Sun, September 29, 2024

ই-পেপার দেখুন
logo

প্রবল বর্ষণে জলমগ্ন ধান জমি, দুশ্চিন্তায় কৃষকেরা, সজাগ প্রশাসন


Bipasha Chakraborty   প্রকাশিত:  ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১২:০৪ পিএম

প্রবল বর্ষণে জলমগ্ন ধান জমি, দুশ্চিন্তায় কৃষকেরা, সজাগ প্রশাসন

 

এস জে আব্বাস, পূর্ব-বর্ধমান:  একদিকে নাগাড়ে মুষলধারে বৃষ্টি, অন্যদিকে চাষের জন্য ডি ভি সির ছাড়া জল প্লাবিত করল পূর্ব বর্ধমানের বিভিন্ন এলাকা। জেলায় গত ২৪ ঘন্টায় গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২০২.৫ মিমি ৷ কোথাও কাঁচা বাড়ির দেওয়াল বা সম্পূর্ণ ঘর ভেঙে পড়েছে, চাষের জমি প্লাবিত হয়েছে, কোথাও  বা জমা জলে ব্যাপক সমসায় পড়েছে জেলাবাসী।

 জানা গেছে, বর্ধমান -২ ব্লকের  ৮৪ টি মৌজার মধ্যে প্রায় ৭০টি মৌজার চাষের জমি জলের তলায়।  পলশা, ঘাটশিলা, সুহারী, আটাঘর, তাজপুর,পুতুন্ডা, খাড়গ্রাম, ভৈটা, পালসিট সহ এলাকার বিস্তীর্ণ জমি প্লাবিত হয়েছ। ইতিমধ্যেই চাষীদের মাথায় হাত। অধিকাংশ এলাকাতেই  ধান রোয়ার কাজ একেবারে শেষের দিকে। ফলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, সদ্য রোয়া গাছ-ধান যদি পচে নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে নতুন করে আর রোয়া সম্ভব হবে না।

এমনিতেই  এই এলাকায় গতবারে আলু চাষে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। ফলে, চাষিরা আবারও ক্ষতির মুখে দাঁড়িয়ে। এলাকার কৃষক মনিরুল হক, আব্দুস সাত্তার , ফজল হক , সত্যজিৎ যশ, রাসবিহারী মাজিল্যা, সেখ সালমান প্রমুখের দাবি, দ্রুত জল বের করে দেওয়ার না ব্যবস্থা করলে আমাদের চাষের প্রচুর ক্ষতি হয়ে যাবে। তাই প্রশাসনের কাছে  বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার জন্য অনুরোধ করছি।

বর্ধমান ২ ব্লকের বিডিও  দিব্যজ্যোতি দাস, কর্মাধ্যক্ষ  পরমেশ্বর কোনার জানান," ইতিমধ্যেই এই ব্লকে প্রায় ৭০ শতাংশ ধান রোয়ার কাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে আমরা এলাকায় ঘুরছি। বেশিরভাগ জমি এখন জলমগ্ন।  ডিভিসি ও উচ্চ কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে দ্রুত জল বের করার চেষ্টা চলছে।" জানা গেছে, এই ব্লকেরই হাটশিমুল এলাকায় প্রায় ৩০-৩২ টা বাড়ি প্রবল বর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ব্লক  প্রসাশনের সহায়তায় সেখানকার বাসিন্দাদের সরিয়ে অন্যত্র থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদেরকে ত্রিপল সহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া মঙ্গলকোটের এরুয়ার , মাহার্তুবা, খুরতুবা ,নতুনহাট, মুরাতিপুর, আউগ্রাম সহ বিস্তীর্ণ এলাকার চাষযোগ্য জমি জলের তলায়। জানা গেছে, মাহার্তুবার কাছে  ডিভিসি ক্যানেলের  একটি বাঁধ হঠাৎ ভেঙে পড়লে এলাকায় মাঠের জলের পরিমাণ হু হু করে বাড়তে থাকে। যদিও স্থানীয় চাষীদের সহযোগিতায় বাঁধ মেরামতির কাজ কিছুটা সম্পন্ন হয়েছে ।

অন্যদিকে, জামালপুর ব্লকেও বিভিন্ন অঞ্চলে কিছু কিছু মাটির বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানেও দ্রুততার সাথে সেই সমস্ত পরিবারের পাশে  ত্রিপল , শুকনো খাবার নিয়ে পৌঁছান জামালপুরের বিডিও পার্থ সারথী দে ও পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি ভূতনাথ মালিক,পূর্ত কর্মাধক্ষ মেহেমুদ খান সহ অন্যান্যরা।

জাড়গ্রাম অঞ্চলের মির্জাপুর গ্রামের অনিমা ধারা মাটির বাড়ির দেওয়াল চাপা পড়ে গেলে তাঁকে তৎক্ষণাৎ জামালপুর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখানেও তাঁরা তাঁকে দেখতে যান। মেহেমুদ খান বলেন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর  নির্দেশ অনুযায়ী আমরা জনপ্রতিনিধিরা এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সর্বদাই অসহায় মানুষের পাশে আছি এবং ২৪ ঘন্টা সজাগ আছি। 

জেলা প্রশাসনের এক বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী জানা গেছে, পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া মহকুমায় কাটোয়া-১, কাটোয়া-২, মঙ্গলকোট, সদর (উত্তর) মহকুমার বর্ধমান-১, বর্ধমান-২, ভাতার ও আউশগ্রাম-১ এবং সদর (দক্ষিণ) মহকুমার মেমারি-২, রায়না-১, রায়না-২ জামালপুর মিলিয়ে মোট ১২ টি ব্লক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । এরমধ্যে মোট ১৫০ টি গ্রাম প্রাথমিকভাবে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে প্লাবিত হওয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বর্ধমান পৌরসভার ৫ টি ওয়ার্ড এবং গুসকরা পৌরসভার ১০ টি ওয়ার্ড জল জমে থাকার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ।জেলা জুড়ে মহকুমা এবং ব্লকগুলির  রিপোর্টের ভিত্তিতে মোট ৪১০ টি ঘর আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ৭২ টি বাড়ি সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ।

যদিও এ পর্যন্ত  কোনো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। তাৎক্ষণিক সমস্যার মোকাবিলা করতে জরুরী ভিত্তিতে বরাদ্দ করা হয়েছে তিন হাজার ত্রিপল ।  এ পর্যন্ত বিভিন্ন ব্লক ও পৌরসভায় মোট ৫৫৬ টি ত্রিপল বিতরণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এই পরিস্থিতিতে জেলায় বিপর্যয় মোকাবিলা ও  উদ্ধার কার্যের জন্য  পুলিশ সুপার মারফৎ এসডিআরএফ মোতায়েনের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

এছাড়াও জেলা প্রশাসনের তরফে পুলিশ, দমকল, স্বাস্থ্য, কৃষি, বিদ্যুৎ ইত্যাদি বিভাগের একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। যার নম্বর হল ৮০০১১৯২৭৪০ । এদিকে,ডি ভি সি কর্তৃপক্ষ শুক্রবার বিকাল  থেকে মাইথন এবং পাঞ্চেত জলাধার থেকে ২৩০০০ কিউসেক জল ছাড়া  শুরু করেছে৷ যদিও জেলা প্রশাসন সূত্রে এক  প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে,পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে।