উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়, জয়নগর: দীর্ঘ ১৫ বছরেও এগোয়নি সুন্দরবনের নতুন রেলপথ সম্প্রসারনের কাজ। তবুও আশায় রয়েছেন সুন্দরবনের মানুষ। জয়নগর মজিলপুর স্টেশন থেকে রায়দিঘি পর্যন্ত নতুন রেললাইন সম্প্রসারণের জন্য ঘটা করে শিলান্যাস হয়েছিল। রায়দিঘির মানুষ আশায় বুক বেঁধেছিলেন। কিন্তু সেই লাইন এখনও তৈরি হয়নি। ওই লাইনের কাজ শুরুর আবেদন জানিয়ে মাস খানেক আগে সংসদে আওয়াজ তুলেছেন মথুরাপুরের সাংসদ বাপি হালদার। পাশাপাশি, তিনি রেলমন্ত্রীর সাথেও এবিষয়ে কথা বলেছেন। মথুরাপুরের সাংসদ বাপি হালদার বলেন, রায়দিঘি থেকে জয়নগর মজিলপুর পর্যন্ত রেললাইন চালু হলে লক্ষ লক্ষ মানুষ উপকৃত হবেন। এলাকায় নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। সুন্দরবনে পর্যটন ব্যবসা কয়েক গুন বেড়ে যাবে। মানুষের কলকাতা যাওয়ার খরচ ও সময় দুটোই কমে যাবে। তবে আমি সাংসদ হয়ে সুন্দরবনের মানুষের এই সমস্যা সমাধানের জন্য বর্তমান রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের সাথে কথা বলেছি। তাছাড়া চিঠিও দিয়েছি। তবে এখনো পর্যন্ত সেই চিঠির কোনো উওর আমার কাছে আসেনি।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৯ সালে জয়নগর মজিলপুর স্টেশন থেকে রায়দিঘি পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিলোমিটার রেল লাইন সম্প্রসারণের শিলান্যাস হয়েছিল। রায়দিঘিতে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে ২০০৯ সালে ভার্চুয়াল শিলান্যাস করেছিলেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী বর্তমানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথম দিকে সার্ভের কাজ কয়েকমাস হলেও তাঁর পরে আর কিছুই এগোয়নি।
এদিকে রায়দীঘির যে জায়গায় ওই শিলান্যাস হয়েছিল, সেই জায়গায় এখন শিলান্যাসের কোনো অংশ নেই। এমনকি তাঁর আশে পাশের জায়গায় নির্মাণ কাজ চলছে। আর ওই জায়গা এখন দুষ্কৃতীদের ডেরা হয়ে গেছে। জয়নগর মজিলপুর স্টেশন থেকে রায়দীঘি পর্যন্ত তিনটি স্টেশন হওয়ার কথা ছিল। এই রেল পথ চালু হলে মথুরাপুর ১, ২, জয়নগর ২, পাথরপ্রতিমা ও কুলতলি এলাকার কয়েক লক্ষ মানুষ উপকৃত হতেন। সুন্দরবনের মথুরাপুর ২ নং ব্লক একটি নদীতে ঘেরা প্রত্যন্ত এলাকা। মানুষকে কলকাতায় আসতে হলে বাস বা ছোট গাড়িতে প্রায় কুড়ি কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে মথুরাপুর রোড স্টেশনে আসতে হয়। সেখান থেকে দেড় থেকে পৌনে দু’ঘণ্টা ট্রেনে চেপে তবেই শিয়ালদহে পৌঁছতে হয়। সব মিলিয়ে সময় লাগে প্রায় তিন সাড়ে তিন ঘণ্টা। খরচ হয় প্রায় ২০০ টাকা! অথচ, রায়দিঘি থেকে সরাসরি রেললাইন চালু হলে মাত্র দেড় থেকে পৌনে দু’ঘণ্টার মধ্যে অনেক কম খরচে শিয়ালদহে পৌঁছতে পারবে মানুষ।
এছাড়া এই ব্লক গুলি মূলত কৃষিপ্রধান। এলাকায় কোনও হিমঘর এখনও তৈরি হয়নি। বড় কোনও বাজারও সে ভাবে গড়ে ওঠেনি। ফলে এখানকার কৃষিজাত দ্রব্য, আনাজ, মাছ সহজেই ট্রেনপথে শিয়ালদহে পৌঁছে যেত। তাতে আর্থিক উন্নয়ন হত চাষিদের। আরও নানা ভাবে কর্মসংস্থান বাড়তে পারত বলে মনে করেন অনেকেই। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, রায়দিঘি থেকে রেললাইন পাতা হবে আনন্দে ছিলাম।কিন্তু ১৫ বছর কেটে গেলেও কিছুই হলো না। আদৌ কি হবে? রায়দীঘি কুমড়ো পাড়ার বাসিন্দা তথা প্রাক্তন সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন,মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকা কালীন রায়দিঘি থেকে জয়নগর মজিলপুর পর্যন্ত প্রস্তাবিত রেলের কোনও অনুমোদন বা বাজেট ছিল না। ভাঁওতাবাজি করে শিলান্যাস করা হয়েছিল। তাই শিলা ও চুরি হয়ে গেছে আর আগাছায় মুখ ঢেকে গেছে।
এ ব্যাপারে রায়দীঘির বিধায়ক ডাঃ অলক জলদাতা বলেন, কেন্দ্রের সরকার সাধারণ মানুষের সাথে বেইমানি করেছে। আর এই রেলপথ চালু হলে আর্থ সামাজিক পরিবর্তন হত।
জয়নগরের সাংসদ প্রতিমা মন্ডল বলেন, সুন্দরবনের নতুন রেলপথের বিষয়ে একাধিক বার রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের সাথে আমি কথা বলেছি। চিঠিও দেওয়া হয়েছে। অথচ রেল দফতর থেকে এ ব্যাপারে কোনো রকম স্বদিচ্ছা দেখানো হচ্ছে না। আসলে বিজেপি শাসিত কেন্দ্র সরকার সুন্দরবনে উন্নয়ন হোক চায় না। কারণ জয়নগর মজিলপুর থেকে রায়দীঘি পর্যন্ত রেলপথ চালু হলে কয়েকলক্ষ সুন্দরবনের মানুষের উপকার হতো। তাই রেল দফতরের মন্ত্রীর কাছে অনুরোধ দ্রুত এই রেলপথ তৈরির বিষয়ে আলোকপাত করা হোক।