যাদবপুর কান্ডে ছাত্র সংগঠনগুলিকে মামলায় অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ হাইকোর্টের

- আপডেট : ২১ অগাস্ট ২০২৩, সোমবার
- / 9
পারিজাত মোল্লা: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় এবার সব ছাত্র সংগঠনকে মামলায় অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ জারি করা হলো। সোমবার এই নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিলেন তৃণমূল মুখপাত্র সুদীপ রাহা।যাদবপুরে ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় সেখানকার ছাত্র সংগঠন ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জানতে চাইল প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রমৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে হওয়া জনস্বার্থ মামলায় সেখানকার ছাত্র সংগঠনের বক্তব্য জানতে চায় কলকাতা হাইকোর্ট। ঘটনার দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন পুলিশ ঢুকতে পারেনি? এই প্রশ্ন করেছে আদালত। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় ও হস্টেল সংক্রান্ত সমস্ত উত্তর দেবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। দুই সপ্তাহ পর ফের এই মামলার শুনানি হবে বলে জানা গেছে। সেই দিনই (২৮ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জবাব দিতে হবে। ছাত্র সংগঠনকে এই মামলায় পার্টি করার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি হিরন্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ।
সোমবারের শুনানিতে আবেদনকারী তৃণমূল ছাত্র নেতা সুদীপ রাহার আইনজীবী বলেন, ‘যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম বিশ্বব্যাপী। ফলত অনেক স্বপ্ন নিয়ে গ্রাম গ্রামঘাঞ্জ থেকে অনেক মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা এখানে পড়তে আসেন। কিন্তু সেখানে এসে তাঁরা ব়্যাগিং-এর স্বীকার হচ্ছেন’। সওয়াল-জবাব পর্বে উঠে এসেছে যে, ‘পুলিশের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাতে ওই ছাত্রকে কেপিসি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। তখন পুলিশকে ভিতরে প্রবেশ করতে বাধা দেওয়া হয় । ব়্যাগিং-এর অভিযোগ উঠছে অথচ অ্যান্টি ব়্যাগিং টিম বর্তমান যাদবপুরে। চূড়ান্ত বেনিয়ম হচ্ছে। সিসিটিভি ক্যামেরা না লাগানোর দাবিতে ভিসি ঘেরাও চলেছে। একজন ভিসি পদত্যাগ করেন’।
সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী অর্ডিন্যান্স আনা হয়েছে কি না? তা জানা দরকার। বিশ্ববিদ্যালয় কী কী নিয়ম ফলো করে? তাদের হস্টেলের ব্যাপারে কী নোটিশ দেওয়া হয়েছে? সব দেখতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বক্তব্য শুনতে হবে ‘। রাজ্যের এজি তখন বলেন, ‘ব়্যাগিং ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশোনার ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়। এখন সেটা সব ধরনের পড়াশোনাতেই দেখা যাচ্ছে। আর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ব়্যাগিং-এর অভিযোগ উঠলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা গ্রহণযোগ্য নয়। হাইকোর্টে আগেই ব়্যাগিং নিয়ে গাইডলাইন আছে। সুপ্রিম কোর্টের গাইডলাইনও আছে’।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী বলেন, “রিপোর্ট করা হয়েছে। একটা ভয় কাজ করছে ছাত্রদের মধ্যে। ওই ব্লকের ছাত্রদের সাময়িক ভাবে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে। রাজনৈতিক দলের নেতারা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করছেন। সিসিটিভি বসাতে গেলে অনশন করছেন ছাত্ররা। বেশিরভাগই বহিরাগত। জুনিয়র স্টুডেন্টদের আমরা অন্যত্র বদলি করেছি।”এই শুনে প্রধান বিচারপতি বলেন, “এর সঙ্গে ছাত্রদের ভবিষ্যত্ জড়িয়ে আছে। বুঝিয়ে কী এই অবস্থা থেকে বেরনো সম্ভব নয়? ওরা কেউ ক্রিমিনাল নয়। আপনারা শিক্ষক। লোকাল অভিভাবকও। সারা পৃথিবীতে যাদবপুরে প্রাক্তনীরা ছড়িয়ে আছেন। হস্টেলের ব্যাপারটা হস্টেল সুপার চাইলে সামলাতেই পারতেন।”
এই মামলার নথি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তপক্ষকে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। প্রত্যেককে কপি দিয়ে আগামী ২৮ অগস্ট ফের এই মামলার পরবর্তী শুনানি করা হবে। গত ৯ অগাস্টের অভিশপ্ত রাতে পুলিশ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছলেও তাঁদেরকে ক্যাম্পাসে ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ইতিমধ্যে এবিষয়ে পুলিশের তরফে পৃথক একটি মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্তও শুরু হয়েছে। এবার এই বিষয়েই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কৈফিয়ত চাইল কলকাতা হাইকোর্ট।