টাচার্যের জন্ম ১৯৪৪ সালের ১ মার্চ। একজন তুখোড় রাজনীতিবিদ ছাড়াও সাংস্কৃতিক জগতে ছিল তাঁর অবাদ বিচরণ। রাজনীতি আঙিনায় তাঁর বিতর্কিত মন্তব্যে ঘিরে রাজ্যে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছিল। একটা সময় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মাদ্রাসাগুলির দিকে তীব্র আক্রমণ শানিয়ে বলেছিলেন,’ ‘মাদ্রাসাগুলি সন্ত্রাসী তৈরির কেন্দ্র'। ২০০২ সালে তাঁর করা এই মন্তব্য রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্কের জন্ম দেয়। পরে জ্যোতি বসু ও অন্যান্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের চাপে সেই কথা অস্বীকার করে নেন তিনি। 

সাহিত্য জগতে অবাধ বিচরণ ছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের। ছাত্র জীবনে রাজনৈতিক জীবনের পাশাপাশি সাহিত্যের সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন তিনি। তাঁর পড়ার টেবিলে মার্কস, এঙ্গেলস, লেনিন, রবীন্দ্রনাথ, মায়োকোভস্কি, কামু, কাফকা, মার্কেজের বই থাকত। শরীর যতদিন সুস্থ ছিল, কলকাতা শহরে ভালো নাটক, ভালো সিনেমা মিস করতেন না তিনি। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন ১৯৯৩ সালে দুঃসময়নাটকের রচয়িতা হিসেবে। এর পর থেমে থাকেনি তাঁর কলম।  রাজধর্মনাটকে উনিশ শতকে আমাদের দেশে সন্ন্যাসী বিদ্রোহের পটভূমিকায় ব্রিটিশদের আগ্রাসী চেহারা তুলে ধরেন তিনি। এছাড়াও রয়েছে স্বর্গের নিচে মহাবিশৃঙ্খলা’, সাম্প্রতিককালে চিনের পরিস্থিতি নিয়ে লেখা। যা বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করে।

রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ছিলেন একজন নির্ভীক যোদ্ধা। বিতর্ক, সমালোচনা কোনওদিনই তাঁর মুক্ত চিন্তাকে থামাতে পারেনি। তিনি তাঁর সৃষ্টির মধ্য দিয়ে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ও স্বৈরতন্ত্রের প্রতি তাঁর অপছন্দ জোর গলায় স্বীকার করেছিলেন।

 

 

রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শৈশব কেটেছে উত্তর কলকাতায়। সেই পরিবারের অপর বিখ্যাত মানুষ ছিলেন সুকান্ত ভট্টাচার্য। সম্পর্কে বুদ্ধদেবের কাকা ছিলেন তিনি।

১৯৬১  সালে বুদ্ধদেব কলকাতার শৈলেন্দ্র সরকার বিদ্যালয় থেকে মানবিকী বিদ্যা নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৪ সালে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বাংলা নিয়ে কলা শাখায় সাম্মানিক স্নাতক হন। স্কুলজীবনে তিনি এন.সি.সি-তে যোগদান করেন। কলেজজীবনেও তিনি এন.সি.সি-র ক্যাডেট (নৌ শাখা) ছিলেন। কলেজজীবন থেকেই রাজনীতিতে প্রবেশ তাঁর।

রাজ্যের উত্তাল খাদ্য আন্দোলনের সঙ্গে সঙ্গে ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভাবে যোগদান করেন। তিনি গণতান্ত্রিক যুব ফেডারেশনের রাজ্য সম্পাদক হন যা পরবর্তী কালে ভারতের গণতান্ত্রিক যুব ফেডারেশন রূপে আত্মপ্রকাশ করে।

১৯৭৭ সালে তিনি কাশীপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হন। কিন্তু ১৯৮২ সালে কংগ্রেসের প্রফুল্ল কান্তি ঘোষ এর কাছে ৭৮২ ভোট পরাজিত হন। ১৯৮৭ সালে তিনি তার নির্বাচনী কেন্দ্র পরিবর্তন করে যাদবপুরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ওই কেন্দ্র থেকে তিনি টানা ৫ বার জয়ী হন। ২০১১ বিধানসভা নির্বাচনে তিনি এই কেন্দ্র থেকেই সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের মণীশ গুপ্তের কাছে পরাজিত হন। তিনি সি. পি. আই (এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য, সি. পি. আই (এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং সি. পি. আই (এম) পলিটব্যুরোর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

একনজরে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সাফল্য

•     ১৯৭৭- ৮২ : পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য মন্ত্রিসভায় তথ্য ও জনসংযোগ বিভাগের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং এই বিভাগ পরে তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ নামে পরিচিত হয়

•    

•     ১৯৮৭-৯৬ ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী, তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ, স্থানীয় শাসন, পৌর ও নগরোন্নয়ন বিভাগ

  

•     ১৯৯১-৯৩ : ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী, তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ, পুর ও নগর উন্নয়ন বিভাগ (অগ্নি নির্বাপণ পরিষেবা বাদে)

  

•     ১৯৯৪: ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী, তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ

•     ১৯৯৬ : ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র (আরক্ষা) বিভাগ, তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ, তথ্য প্রযুক্তি বিভাগ

•     ১৯৯৯ : উপ-মুখ্যমন্ত্রী

•     নভেম্বর ৬, ২০০০ : পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন

•     মে ১৮, ২০০১ : ত্রয়োদশ পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়ে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন

•     মে ১৮, ২০০৬ : চতুর্দশ পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়ে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন

•     মে ১৯, ২০১১ : পঞ্চদশ পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা সাধারণ নির্বাচনে পরাজিত হয়ে মুখ্যমন্ত্রী থেকে পদত্যাগ করেন।