Fri, September 20, 2024

ই-পেপার দেখুন
logo

রোকেয়ার ঐতিহ্যবাহী সাখাওয়াত মেমোরিয়াল স্কুলে বন্ধের মুখে উর্দু বিভাগ


Bipasha Chakraborty   প্রকাশিত:  ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ০৮:২৩ এএম

রোকেয়ার ঐতিহ্যবাহী সাখাওয়াত মেমোরিয়াল স্কুলে বন্ধের মুখে উর্দু বিভাগ
লর্ড সিনহা রোডে অবস্থিত সাখাওয়াত মেমোরিয়াল স্কুল

 

পুবের কলম প্রতিবেদক: বেগম রোকেয়া ১৯১১ সালে সাখাওয়াত মেমোরিয়াল স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। অখণ্ড বাংলায় পিছিয়েপড়া মুসলিম নারীদের শিক্ষার ক্ষেত্রে পশ্চাৎপদতা দূর করাই ছিল তাঁর লক্ষ্য। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, বাংলাদেশ ও অসমে তাঁর লক্ষ্য সফল হয়েছে।

পশ্চিমবাংলাতেও মুসলিম নারী শিক্ষা সম্পর্কে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি হয় এবং বিগত ১৫ বছরে মুসলিম মেয়েরা মাদ্রাসা, স্কুল এবং আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় ব্যাপক উন্নতি করতে সমর্থ হয়েছে। বিশেষ করে বাঙালি মুসলিম মেয়েরা। কিন্তু উর্দু ক্ষেত্রে বামফ্রন্ট আমলে প্রসিদ্ধ উর্দু স্কুল গুলি খানিকটা অবক্ষয়ের মধ্যে পড়ে। তবে এখন উর্দুভাষী মেয়েরাও শিক্ষার জোয়ারে শামিল হয়েছে। তবে দু-একটি বিষয় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। যদিও তা দূর করা খুব কঠিন কিছু নয়। এর মধ্যে একটি হল উর্দু শিক্ষকের অভাব, অর্থাৎ নতুন শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে না। 

এই ঘেরাটোপে পড়ে গেছে লর্ড সিনাহ রোডে অবস্থিত এবং বেগম রোকেয়া প্রতিষ্ঠিত সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গভর্নমেন্ট গার্লস হাইস্কুল। ১৯৩২ সালে বেগম রোকেয়ার মৃত্যুর পর তৎকালীন বাংলার সরকার এই সংখ্যালঘু স্কুলটিকে অধিগ্রহণ করেছিল। উদ্দেশ্য ছিল, মুসলিম নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে বেগম রোকেয়া যে উজ্জ্বল প্রদীপ শিখা জ্বালিয়েছিলেন তাঁর মৃত্যুর পর তা যেন হারিয়ে না যায়। পরবর্তীতে দেশভাগ হয় এবং সরকারের পরিচালনাধীন এই ঐতিহ্যবাহী স্কুলটিতে মুসলিম মেয়েদের সংখ্যা আঙুলে গোনা পর্যায়ে এসে যায়। তবে উর্দু বিভাগটি চালু ছিল। 

এখন সমস্যা হল, সাখাওয়াত মেমোরিয়াল হাইস্কুল কর্তৃপক্ষ একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে উর্দু মেয়েদের ভর্তি করা যাবে না বলে অভিভাবকদের জানিয়ে দিয়েছেন।

এর কারণ সম্পর্কে প্রধানশিক্ষিকা জানিয়েছেন যে, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে উর্দু পড়ানোর মতো একজনও শিক্ষক বা শিক্ষিকা নেই। এর কারণ হচ্ছে, এই স্কুলটি সরকারি স্কুল হওয়ায় এক্ষেত্রে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) থেকে শিক্ষক নিয়োগ করা হয়। স্কুলটির প্রধানশিক্ষিকা আরও জানিয়েছেন, বার বার শিক্ষামন্ত্রী, বিকাশ ভবনের সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্ট-সহ পিএসসি-র কাছে আবেদন জানিয়ে চিঠি লেখার পরও কোনও ব্যবস্থা হয়নি। ফলে তাঁরা শিক্ষকের অভাবে এই করুণ ও কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হচ্ছেন। 

তবে শুধু একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি নয়, শিক্ষকের অভাবে ধুঁকছে পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণির উর্দু বিভাগও। কারণ, সেই একই। সাখাওয়াতের প্রধানশিক্ষিকা উজ্জ্বলা রায় বলেন, আমাদের পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণির জন্য শেষ পর্যন্ত ৬ জন উর্দু শিক্ষক ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ২ জন আগামী মাসে অবসর নেবেন। ফলে আমরা উর্দুতে বিভিন্ন বিষয় পড়ানোর জন্য শিক্ষক পাচ্ছি না। মাধ্যমিকে উর্দু মিডিয়ামে জীবনবিজ্ঞান ও ভৌতবিজ্ঞানে এখন আর কোনও শিক্ষকই নেই। ফলস্বরূপ উর্দুভাষী মেয়েরা এই বিষয়েও পড়তে পারছে না। তাই নিজে নিজে পড়ে তারা যদি পরীক্ষায় খারাপ ফল করে তবে ছাত্রীদের কোনওভাবেই দোষ দেওয়া যাবে না। 

উজ্জ্বলা রায় একটি করুণ অথচ ইতিবাচক খবরও দিলেন। সাখাওয়াত থেকে উর্দু বিভাগ যাতে একদমই উঠে না যায়, সেজন্য সাখাওয়াত থেকে উত্তীর্ণ হওয়া কিছু ছাত্রী নিজেরা এগিয়ে এসেছেন। তাঁরা এসে স্বেচ্ছায় নিচু ক্লাসের উর্দু ছাত্রীদের পড়াচ্ছেন। অবস্থা দেখে আমরা তাঁদের এই স্বেচ্ছাশ্রমকে স্বাগত জানিয়েছি। 

একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে উর্দু বিভাগে ভর্তি নেওয়া হবে না, এই খবরটি ছড়িয়ে পড়ায় উর্দু মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। উর্দু সংশ্লিষ্ট দু’টি সংগঠন ‘আনজুমান তরক্কী উর্দু’-এ সম্পর্কে বিভিন্ন দফতরে চিঠি লিখেছে। এ ছাড়া চিঠি লিখেছেন বিশিষ্ট সমাজসেবী জনাব মুবারক আলি মুবারক। তিনি শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে চিঠি লিখে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। এ ছাড়া তিনি বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকেও পত্র লিখে এই করুণ অবস্থার কথা জানিয়েছেন। ‘আনজুমান তরক্কী উর্দু’ সংগঠনের সভাপতি ড. ওয়াসিফ আখতার এবং মুবারক আলি মুবারক দু’জনেই পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু কমিশনেও প্রতিকার চেয়ে স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন। 

সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান আহমদ হাসান ইমরান ‘পুবের কলম’-এর প্রতিবেদককে বলেন, এটা খুবই এক দুঃখজনক পরিস্থিতি। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ নিয়ে অবশ্যই কথা বলব।