Sun, September 29, 2024

ই-পেপার দেখুন
logo

সুন্দরবনের ৮৭ টি বাঘ ধরে পুরস্কৃত কুলতলির বৃদ্ধ বন কর্মী আমিরচাঁদ


Bipasha Chakraborty   প্রকাশিত:  ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ০৪:০০ পিএম

সুন্দরবনের ৮৭ টি বাঘ ধরে পুরস্কৃত কুলতলির বৃদ্ধ বন কর্মী আমিরচাঁদ

 

উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়, কুলতলি : সুন্দরবনের বাঘ ধরে পুরস্কৃত হলেন বনকর্মী আমিরচাঁদ। কর্মজীবনে ৮৭টা সুন্দরবনের বাঘ ধরেছেন তিনি। আর সেই ৬০ বছরের আমিরচাঁদকে এবার  সন্মানিত করলো দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা বনদফতর। ২৬ ফুট খেজুরগাছে উঠে পড়া সুন্দরবনের রাজাকে কাবু করে যেমন ধরে ছিলেন। তেমনই তাল গাছ থেকেও বাঘকে নামিয়েছিলেন।

সুন্দরবনের যে কোনও গ্রামে বাঘ ঢুকেপড়লেই ডাক পড়তো কুলতলির আমির চাঁদের। বন দফতরের কর্মীরা তাঁকে ডাকেন ছোটবাবু বলে।এই ছোট বাবু ওরফে আমিরচাঁদের বয়স ৬০ বছর। কিন্তু এই বয়স তাঁর কাছে কোন ও বাধা নয়। সদ্য কাজ থেকে অবসর নিয়েছেন তিনি। তাঁর এই কর্মজীবনে ৮৭টা বাঘকে ধরে আবার জঙ্গলে পাঠিয়েছেন নিপুন দক্ষতায়।তাঁরই চেষ্টায় বন থেকে উদ্ধার হয়েছিল ১৪টি হরিণের চামড়া।এই আমির চাঁদকে আন্তর্জাতিক ব্যাঘ্র দিবসে  সন্মানিত করেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা বন দফতর। সন্মান নিয়ে চোখে জল তাঁর।দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা বন বিভাগ থেকে জানা গেল,আমিরচাঁদের মেয়াদ বাড়িয়ে তাঁকে কাজে রেখে দেওয়ার চিন্তা ভাবনা চলছে।

কুলতলির দক্ষিণ দুর্গাপুরের বাসিন্দা আমিরচাঁদ মণ্ডল। পরিবারে স্ত্রী ছাড়া আছে তিন ছেলে দুই মেয়ে। ১৯৮৪ সালে ধনচি ক্যাম্পে অস্থায়ী বনকর্মী হিসেবে কাজ শুরু হয় আমির চাঁদের।এরপর ১৯৮৭ সালের ২২ জানুয়ারিতে সরকারি ভাবে প্রথম বোটম্যান হিসেবে কুলতলি বিটে কাজে যোগ দেন তিনি।এই বোটম্যান থেকে বনরক্ষীতে পদোন্নতি হয় আমিরচাঁদের। শুধু বাঘ ধরা নয় সুন্দরবনের নদীতে জলদস্যু আক্রমনও ঠেকিয়ে ছিলেন তিনি। এই জলদস্যুদের কবল থেকে গ্রামবাসীদের রক্ষা করার জন্য প্রাক্তন বনমন্ত্রী যোগেশ বর্মন ও পুরস্কৃত করেন আমিরচাঁদকে।

বাঘকে বন্দুক দিয়ে ঘুম পাড়ানো কাজে প্রশিক্ষণ ছিল তাঁর। এই দক্ষ বনকর্মীর ভূয়সী প্রশংসা করেন দক্ষিণ ২৪ পরগনা বন বিভাগীয় আধিকারিকরা। বন  আধিকারিকদের মতে,আমির বাবুর কাজ দেখে অন্যরাও অনুপ্রাণিত হয়। আর আমিরচাঁদ বলেন, ধনচি ক্যাম্পে বোট থেকে রক্ষীদের বন্দুক ছিনতাই করেছিল জলদস্যুরা। সেই জলদস্যুকে ধরিয়ে দিয়েছিলাম আমি। আর বাঘ ধরার অভিজ্ঞতা ভয়াবহ। কয়েক বছর আগে কুলতলির চুপড়িঝাড়া এলাকায় সাতদিন ধরে বাঘের আতঙ্ক নেমেছিল।

খাঁচা পেতেও ধরা পড়ছিল না। এরপর সেই বাঘকে ধরে ফেলি অনেক চেষ্টার পর। মৈপীঠে ৬ দিন পর বাঘ ধরা পড়েছিল।তবে পরিস্থিতির চাপে নেটের মধ্যে ঢুকতে হয়েছিল আমাদের।বাঘ এক লাফ দিয়ে নেটে ঝাঁপালো।তবু ও ভয় না পেয়ে সেই বাঘকে কাবু করা গিয়েছিল। আমির চাঁদের কথায়,শক্তিশালী বাঘের আক্রমনে দুর্বল বাঘ লোকালয়ে চলে আসে।আর আমির চাঁদের এই সম্মানে খুশি সুন্দরবনবাসীরা।