Fri, September 20, 2024

ই-পেপার দেখুন
logo

কোটা বিরোধী আন্দোলন: নিরাপত্তাহীনতায় ভারতীয় পড়ুয়ারা, সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ফিরল ৩০০ বেশি পড়ুয়া


Kibria Ansary   প্রকাশিত:  ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১২:১৭ পিএম

কোটা বিরোধী আন্দোলন: নিরাপত্তাহীনতায়  ভারতীয় পড়ুয়ারা, সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ফিরল ৩০০ বেশি পড়ুয়া

আগতলা, ২০ জুলাই: বাংলাদেশে কোটা বিরোধী আন্দোলনের জেরে দেশ ছাড়ছে ভারতীয়রা। চলমান সহিংসতার জেরে প্রায় ৩০০ জনের বেশি ভারতীয় নাগরিক সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে। শুক্রবার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সীমান্ত পয়েন্টগুলি গিয়ে দেশে ফিরেছে তারা।

জানা গিয়েছে, কোটা বিরোধী আন্দোলনের জেরে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি বাংলাদেশে। পরিস্থিতি বেকড় দেখে দেশে ফিরছেন ভারতীয় পড়ুয়ারা। এদের মধ্যে অনেকেই উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, মেঘালয় এবং জম্মু ও কাশ্মীরের বাসিন্দা। শুক্রবার দেশে ফেরার জন্য দুটি গুরুত্বপূর্ণ রুট ব্যবহার করে পড়ুয়ারা। তার মধ্যে ত্রিপুরার আগরতলার কাছে আখুরাহ আন্তর্জাতিক স্থলবন্দর এবং মেঘালয়ের ডাউকিতে আন্তর্জাতিক স্থলবন্দর। সীমান্ত পেরিয়ে দেশে ফেরা পড়ুয়ারা বলছেন, বৃহস্পতিবার থেকে প্রায় পুরোপুরি ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ একপ্রকার বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। অবশেষে তারা সাময়িকভাবে বাংলাদেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়। হরিয়ানায় আমির বলেন, "আমি চট্টগ্রামের মেরিন সিটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে এবং অনেক বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। যে কারণে আমরা ফিরে এসেছি। ফিরে এসেছেন আরও অনেক পড়ুয়াও। ইন্টারনেট কাজ করছে না এবং আমরা আমাদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করতে পারছি না। আমরা বিমানের টিকিট পাচ্ছিলাম না। বাধ্য হয়ে আগরতলা রুট হয়ে যাত্রা শুরু করি।"

একই কলেজের আরেক পড়ুয়া মোহাম্মদ ফয়েজ আবদুল্লাহ খান বলেন, "মঙ্গলবার পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। পরের দিন হঠাৎ হোস্টেল থেকে বেরোতে নিষেধ করা হয়।" তাঁর কথায়, "আমরা জানতে পারি কোটা বিরোধী আন্দোলন তীব্র হচ্ছে। এরইমধ্যে কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ ঘোষণা করে। আমরা যখন অধ্যক্ষের সাথে কথা বলি তখন তিনি পরামর্শ দিয়েছিলেন, নিরাপত্তাহীনতায় কারণে আমাদের ভারতে ফিরে যেতে। ভারতীয় দূতাবাসের লোকজনও আমাদের একই পরামর্শ দিয়েছিল। পরিবহনের ব্যবস্থা করতে অসুবিধা হলে তাদের সাথে যোগাযোগ করতে বলেছিল। আমরা একটা ট্যাক্সি নিয়ে আগরতলা বর্ডারে পৌঁছায়। সেখান থেকে ভারতে আসি।" মেঘালয়ের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, বিক্ষোভের কারণে ২০০ জনেরও বেশি ভারতীয় পড়ুয়া সীমান্ত অতিক্রম করে দেশে ফিরেছে। ভুটান ও নেপাল থেকেও কয়েকজন পড়ুয়া ভারতে ঢুকেছেন।

এদিকে শুক্রবার বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানান, আট হাজার পড়ুয়া-সহ প্রায় ১৫ হাজার ভারতীয় বর্তমানে বাংলাদেশে রয়েছেন। তাঁরা সবাই নিরাপদে রয়েছেন। বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র বলেন, "আপনারা অবগত আছেন, বাংলাদেশে বিক্ষোভ চলছে। আমরা এটিকে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে দেখছি। বাংলাদেশে বসবাসরত ভারতীয় পড়ুয়াসহ নাগরিকদের জন্য তাদের নিরাপত্তা ও প্রয়োজনে সহায়তার জন্য একটি পরামর্শ জারি করেছি। হেল্পলাইন নম্বরগুলি ২৪ ঘণ্টা চালু রাখা হয়েছে। আমরা বাংলাদেশে আমাদের নাগরিকদের সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।" বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর নিজে বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন বলে জানিয়েছেন জয়সওয়াল।

প্রসঙ্গত, কোটা বিরোধী আন্দোলনে পড়ুয়াদের বিক্ষোভ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গতকাল ঢাকাসহ সারা দেশ প্রায় অচল হয়ে পড়ে। রাজধানী ছাড়াও দেশের ৪৭টি জেলায় গতকাল দিনভর বিক্ষোভ, অবরোধ, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, পুলিশের হামলা-গুলি ও সংঘাতের ঘটনা ঘটে। বিক্ষোভ-সংঘর্ষে মৃত্যুমিছিল দেখছে দেশ। কোটা বিরোধী আন্দোলনে এপর্যন্ত ১০৫ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন ২৫ হাজারের বেশি মানুষ। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা  এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সর্বশেষ পাওয়া খবরে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৫ জনে। এদিকে পরিস্থিতি সামাল দিতে দেশজুড়ে জারি হয়ে হয়েছে কার্ফু। সারাদেশ এখন সেনার আওতায়। দু'পক্ষই নিজ নিজ অবস্থানে অনড়।