দামেস্ক: সিরিয়ার গোলান মালভূমি দখল করে নতুন বসতি তৈরির পরিকল্পনা করছে যায়নবাদি ইসরাইল। গোলানে ইসরাইলি জনসংখ্যা দ্বিগুণ করতে এক কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার খরচ করবে তেল আবিব। রবিবার এক বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেন, বাশার আল-আসাদের পতনের পর সিরিয়া সীমান্তে একটি ‘নতুন ফ্রন্ট’ তৈরি হয়েছে। নেতানিয়াহুর বক্তব্য, ‘গোলান মালভূমিকে শক্তিশালী করা হলে ইসরাইল আরও শক্তিশালী হবে। এই এলাকা আজীবন ইসরাইলের অধিকারেই থাকবে। এখানে বসবাসকারীদের সংখ্যা আরো বাড়ানো হবে।’
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এক প্রতিবেদনে বলেছে, ১৯৬৭ সালে আরব-ইসরাইল যুদ্ধের মধ্য দিয়ে সিরিয়ার গোলান মালভূমির দখল নেয় ইসরাইল। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এটি অবৈধ ভাবে দখল করা ভূমি হিসেবে বিবেচিত। ১৯৭৪ সালে একটি চুক্তির মাধ্যমে গোলানে একটি বাফার জোন প্রতিষ্ঠা করে সিরিয়া ও ইসরাইল। আসাদের পতনের পর সেই বাফার জোনও দখল করে নেয় ইসরাইল। বিবিসি জানায়, বর্তমানে গোলানে ৩০টি ইসরাইলি বসতি রয়েছে। সেখানে বসবাস করছেন প্রায় ২০ হাজার ইসরাইলি। এই অঞ্চলে ২০ হাজার সিরীয় জনগণও বসবাস করে। যারা ইসরায়েলের অবৈধ অধিগ্রহণের পরও পালিয়ে যাননি।
Read More: কারো হাতে অস্ত্র থাকবে না: জোলানি
প্রসঙ্গত, বাশার আল-আসাদের পতনের পরপরই সিরিয়া সীমান্তের বাফার জোন দখল করেছে ইসরাইল। তারা এখন পুরো সিরিয়া নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে হামলা চালাচ্ছে। হোম শহরের এয়ারপোর্টে হামলা হয়েছে রবিবার। ৬১টি মিসাইল হামলা হয়েছে সামরিক ঘাঁটি, সড়ক, বিদ্যুৎ লাইনে। এবার হারমন পর্বতের সিরিয়ার অংশের দখল নিয়েছে ইসরাইলের বাহিনী আইডিএফ। ২ হাজার ৮১৪ মিটার উচ্চতাসম্পন্ন হারমন পর্বত কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এটি ওই অঞ্চলের সবচেয়ে উঁচু স্থান। পর্বতের চূড়া থেকে সিরিয়ার রাজধানীর দূরত্ব মাত্র ৩৫ কিলোমিটার। এ পর্বতকে এ অঞ্চলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক দুর্গ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এর অর্থ হলো, এ পর্বতের অবস্থান দামেস্ককে ইসরাইলের কামানের গোলার সীমার মধ্যে এনে দেয়।
নেতানিয়াহুর নতুন বসতি স্থাপনের পরিকল্পনার সমালোচনা করেছেন ইসরাইলের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্ত। গোলানে ইসরাইলের বসতি সম্প্রসারণের ‘কোনো কারণ দেখতে পাচ্ছি না’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। ওলমার্ত বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী (নেতানিয়াহু) বললেন সিরিয়ার সঙ্গে সংঘর্ষ বাড়ানোর ব্যাপারে তিনি আগ্রহী না। বললেন সিরিয়ার দখল নেওয়া বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানোর প্রয়োজন হবে না। তাহলে আমরা এর ঠিক বিপরীত পথে কেন হাঁটছি?’
এদিকে ইসরাইলের নতুন বসতি স্থাপনের এই পরিকল্পনার তীব্র সমালোচনা করেছে সৌদি আরব, কাতার, ইরাক এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত। সৌদি আরবের বিদেশ মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, নেতানিয়াহুর এই পদক্ষেপ সিরিয়ার নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় বাধা সৃষ্টি করবে। সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের ব্যাপারে ইসরাইলের এসব পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নিন্দা জানানোরও আহ্বান জানিয়েছে সৌদি। কাতারের বিদেশ মন্ত্রণালয় বলেছে, নেতানিয়াহুর পরিকল্পনা সিরিয়ার ভৌগোলিক অখণ্ডতার ওপর আগ্রাসন এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের নতুন উপাখ্যান। ইসরাইলের এই পদক্ষেপে আঞ্চলিক উত্তেজনা বেড়ে যাবে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত।