বসুধৈব কুটুম্বকম, এটাই ভারতের চিরকালীন নীতি
Bipasha Chakraborty
প্রকাশিত: ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ০৯:৫৫ এএম
আহমদ আবদুল্লাহ: বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলন হতাহতের ঘটনা শুধু পশ্চিমবঙ্গে নয়, সারা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। আর এই বাংলার সঙ্গে তো বাংলাদেশের প্রাণের সম্পর্ক। সম্পর্ক রবীন্দ্রনাথ-নজরুলকে নিয়ে। সম্পর্ক একই ভাষা ও ইতিহাসের বহমান ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি নিয়ে। কাজেই বাংলাদেশের ঘটনায় এপার বাংলা বিশেষভাবে যে আন্দোলিত হবে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
২১ ফেব্রুয়ারিতে ছাত্রদের আত্মত্যাগ এবং ‘আমার ভাইয়ের রক্তের রাঙানো ২১ ফেব্রুয়ারি’-কে এই বাংলার মানুষও আপন করে নিয়েছে। তাই বাংলাদেশে ছাত্রদের আন্দোলন এবং তাঁদের উপর ওই দেশের পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর গুলি চালনা এবং লাশের সারির দৃশ্য প্রবলভাবে আহত করেছে এপারের বাঙালিদেরও।
ইন্টারনেট এবং সামাজিক মাধ্যমগুলিকে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রাখলে অন্যান্য ক্ষতির সঙ্গে আর যে বড় বিষয়টি হল তা হচ্ছে, খবর কিন্তু থেমে থাকে না। তা ফোঁটা ফোঁটা পানির মতো বর্হিবিশ্বে আসতে থাকে।
প্রথম আলো-র খবর অনুযায়ী জানা যাচ্ছে যে, অন্তত পক্ষে বাংলাদেশ এই আন্দোলনের কয়েকদিনে ২০০ তরুণ নিহত হয়েছে। ঢাকার সাংবাদিকরা বলছেন, এই হিসেব মূলত সরকারি হাসপাতালে যেসব লাশ এসেছে বা যারা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে তাদের পরিসংখ্যান। বিভিন্ন জেলায় যে হাসপাতাল ও প্রাইভেট হাসপাতাল রয়েছে সেখানকার লাশের সংখ্যা এবং চিকিৎসাধীনদের মুত্যুর হিসেব নিকেশ সামনে আসেনি।
তাই সিপিবি-সহ বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন ও ছাত্ররা দাবি করেছে, এ পর্যন্ত ২০০-র বেশি ছাত্র জনতা নিহত এবং কয়েক হাজার মানুষের আহত হওয়ার খবর এসেছে। বিভিন্ন সরকারি ও প্রাইভেট হাসপাতালে যেসব আহতরা রয়েছেন এবং যারা মারা গেছেন তাঁদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা দেশবাসিকে জানানো হোক। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিয়ন্ত্রণ সত্ত্বেও যেসব খবর সামনে এসেছে, তা ভয়াবহ। বলা হয়েছে, নিহত হয়েছে আরও বেশি ছাত্র জনতা।
বিগত কয়েকদিন ধরে যেভাবে ঢাকা-সহ সারা বাংলাদেশ উত্তাল হয়ে উঠেছিল, সেই সময় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহানুভূতি প্রকাশ করে বলেছিলেন, আমি বাংলাদেশ নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না। ওটা একটা ভিন্ন দেশ। যা বলার ভারত সরকার বলবে। কিন্তু আমি বলব যে, অসহায় মানুষ যদি বাংলার দরজায় কড়া নাড়ে আমরা তাদের আশ্রয় নিশ্চয়ই দেব। কারণ, এটা ইউনাইটেড নেশনসের একটা রেজলিউশন আছে যে কেউ যদি রিফিউজি হয়ে যায় তাকে পার্শ্ববর্তী এলাকা সম্মান জানাবে।
বাংলাদেশ ইন্ডিয়া জোটের অন্যতম নেত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বক্তব্যে আপত্তি জানিয়েছে। বাংলাদেশের মন্ত্রী হাসান মাহমুদ সাংবাদিক বৈঠকে বলেছেন, ঢাকায় ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের কাছে তাঁরা একটি নোট জমা দিয়েছেন। আর এতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য সম্পর্কে আপত্তি জানানো হয়েছে। ভারত সরকার অবশ্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য নিয়ে কোনও কথা বলেনি।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেছিলেন, বাংলাদেশ থেকে যেসব মানুষ ভারতে এসেছিলেন, কিন্তু এখন তাঁদের ফিরে যেতে অসুবিধা হচ্ছে, তাঁদেরও প্রয়োজনে রাজ্য সরকার সাহায্য করবে।
উল্লেখ্য, প্রচুর মানুষ পর্যটন, ব্যবসার কারণ ছাড়াও ভারতে এসে থাকেন চিকিৎসার জন্য। এদের সম্পর্কেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই কথাগুলি বলেছিলেন। এছাড়া পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রচুর মানুষ আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে মুলাকাত করতে বাংলাদেশে গিয়ে থাকেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক্ষেত্রে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শহিদ দিবসের ভাষণে এও বলেছিলেন, আমাদের খুবই দুঃখ লাগছে, বাংলাদেশে রক্ত ঝরছে এবং যেসব ছাত্র নিহত হয়েছে, তাঁদের জন্য আমার হৃদয় ভার হয়ে রয়েছে।
স্পষ্ট বোঝা যায়, মানবিক আবেগ থেকেই তিনি যেমন এপারের আটকে যাওয়া বাংলাদেশী পর্যটক বা পড়ুয়াদের সাহায্য করার কথা বলেছেন, তেমনি ওপারে যে ভারতীয় ছাত্ররা আটকে রয়েছে তাদেরও এপারে সহায়তা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। কাজেই সামান্য কথার হেরফেরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে আঙুল তোলা বাংলাদেশী রাজনীতিবিদদের উচিত হবে না বলে অনেকে মনে করছেন।
কারোরই ভুলে যাওয়া উচিত নয়, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের সময় এক কোটিরও বেশি বাংলাদেশী ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাঁদের বেশির ভাগই ছিলেন পশ্চিমবঙ্গে। পশ্চিমবঙ্গবাসী তাঁদের জন্য দুয়ার খুলে দিয়েছিলেন। কোনওভাবেই এই রিফিউজিদের আটকানো হয়নি। তেমনি প্রাণ বাঁচাতে যদি কেউ সাময়িকভাবে চলে আসেন, তাহলে সেটা হবে এক মানবিক কাজ। রাষ্ট্রসংঘের প্রস্তাবে সেই কথাই স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে।