মুম্বই: জোড়া ধাক্কা! তলানিতে টাকা। শেয়ার বাজারে বিপুল রক্তক্ষরণ। সবমিলিয়ে ধুঁকছে অর্থনীতি। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ডলারের সাপেক্ষে আরও তলানিতে পৌঁছে গেল টাকার দাম। সোমবার ০.৪ শতাংশ পতন হল টাকার। ফলে ডলারের তুলনায় টাকারû দাম দাঁড়াল ৮৬.৩৯টাকা। অর্থাৎ, ১ মার্কিন ডলার মানে ভারতীয় মুoায় তা ৮৬.৩৯ টাকা। যেভাবে লাগাতার টাকার পতন নিম্নমুখী হচ্ছে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা। এভাবে টাকার পতন অব্যাহত থাকলে মুoাস্ফীতি তীব্র হওয়ার আশংকা। সবমিলিয়ে ভারতীয় অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। যদিও গেরুয়াপন্থী অর্থনীতিবিদ্রা বলছেন, বিদেশি কারণেই ভারতে অর্থনীতির এই পরিস্থিতি। মূলত ট্রাম্পের ক্ষমতায় ফেরা ও মার্কিন আর্থিক নীতির জেরে ভারতীয় টাকার এই পতনের প্রধান কারণ।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের ফলে মার্কিন বিদেশ নীতিতে বহু পরিবর্তন আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। মার্কিন অর্থনীতির সাম্প্রতির অগ্রগতিরও সরাসরি প্রভাব পড়েছে ভারতীয় মুদ্রায়। এমনিতে ডলারের তুলনায় দুর্বল ছিল ভারতীয় টাকা। তার উপর আমেরিকার আর্থিক উন্নতি ডলারের মূল্য বাড়িয়েছে। ফলস্বরূপ টাকার দাম আরও পড়তে শুরু করেছে। যে কোনও দেশের টাকার দর মূলত নির্ভর করে সেই দেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের উপর ভিত্তি করে। আমদানি কম ও রফতানি বেশি হলে দেশের আর্থিক উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে টাকার দাম। ভারতের ক্ষেত্রে মোদি সরকার আত্মনির্ভর ভারতের মতো পদক্ষেপ নিলেও বিদেশি পণ্য আমদানির নির্ভরতা খুব একটা কমেনি। পণ্য রফতানিতেও খুব বিশেষ গতি আসেনি। ট্রাম্প সরকার ক্ষমতায় আসার পর এইচ-১বি ভিসা নিয়ে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে যে ভারতীয়রা আমেরিকায় চাকরি করেন তাঁদের উপর বড় প্রভাব পড়বে। আজও ভারতে বৈদেশিক মুদ্রার একটা বড় অংশ আসে বিদেশে চাকরিরত এইসব ভারতীয়দের থেকে। ফলে এই ভিসা নীতি লাগু হলে টাকার দাম আরও তলানিতে নামতে পারে। টাকার এই পতনের জেরে রক্তাক্ত শেয়ার বাজারও। হাজার পয়েন্টের বেশি পড়ল সেনসেক্স। নিফটি ৫০-এর সূচক নেমেছে প্রায় ৩৫০ পয়েন্ট। এই নিয়ে টানা চারদিন নিম্নমুখী রইল স্টকের গ্রাফ।
সোমবার বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ (বিএসই) থেকে উড়ে গিয়েছে ১৩ লক্ষ কোটি টাকা। অর্থাৎ, একদিনেই বাজার থেকে ‘উড়ে’ গেল এই বিপুল পরিমাণ টাকা। শেষ চারটি সেশনে ২৫ লক্ষ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে লগ্নিকারীদের। এ দিন বিএসইতে ছোট ও মাঝারি পুঁজির সংস্থাগুলির সূচক নেমেছে চার শতাংশ। এই শেয়ার বাজারের মূলধন ছিল ৪৩০ লক্ষ কোটি টাকা। কিন্তু সোমবার বাজার বন্ধ হওয়ার পর দেখা যায় সেটি ৪১৭ লক্ষ কোটিতে নেমে গিয়েছে। নিফটিতে রিয়্যাল এস্টেট সংস্থাগুলির শেয়ারের দর কমেছে ৬.৫ শতাংশ। সোমবার বিশ্ব বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম গত তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছে যায়। ব্রেন্ট ত্রুড অয়েলের দর ব্যারেল প্রতি ৮০ ডলারের উপরে ঘোরাফেরা করছে। অন্য দিকে রাশিয়ার উপর নতুন নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে আমেরিকা। এতে মস্কো থেকে সস্তা দরে অপরিশোধিত ‘তরল সোনা’ আমদানিতে প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ দিন শেয়ার বাজারে এর সরাসরি প্রভাব দেখা গিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।