আবুল খায়ের প্রকাশিত: ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ০৬:৫৩ পিএম
পুবের কলম, ওয়েব ডেস্কঃ অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনে চারশো পারের লক্ষ্য নিয়ে ভোটযুদ্ধে নেমে ম্যাজিক ফিগার পার করতে পারে নি বিজেপি। নীতিশ নাইডুর সাহায্যে সরকার গড়ে পদ্ম শিবির। তবে সারা দেশের পাশাপাশি ডবল ইঞ্জিন উত্তরপ্রদেশে বিরোধী জোট ইণ্ডিয়ার কাছে বিজেপির শোচনীয় হার সমগ্র দেশের আলোচ্য বিষয় হয়ে ওঠে।
বৃহস্পতিবার পরাজয়ের কারণ উল্লেখ করে উত্তরপ্রদেশ বিজেপির রাজ্যসভাপতি ভূপেন্দ্র চৌধুরী ১৫ পৃষ্ঠার একটি রিপোর্ট জমা করেন। ৮০টি লোকসভা আসনের ৪০ হাজার বিজেপি কর্মীর মতামতের ভিত্তিতে এই রিপোর্ট তৈরি হয়েছে বলে জানা গেছে। ৮০টি আসনের মধ্যে ৪৩টি আসনে জয়ী হয়েছে ইণ্ডিয়া জোট। অন্যদিকে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ পেয়েছে ৩৬টি আসন, যা ২০১৯ সালে প্রাপ্ত ৬৪টি আসনের প্রায় অর্ধেক।
এই রিপোর্ট নিয়ে ভূপেন্দ্র চৌধুরী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ এবং জে পি নাড্ডার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। রামমন্দির নির্মাণের পরও উত্তরপ্রদেশে ফল খারাপ হওয়া নিয়ে একাধিক কারণ এই রিপোর্টে তুলে ধরা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে, সরকারি চাকরিতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং রাজ্য সরকারের অতি সক্রিয়তা। পাশাপাশি রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মধ্যে মতানৈক্য থেকে অন্তর্দ্বন্দ্ব-সহ একাধিক তত্ত্ব উঠে এসেছে। অযোধ্যা, অমেঠীর মতো গুরুত্বপূর্ণ আসনগুলিতে হারের কারণ বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে, তাতে দেখা গিয়েছে, রাজ্যের সর্বত্র বিজেপি-র প্রতি জনসমর্থন ৮ শতাংশ কমেছে।
রাজ্যে খারাপ ফল হওয়া নিয়ে যে কারণগুলি তুলে ধরা হয়েছে, তা হল-
(১) অগ্নিপথ প্রকল্প নিয়ে জনমনে অসন্তোষ।
(২) গত ছ'বছর ধরে লাগাতার সরকারি চাকরির পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস। গত তিন বছরে অন্তত ১৫ বার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
(৩) সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ নিয়ে বিরোধীদের যুক্তি গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। বিশেষ করে জেনারেল ক্যাটেগরির মানুষজন সাড়া দিয়েছেন তাতে। সরকারি চাকরিতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বিরুদ্ধে জনসমর্থন আদায় করে নিয়েছেন বিরোধীরা।
(৪)সংবিধান পাল্টে দেওয়া নিয়ে দলীয় নেতাদের মন্তব্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।
(৫) যাদব নন এমন অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত কুড়মি, কোরি, মৌর্য, শাক্য এবং লোধ-দের থেকে প্রাপ্ত ভোটের হার কমেছে।
(৬) পুরনো পেনশন নীতি তুলে দেওয়ার বিপক্ষে সরকারি কর্মী-আধিকারিকরা।
(৭) রাজ্য সরকার এবং প্রশাসনিক আধিকারিকদের স্বেচ্ছাচারিতা এবং উশৃঙ্খল আচরণ।
(৮) রাজ্য সরকারের প্রতি বিজেপি কর্মীদের মনে জমা হওয়া অসন্তোষ।
রাজপুত সম্প্রদায়ের মধ্যে বিজেপি-কে নিয়ে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে।
(৯) আগে থেকে টিকিট দিয়ে দেওয়ায় ষষ্ঠ এবং সপ্তম দফার আগে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন দলীয় কর্মীরা।
(১০)তৃণমূলস্তরে বিজেপি-র কোর ভোটারদের নাম মুছে দেওয়া হয়। ৩০ থেকে ৪০ হাজার কোর ভোটারের নাম মুছে দেয় কমিশন।
উত্তরপ্রদেশ নিয়ে এই মুহূর্তে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে বিজেপি-র অন্দরে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্বাচনী কেন্দ্র বারাণসীতেও সমর্থনে ভাঁটা পড়েছে বলে রিপোর্টে উঠে এসেছে। এর আগে, রাজ্যে যোগী আদিত্যনাথের সঙ্গে দিল্লিতে বিজেপি নেতৃত্বের মতবিরোধের কথাও উঠে এসেছে বার বার। টিকিট বিতরণের ক্ষেত্রে যোগীর কোনও মতামতই গ্রাহ্য হয়নি বলে জানা গিয়েছে দলীয় সূত্রে। নির্বাচনের ফল যে খারাপ হয়েছে, তার দায়ও তাই দিল্লির নেতৃত্বের উপরই চাপিয়েছেন যোগী। সেই নিয়ে সম্প্রতি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকও হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন উত্তরপ্রদেশ বিজেপি-র সভাপতি ভূপেন্দ্র চৌধুরী এবং উপমুখ্যমন্ত্রী কেশপ্রসাদ মৌর্য। কিন্তু যোগী এবং কেশবের মধ্যেও মতবিরোধ রয়েছে বলে জানা গেছে। সেই আবহে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসই বিজেপি-কে ডুবিয়েছে বলে সম্প্রতি যোগী মন্তব্য করলেও, তা খারিজ করে দেন কেশব।