নুরুল ইসলাম খান : লাখো লাখো মানুষের কান্নাভেজা চোখে আল্লাহ আল্লাহ এবং আমীন আমীন কণ্ঠধ্বনীর মধ্যদিয়ে বুধবার সকালে সমাপ্তি হয় ফুরফুরা শরীফের ঐতিহাসিক ইসালে সওয়াব মাহফিল। এদিন পীর দাদা হুজুর প্রতিষ্ঠিত প্রধান দরবার শরীফে আখেরি দোয়া করেন পীর আল্লামা হযরত আবদুল্লাহ সিদ্দিকী। ওয়াজ নসিহত করেন পীরজাদা হযরত মাওলানা সওবান সিদ্দিকী। গদ্দিনশীন পীর শাইখ মিশকাত সিদ্দিকী এক বিবৃতিতে সভার সাফল্য কামনা করে সকলকে মোবারকবাদ জানিয়েছেন। উপস্থিত হয়েছিলেন বহু পীর সাহেব। এই মাহফিলের বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে আছে সকাল-সন্ধ্যা জেকের-এ তালিম , পাঁচ ওয়াক্ত জামায়াতে সঙ্গের নামায আদায়। মাধ্যমিক পরীক্ষর্থীদের কথা ভেবে বিনা মাইকে সুষ্ঠুভাবে বৃহৎ এই সভা পরিচালনা নজিরবিহীন।
ফজর নামায বাদ দরবারের দিকে মুখ করে ঘুরে বসা এবং নিজেদের আত্মশুদ্ধিকরণের জন্য উপস্থিত ধর্মপ্রাণ মানুষরা কিছুক্ষণ নিজেদের আল্লাহর পথে বিলিয়ে দিয়েছিলেন। ফাঁকা আকাশে জেকের-এর আল্লাহ আল্লাহ শব্দে এক অভূতপূর্ব পরিবেশ তৈরি করেছিল। মোজাদ্দেদে জামান পীর দাদা হুজুরের অমূল্য বাণীমালা শোনানো হয় মহফিল থেকে। সমস্ত নবী, রসুল থেকে শুরু করে সকল মানব কল্যাণের জন্য দোয়া চাওয়া হয়। এদিন প্রধান রাস্তা ও মহল্লার অলিগলিতে ছিল বাঁধভাঙা মানুষের উপস্থিতি। সভায় ৪৫-৫০ লক্ষ মানুষের ভিড় হয়েছিল বলে দাবি করেছেন পীর পরিবার ও অঞ্চলের সাধারণ মানুষ।
তিনদিনের ইসালে সওয়াবের মহফিলে এসেছিলেন- মুকুল রায়, আবদুল মান্নান,সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিধায়ক স্নেহাশিস চক্রবর্তী, মলয় ঘটক, আখেরুজ্জামান-সহ বহু নেতা-মন্ত্রী। বাদ যায়নি অসমের দলগাঁও-এর বিধায়ক মুজিবর রহমান।
দীর্ঘদিন ধরে প্রধান দরবার শরীফে পীর হযরত আল্লামা শাহ সুফি মরহুম আবু ইব্রাহিম সিদ্দিকী আখেরি দোয়া করতেন। কিন্তু গত বছর তিনি ইন্তেকাল করেন। পীর দাদা হুজুরের জীবনী, ফুরফুরার ইতিহাস, পর্দা, ইসলামী আকীদা ও ত্ববাকতুল ইযাম ও মিননাতুল মুগিস-সহ একাধিক পুস্তক মহফিল থেকে বিক্রি হয়।
‘সাধক ওগো প্রেমিক ওগো’ নামক বড় হুজুরের জীবনীও অল্প সময়ের মধ্যে নিঃশেষ হয়েছিল। মানুষের উপস্থিতিতে দাদা হুজুরের পাঁচ সন্তানের নিজস্ব দরবারগুলো হয়ে উঠেছিল প্রাণবন্ত। দাদা হুজুরের প্রধান মাজার বড় হুজুরের খানকাহে পীর হযরত আনসার সিদ্দিকীর ছোট সাহেব জাদা পীরজাদা আয়াতুল্লাহ সিদ্দিকী বক্তব্য রাখেন।
জানা যায়, দাদা হুজুর এই মহান ওয়াজের মাহফিল কায়েম করেছিলেন ১৩১ বছর পূর্বে। উপ-মহাদেশের অজস্র ধর্মবিশ্বাসী মানুষ এখানে শরিক হয়েছিলেন। তিনদিনের মজলিসের সমাপ্তি সকল পীরসাহেবদের ভারাক্রান্ত করেছে। প্রতিবছরের মতো এ বছরও সরকারিভাবে অতিথিদের জন্য নেওয়া হয়েছিল যথাযথ ব্যবস্থা।