পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: ঝাড়খণ্ড , মহারাষ্ট্র ও পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও এদিন দেশের ১৫টি রাজ্যের ৪৮টি বিধানসভার পাশাপাশি ২টি লোকসভা কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ওয়েনাডের মতো কেন্দ্রও। এদিন উত্তরপ্রদেশের কুন্দরকি, গাজিয়াবাদ, খৈর, ফুলপুর ও কাটহারিতে করহাল, সিসামউ, মীরাপুরে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। মোট ৯ টি কেন্দ্রে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। সেই রাজ্যে ৭টি আসনে জয়ী গেরুয়া শিবির। এদিকে সমাজবাদী পার্টি জয়ী মাত্র ২টি আসনে। কয়েক মাস আগেই লোকসভা ভোটে উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টির থেকে পিছিয়ে গিয়েছিল বিজেপি। এই আবহে উপনির্বাচনের এই লড়াই বিজেপির জন্যে প্রেস্টিজ ফাইট হিসেবে ধরা হচ্ছিল।
বেশিরভাগ আসনে বিজেপি জয়ী হলেও নজরকাড়া সাফল্য পেয়েছে উত্তরপ্রদেশের কুন্দরকি কেন্দ্রে। সেখানে রীতিমতো রেকর্ড ব্রেক করেছে বিজেপি। ৩০ বছরের ইতিহাস ভেঙে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় বিপুল মার্জিনে জয়লাভ করেছে বিজেপির হিন্দু ও কেন্দ্রের অন্যতম হিন্দু প্রার্থী। কারণ ১৯৯৩ সাল থেকে মোরাদাবাদের কুন্দরকি অধরা ছিল বিজেপির।
এই বিধানসভা আসনে একমাত্র হিন্দু প্রার্থী দিয়েছিল বিজেপিই। বাকি ১১জনই মুসলিম। মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় বিজেপি প্রার্থী জিতল কি করে? এই প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক পণ্ডিতরা বলছেন, অন্যান্য রাজ্যের মতো কুন্দরকি কেন্দ্রে হিন্দু-মুসলিম ভোটে মেরুকরণ হয়নি। বরং তুর্কি ও শেখ মেরুকরণে পর্যদুস্ত হয়েছে বিরোধীরা। যার লাভ উঠিয়েছে বিজেপি। কুন্দারকিতে বিজেপি প্রার্থী রামবীর সিং ১ লক্ষেরও বেশি ভোটে জয়ী হয়েছেন। এই জয়টি ঐতিহাসিক বলে মনে করছেন অনেকে।
প্রায় ৬৫ শতাংশ মুসলিমের বসবাস এলাকায় বিজেপির জেতার কৌশল কি ছিল?
বিরোধীদের অভিযোগ, কুছ তো গড়বার হ্যায়। তবে স্থানীয় খবর, হাজি মুহাম্মদ রিজওয়ানের চেয়ে মুসলিমদের মধ্যে বেশি জনপ্রিয় ছিলেন বিজেপির জয়ী প্রার্থীরামবীর সিং। পরপর টানা তিনবার হেরেও হাল ছাড়েননি তিনি। রামবীর বুঝে গিয়েছিলেন, মুসলিম ভোট ছাড়া ভোট বৈতরণী পার সম্ভব না। সেজন্য গত দুই দশক ধরে বিপদে-আপদে মুসলিম ভাই-ব্রাদারদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি। মুসলিমরা যে কথা দিতে জানে তার ফলও পেয়েছে হাতেনাতে।
একদিকে দেশজুড়ে হিন্দু ভোটকে এক কাট্টা করতে মরিয়া ছিল বিজেপি। দিচ্ছিল ‘বাটেঙ্গে তো কাটেঙ্গে’ , এক হ্যায় তো সেফ হ্যায় , ভোট জিহাদ’-এর মতো স্লোগান। অন্যদিকে কুন্দরকিতে বিজেপি প্রার্থী হিন্দু ভোট ভোটকে এককাট্টা করার চেষ্টা করেননি। বরং রামবীর সিংকে দেখা গিয়েছে নমাজি ফেজ টুপি পরিধান করে মুসলিম অনুষ্ঠানগুলিতে শরীক হতে।
আরবি স্কার্ফ পড়ে ঘুরে বেড়াতে। সাধারণত বিজেপি নেতারা নমাজি ফেজ টুপি পরেন না। এমনকি বেশ কয়েকবছর আগে মুসলিমদের অনুষ্ঠানে শামিল হতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে নামাজি টুপি পড়াতে গেলে উনি আপত্তিজনকভাবে নিজের মাথা সরিয়ে নেন। উল্টে বিরোধীরা পরলে তা পরিধান করলে ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির অভিযোগ করেন। ভোট জিহাদের অভিযোগ তোলেন। তবে রামবীর তা করেননি। উনি বুঝে গিয়েছিলেন ভোটে জিততে গেলে মুসলিম মন পাওয়া খুব জরুরি। তাই দলের দেখান পথ না নিজের অন্তরের দেখানো পথ অনুসরণ করেন তিনি।
যাকে রাজনৈতিক সিগমা বলেও আখ্যায়িত করছেন অনেকে। উনি শেখ সম্প্রসায়ের পাশে দাঁড়িয়েছেন। রামবীর বাস্তব পরিস্থিতি বুঝে দলের লাইনের উল্টো পথে হেঁটেছেন। মুসলিমদের বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠানেও নিয়মিত যোগ দিয়েছেন রামবীর। শেখ সম্প্রদায়ের মুসলিমরা তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন। অন্যদিকে তুর্কি সম্প্রদায়ের হাজি রিজওয়ান বিরোধী পক্ষের হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। ফলে তুর্কি বনাম শেখ মুসলিম হয়ে গিয়েছে এই কেন্দ্রে। তিনবার বিধায়ক ছিলেন হাজি রিজওয়ান।