শেষ হচ্ছে আরও একটা বছর। ২০২৪ সালে শিরোনামে উঠে আসা বিশ্বে আলোচিত ঘটনাগুলি যা মানুষের মনে দাগ কেটেছে। বছর শেষে সেইসব দিনগুলিকে আর একবার ফিরে দেখল পুবের কলম।
read more:মদিনায় স্বল্পমূল্যের কয়েকটি বাজার
জাপানে ভূমিকম্প: ১ জানুয়ারি, ২০২৪। সারা বিশ্ব যখন বর্ষবরণের আনন্দে মেতে উঠেছে সেসময়ই প্রকৃতির রোষের শিকার জাপান। বছরের প্রথম দিনেই ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে ‘উদীয়মান সূর্যের দেশ’। আঘাত হানে সুনামিও। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে প্রাণ হারান শতাধিক মানুষ, বহু সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতিও হয়।
তাইওয়ানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন: ১৩ জানুয়ারি তাইওয়ানের নতুন প্রেসিডেন্ট হন লাই চিং তে ওরফে উইলিয়াম লাই। তাইপেইতে নিজের পছন্দের প্রেসিডেন্ট চাইছিল কমিউনিস্ট দেশটি। কিন্তু শেষ হাসি হাসেন শাসক ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টির নেতা উইলিয়াম লাই। এর আগে তিনি ছিলেন তাইওয়ানের ভাইস প্রেসিডেন্ট।
পাকিস্তানে নির্বাচন: লাগাতার নাশকতার মধ্যেই ৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানে জাতীয় নির্বাচন হয়। জেলে বসেই আমজনতার জন্য বার্তা দেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ভোটের ফল প্রকাশের পর দেখা যায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে শাহবাজ শরিফের দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন)। সবচেয়ে বেশি আসনে জয় পান ইমরানের দল পিটিআই। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকার কারণে পিটিআই সরকার গঠন করতে পারেনি। ফলে পাকিস্তানের মসনদে বসেন শাহাবাজ শরিফ।
হাইতিতে হাহাকার: চরম অরাজকতাতে জেরবার ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাইতি। মাফিয়াদের তাণ্ডবে জীবন বিপন্ন সাধারণ মানুষের। ১৫ মার্চ রাজধানী ৮০ শতাংশ দখল করে নেয় মাফিয়ারা। ইস্তফা দিয়ে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী অ্যারিয়াল হেনরি। একাধিক শহরের কারাগার ভেঙে অপরাধীদের বেরও করে দেওয়া হয়। এমনকী প্রধানমন্ত্রী যাতে আর সুরক্ষিতভাবে দেশে ফিরতে না পারেন তার জন্য হাইতির প্রধান বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণও নিজেদের হাতে নিয়ে নিয়েছে তারা।
রাশিয়ায় নির্বাচন: ১৭ মার্চ রাশিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়। ফলপ্রকাশের পর দেখা যায় ভ্লাদিমির পুতিনের ঝুলিতে রয়েছে ৮৭.৮ শতাংশ ভোট। ফলে বিপুল জনসমর্থন পেয়ে ফের রাশিয়ার মসনদে বসেন পুতিন। টানা ৫ বার প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেন তিনি। ১৯৯৯ সাল থেকে রাশিয়ার মসনদে রয়েছেন পুতিন।
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত: ১ এপ্রিল সিরিয়ার দামেস্কে ইরানের দূতাবাসে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়। প্রাণ হারান অন্তত ১৩ জন। মৃতদের মধ্যে ছিলেন তিন ইরানি সেনাকর্তাও। এই হামলার পিছনে ইসরাইলকে দায়ি করে তেহরান। লাগাতার সতর্কবার্তার পর ১৩ এপ্রিল ইসরাইলে একের পর এক মিসাইল ছুঁড়ে ইরান। ১৯ এপ্রিল ইসলামিক দেশটিকে পালটা মার দেয় ইসরাইলি ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ)। তীব্র বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে ইরানের একাধিক শহর।
তাইওয়ানে ভূমিকম্প: ৩ এপ্রিল ভয়াবহ ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে তাইওয়ান। তীব্রতা ছিল ৭.৪। মৃত্যু হয় প্রায় ১০০ মানুষের, ক্ষয়ক্ষতিরও হয় ব্যাপক। তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে বড় বড় হোটেল। ফাটল ধরে একাধিক সড়কে।
বন্যায় বিধ্বস্ত ব্রাজিল: ৫ মে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে ব্রাজিল। প্রকৃতির রুদ্ররোষের মুখে শতাধিকের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হন প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ। প্লাবনে তলিয়ে যায় গ্রামের পর গ্রাম। বন্যার জেরে ব্রাজিলের রিও গ্র্যান্ডে ডো সুলে জলের তলায় চলে যায়। ব্রাজিলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর পোর্তো আলেগ্রের অবস্থা ছিল সবচেয়ে খারাপ। সব মিলিয়ে অন্তত ৪৯৭টি শহর ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
প্রেসিডেন্ট রাইসির মৃত্যু: ১৯ মে কপ্টার দুর্ঘটনায় ইন্তেকাল করেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। জানা যায়, আজারবাইজানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আরস নদীর উপরে একটি বাঁধ উদ্বোধন করার কথা ছিল রাইসির। সেই কর্মসূচিতে যোগ দিতে একটি পার্বত্য অঞ্চল পেরিয়ে যাওয়ার সময় কপ্টারটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উত্তর-পশ্চিম ইরানের একটি পাহাড়ে আছড়ে পড়ে।
ঋষি সুনাকের পরাজয়: ৫ জুলাই ব্রিটেনের নির্বাচনের ফল ঘোষণা হয়। বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন কেয়ার স্টারমার। লেবার পার্টির কাছে ভরাডুবি হয় কনজারভেটিভ পার্টির। প্রধানমন্ত্রীর গদি হারান ঋষি সুনাক।
ইরানে নির্বাচন: ইব্রাহিম রাইসির আকস্মিক মৃত্যুর পর নির্বাচন হয় ইরানে। ৬ জুলাই কট্টরপন্থী নেতা সাইদ জালিলিকে পরাজিত করে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন সংস্কারপন্থী নেতা মাসুদ পেজেস্কিয়ান। পেজেস্কিয়ানের শপথগ্রহণে গিয়েই গুপ্তঘাতকের হাতে তেহরানে মৃত্যু হয় হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়ার।
গদিচ্যুত শেখ হাসিনা: চতুর্থবার নির্বাচন জেতার আট মাসের মধ্যেই গদিচ্যুত হন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেশ ছাড়তে হয় মুজিবকন্যাকে। এরপর ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্র্বতী সরকার।
লেবাননে হামলা: ১৯ সেপ্টেম্বর পেজার বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে লেবানন। সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ-র সদস্য-সহ প্রাণ হারায় অন্তত ৫০০ জনের বেশি মানুষ। আহতের সংখ্যা ৪ হাজারের বেশি। এই ঘটনার পরদিন থেকেই লেবাননে হামলা শুরু করে ইসরাইল। ২৭ সেপ্টেম্বর ইসরাইলি সেনার অভিযানে নিহত হন হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ। কয়েকদিনের মধ্যেই তাঁর উত্তরসূরি হাশেম সাফেদ্দিনকেও হত্যা করে তেল আভিভ। নয়া কমান্ডার হিসাবে নাইম কাসেমের নাম ঘোষণা করে হিজবুল্লাহ।
গাজা যুদ্ধের এক বছর: ৭ অক্টোবর। ইসরাইল বেনজির হামলা চালায় গাজায়। বোমার আঘাতে কার্যত মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে গাজা। এখনও পর্যন্ত গাজায় প্রাণ হারিয়েছেন ৪৭ হাজার ফিলিস্তিনি। নিহত হয়েছে শতাধিক ইসরাইলি সেনাও। রাষ্ট্রসংঘ-সহ আন্তর্জাতিক মহলে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়লেও সামরিক অভিযান অব্যাহত রেখেছে তেল আভিভ। এক বছর পূর্ণ হলেও মেলেনি রফাসূত্র। এর মধ্যেই ১৭ অক্টোবর ইসরাইলের হামলায় নিহত হন নয়া হামাস প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ার।
ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন: ৫ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয় আমেরিকায়। ভোটের লড়াই থেকে সরে দাঁড়ান জো বাইডেন। প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে শামিল হন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। কিন্তু ফলাফল প্রকাশের পর দেখা যায় কমলাকে অনেকটা পিছনে ফেলে বর্ষীয়ান রিপাবলিকান নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্পের দুরন্ত প্রত্যাবর্তন ঘটে।
বাশার আল আসাদের পতন: ২৭ নভেম্বর সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ ভয়ংকর রূপ নেয়। আল কায়দার শাখা সংগঠন হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) নেতৃত্বে আলেপ্পো দখল করার ঘোষণা করে বিদ্রোহীরা। ৮ ডিসেম্বর রাজধানী দামাস্কাসে পৌঁছয় বিদ্রোহীরা। প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বাহিনীকে পিছু হঠতে বাধ্য করে তারা। পতন ঘটে আসাদ পরিবারের ৫৪ বছরের শাসনের।