রুবাইয়া জুঁইঃ সবুজ চায়ের বাগান আর অরণ্যের বুক চিরে আঁকাবাঁকা পথে চলেছে পাহাড়ি নদী। বন্য জন্তুদের আনাগোনা তো রয়েইছে। এমনই নৈসর্গিকতায় ভরপুর গোটা উত্তরবঙ্গ। আর এমন শান্ত স্নিগ্ধ পরিবেশে বিখ্যাত সংগীতশিল্পী ফেরদৌসী রহমানের ভাওয়াইয়া গান ‘ওরে গাড়িয়াল বন্ধুরে…ওরে প্রাণের বন্ধুরে’ শুনতে শুনতে ভ্রমণ করতে কার না ভালো লাগে! হয়ে উঠতেই পারেন আপনিও সুনীল কিংবা জীবনানন্দ। পর্যটকদের জন্য এমনই অভিনব ব্যবস্থা করা হয়েছে ময়নাগুড়ির মেদলা ওয়াচ টাওয়ার বা নজরমিনারে । বাংলা নববর্ষের শুরুতেই আবার পর্যটকদের কোলাহলে প্রাণোচ্ছল হয়ে উঠেছে ডুয়ার্সের বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্র। এর মধ্যে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে গরুমারার মেদলা নজরমিনারে মোষের গাড়ি করে ওয়াচ টাওয়ার ভ্রমণ। দীর্ঘ কয়েক মাস করোনার জেরে মুখ থুবড়ে পড়েছিল উত্তরবঙ্গের অর্থনীতির অন্যতম মানদণ্ড পর্যটন শিল্প। এর জেরে বিপাকে পড়েছে পাহাড় ও সমতলের পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িত মানুষেরা। উত্তরবঙ্গে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অন্যতম ভূমিকা রাখে পর্যটনশিল্প। যা মহামারীর কবলে একটা বড়সড় ক্ষতির মুখে পড়ে। আর এই ক্ষতি ঠিক কতদিনে সামলে উঠবে তার হিসেব কেউ মেলাতে পারেনি চরম দুর্দিনে। যদিও পুজোর সময়ে কিছুটা ভিড় থাকলেও পুজোর পর সেভাবে পর্যটকদের আনাগোনা ছিল না। তবে বাংলা নববর্ষের দিন থেকেই বিভিন্ন জায়গায় মানুষের ভীড় জমতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে ময়নাগুড়ি সংলগ্ন গরুমারার রামশাই মেদলা নজরমিনারে আসতে শুরু করেছেন পর্যটকেরা। বন্যপ্রাণী দেখার পাশাপাশি এই ওয়াচ টাওয়ারে আসার অন্যতম আকর্ষণ হল মোষের গাড়ি করে ভ্রমণ যা ডুয়ার্সের একমাত্র এই জায়গাতেই দেখা যায়। তাই দূর দূরান্ত থেকে প্রচুর মানুষ এখানে আসেন এই আলাদা অ্যাডভেঞ্চার উপভোগ করতে। এখানে আগে ১০টি মোষের গাড়ি থাকলেও করোনার সময় রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কয়েকটি গাড়ি বিকল হয়ে যায়। কিন্তু পর্যটকদের আনাগোনায় খুশি মোষের গাড়ির চালক হরেন রায় সহ অন্যান্য চালকরাও। আর একসঙ্গে বন্যপ্রাণী দেখা ও মোষের গাড়িতে ভ্রমণের সুযোগ মেলায় পর্যটকেরাও খুশি। উল্লেখ্য– একসময় বাংলার ঐতিহ্যবাহী বাহন হিসেবে গরু বা মোষের গাড়ি ছিল অন্যতম । কিন্তু সময় বদলেছে– এসেছে পরিবর্তন। আর এই পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের হাতে সময়ও কমে এসেছে। তাই নিজের তাগিতেই মানুষ আপন করে নিয়েছে যান্ত্রিকতাকে। আধুনিকতার স্পর্শে ঐতিহ্যবাহী মোষের গাড়ি এখন শুধুই অতীতের স্মৃতি। গ্রামগঞ্জে আঁকাবাঁকা মেঠো পথে ধীরে ধীরে এগিয়ে চলা মোষের গাড়ি এখন আর চোখে পড়ে না।
বরযাত্রী থেকে শুরু করে কনে আনা সবই চলত এ গাড়ি করে। জমি থেকে ধান আনা– মাল পরিবহন ও যানবাহন হিসেবে মোষ এবং গরুর গাড়ি ছিল অপরিহার্য। এখন গরু-মহিষের গাড়ি প্রায় দেখা যায় না বললেই চলে। রাত-দুপুরে– ঘন অন্ধকারে বা জ্যোস্নার আলোয় আঁকাবাঁকা মেঠো পথে গাড়িয়াল তার গাড়ি করে বাড়ি পৌঁছে দিতো। গাড়িয়ালের গানের সুর মিলেমিশে একাকার হয়ে যেত প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্য্যের সঙ্গে। অতীতের সেই অপরিহার্য যানবাহনে এখন চড়তে হলে আসতে হবে মেদলায়।